ছাত্র খুনের ঘটনার তদন্তে ফাঁকফোঁকরের কথা উল্লেখ করে জেলা পুলিশকে ভর্ৎসনা করলেন বিচারক। জেলার পুলিশ সুপারও বিচারকের তোপ থেকে রেহাই পাননি। পুলিশের তদন্তকে ‘ক্যালাসনেস’ বলেও উল্লেখ করেন বিচারক। সরকার পক্ষের আইনজীবী অশোক মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ছাত্র খুনের ঘটনায় বিচারক চারজনকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। ১৫ এপ্রিল সাজা ঘোষণা করা হবে। তবে এই রায় দিতে গিয়ে বিচারক তদন্তের গাফিলতির উল্লেখ করে পুলিশকে ভর্ৎসনা করেছেন।’’ সম্প্রতি অন্য একটি ছাত্র খুনের ঘটনার রায় দিতে গিয়েও বিচারকের ভর্ৎসনার মুখে প়ড়েন একাধিক পুলিশ আধিকারিক।
২০১৪ সালে ৩ মার্চ সন্ধ্যায় কৃষ্ণনগরের কলেজিয়েট স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্র অতনু মণ্ডল নিখোঁজ হয়। পরদিন বিকেলে শহর সংলগ্ন শম্ভুনগরে জলঙ্গি জল থেকে তার দেহ উদ্ধার হয়। ওই রাতেই অতনুর বাবা অনিল মণ্ডল ছেলের গৃহশিক্ষক শীর্ষেন্দু দাস, সহপাঠী তিন্নি পাত্র ও বন্ধু শুভ দেবনাথের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ শীর্ষেন্দু ও তিন্নিকে গ্রেফতার করে। শুভ দেবনাথ বেপাত্তা হয়ে যায়। পুলিশ চার্জশিট ধৃতদের নাম বাদ দিয়ে জানায়, ওই খুনের সঙ্গে তাদের কোনও যোগ নেই। ফলে তারা বেকসুর খালাস পায়।
এরই মধ্যে কোতোয়ালি থানার পুলিশের তদন্তের উপর অনাস্থা প্রকাশ করে হাইকোর্টের দারস্থ হন অনিলবাবু। হাইকোর্ট জেলার তৎকালীন পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষকে পুনরায় ওই ঘটনার তদন্ত করার নির্দেশ দেয়। পুলিশ সুপার ‘সিট’ গঠন করেন। নেতৃত্বে থাকেন তিনি। ঘটনার আটমাস পর পুলিশ শুভ দেবনাথকে গ্রেফতার করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ সূর্যপ্রকাশ চট্টোপাধ্যায়, কমল হালদার ও বিশ্বজিৎ দাসের নাম জানতে পারে। তিন জনকেই গ্রেফতার করে পুলিশ। মঙ্গলবার কৃষ্ণনগর জেলা আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা (তৃতীয়) বিচারক পার্থসারথী মুখোপাধ্যায় চারজনকেই খুন ও প্রমাণ লোপাটের জন্য অভিযুক্ত করেন। সরকারি আইনজীবী অশোকবাবু বলেন, ‘‘অপহরণ করে ওই ছাত্রের বাবার কাছ থেকে মোটা টাকা মুক্তিপণ আদায় করতে চেয়েছিল এই চারজন। পরে মদের ভিতরে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাইয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করে।’’
তিনি জানান, ঘটনার দিন বন্ধুর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যাওরা জন্য বাড়ি ছাড়ে অতনু। ওই রাতেই তারা অতনুকে খুন করে দেহ চর শম্ভুনগর এলাকায় ইট বেঁধে নদীর জলে ফেলে দিয়ে আসে। রাতে অতনুর বাড়ির দরজায় কম্পিউটারে টাইপ করা একটি চিরকুট ফেলে আসে শুভ দেবনাথ। তাতে লেখা ছিল, ছেলেকে ফিরে পেতে হলে ১২ লক্ষ টাকা দিতে হবে।
এই মামলার রায় দিতে গিয়ে বিচারক তদন্তে একাধিক গাফিলতির কথা উল্লেখ করেন। অনিলবাবুর আইনজীবী সামসুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ‘‘আসামীদের দেখানো মতো সিজার করা জিনিসপত্রে কোনও লেবেল ছিল না। ফলে সেগুলিকে প্রামান্য হিসেবে আদালত গন্য করতে পারেনি। তখনই বিচারক কোতোয়ালির আইসি রাজকুমার মালাকারের তদন্ত প্রসঙ্গে ‘ক্যালাসনেস’ শব্দটি ব্যবহার করেন।’’ যদিও এই প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তৎকালীন পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘রায়ের কপি হাতে না পেলে কোনও মন্তব্য করব না।’’