এলেম নিজের দেশে

১৬ বছর বয়স থেকে দিল্লিতে, কোনওমতে ট্রেনে

বাড়ির উঠোনে হাসি ফোটাতে বাড়তি রুজির হাতছানিতে ওঁদের ঠিকানা ভিন প্রদেশে। কিন্তু লকডাউনের অনুশাসনে রুজি তো গেছেই ঘরে ফেরাও ঝুলে ছিল সুতোর উপরে। দুর্বিষহ সেই প্রবাস কিংবা অনেক লড়াইয়ের পরে ফিরে আসার সেই গল্প বলছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা, শুনল আনন্দবাজারবাড়ির উঠোনে হাসি ফোটাতে বাড়তি রুজির হাতছানিতে ওঁদের ঠিকানা ভিন প্রদেশে। কিন্তু লকডাউনের অনুশাসনে রুজি তো গেছেই ঘরে ফেরাও ঝুলে ছিল সুতোর উপরে। দুর্বিষহ সেই প্রবাস কিংবা অনেক লড়াইয়ের পরে ফিরে আসার সেই গল্প বলছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা, শুনল আনন্দবাজার

Advertisement

নবাবউদ্দিন শেখ

চাঁদপুর শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২০ ০৩:৩৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

বাড়িতে ও বন্ধুরা আমাকে নবাব বলে ডাকে। জানি না কেন আমার নাম নবাব। হয়ত একটু ফর্সা বলে মা আমার নাম নবাব দিয়েছিলেন। নামটাই আমার নবাব। বাবা দিনমজুর মা বিড়ি শ্রমিক তাদের ছেলে নবাব। আমরা তিন ভাই ও দুই বোন। তাদের কারও নাম এ ধরনের নেই ।

Advertisement

পড়া না পড়লে শিক্ষক বলত নবাবকে তো কিছু বলা যাবে না! এজন্য আমি পড়াশোনা করতে পারিনি। সপ্তম শ্রেণী অবধি পড়াশোনা করেছি। তারপার আর স্কুলে যাইনি। তখন আমার বয়স ১৪ বছর। পড়াশোনা ছেড়ে বন্ধুদের নিয়ে পাড়ার গাছের পেয়ারা, ডাব আমরা না বলেই তুলে নিয়ে আমবাগানে বসে খেতাম। বাবার পয়সা চুরি করে সিনেমা দেখতাম।

১৬ বছর বয়সে আমি আর আমার দুই বন্ধু মিলে বাড়ি ছেড়ে চলে যায় দিল্লি। সেখানে গিয়ে কোথায় যাব কি করব বুঝতে পারছি না। এদিক ওদিক ঘুরছি কোথাও কোনও আশ্রয় পাচ্ছি না। কেউ কাজে রাখতে চাই না। কোনটা কোন যায়গা তার নামও জানিনা। আমাদের কাছে যে টাকা পয়সা ছিল তা শেষ করে ফেলেছি। কি করব তার কোনও কুল কিনারা করতে পারছি না। এমন সময় এক আখের রস বিক্রেতার সঙ্গে আলাপ হয়। সে বলে আখের রসের মেশিন ঘোরানোর কাজ করলে সে দিতে পারবে দৈনিক ২৫০ টাকা পাবে। সে কাজ করলাম।

Advertisement

এক প্লাইউড ফ্যাক্টরিতে কাজ পেলাম দৈনিক মজুরিতে ৪৫০ টাকা, ওভারটাইম কাজ করলে তার মজুরি আলাদা। দিন থেকে রাত আটটা অবধি কাজ করতাম। প্রতিদিন মজুরি পেতাম এক হাজার থেকে বারশো টাকা। আমার আয়ের একটা অংশ মাকে পাঠিয়ে দিতাম। তিন বছর বাড়ি যাইনি। হঠাৎ করে সরকার লকডাউন ঘোষণা করায় আমরা পড়লাম বড় বিপদে। সরকার এমন সময় লকডাউন ঘোষনা করল যে আমরা বাড়ি আসতে পারলাম না। বাড়ি আসা তো দূরে থাক, ঘরের বাইরে যাওয়া সম্ভব ছিল না। পুলিশ এতটা সক্রিয় ছিল আনাজ কিনতে ছাড় দিলেও পুলিশ মারধোর করেছে। পুলিশের মার খেয়ে বাজরা করতে হয়েছে।

লকডাউন চলছে তার সঙ্গে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। গাড়িঘোড়া বন্ধ কোথাও যাওয়া সম্ভব নয়। কাজ নেই নিজের কাছে যা টাকা ছিল ত প্রায় শেষ হতে চলেছে। এর মধ্যে জানতে পারলাম শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন ছাড়বে। আমরা ঠিক করি সেই ট্রেনে বাড়ি আসব। আমাদের ফ্যাক্টরির মালিককে জানাতে তিনি বলেন, ‘‘ঠিক আছে, বাড়ি যাও। ফ্যাক্টরিতে কাজ শুরু হলে ডেকে নেব।’’ আমরা ২৪ শে জুন ট্রেনে বাড়ি আসি। ট্রেনে আসতে গিয়ে খুব কষ্ট হয়েছে। খাবার কিছু ছিল না। জলেরও অভাব ছিল। এখন বাড়িতে নবাবি করছি। মালিকের ফোনের অপেক্ষায় আছি।

উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল সম্পর্কিত যাবতীয় আপডেট পেতে রেজিস্টার করুন এখানে

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement