এলেম নিজের দেশে
Coronavirus Lockdown

গ্রামের ঘুরপথ ধরে সাইকেলে এলাম গয়া থেকে

বাড়ির উঠোনে হাসি ফোটাতে বাড়তি রুজির হাতছানিতে ওঁদের ঠিকানা ভিন প্রদেশে। কিন্তু লকডাউনের অনুশাসনে রুজি তো গেছেই ঘরে ফেরাও ঝুলে ছিল সুতোর উপরে। দুর্বিষহ সেই প্রবাস কিংবা অনেক লড়াইয়ের পরে ফিরে আসার সেই গল্প বলছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা, শুনল আনন্দবাজারউৎসবের  সময় যখন বাড়ি আসতাম তখন বাবা মা বোন ছাড়াও গ্রামটা যে আমার তা আমি অনুভব করতে পারতাম।

Advertisement

লতিবুর শেখ

কাশেমনগর শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২০ ০২:৪৯
Share:

ফাইল চিত্র।

বিহারের গয়ায় আমি রাজমিস্ত্রির কাজ করতাম চার বছর ধরে। সেখানে আমি ছাড়াও আরও আট জন ছিলেন। তাঁরা আমাদের আসেপাশের গ্রামের। এক সঙ্গে গয়ায় একটা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতাম। প্রতিদিন আমরা যে যার কাজে যেতাম সন্ধ্যার সময় আবার এক সঙ্গে হয়ে বাজার করে বাসায় ফিরে রান্না করে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়তাম। কোথায় কী হচ্ছে তা আমরা জানতে পারতাম না। কাজে গিয়ে কোনও আলোচনার মাধ্যমে কখনো কোন বিষয় জানতে পারতাম। বাড়িতে মা বাবা আর ছোট বোন আছে। তাদের খরচ আমি গয়া থেকে কাজের পর মাসে একবার ব্যাঙ্কের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিই। বাইরে থাকলে মানুষ বুঝতে পারে বাড়ির ও গ্রামের মানুষের কী সম্পর্ক।

Advertisement

উৎসবের সময় যখন বাড়ি আসতাম তখন বাবা মা বোন ছাড়াও গ্রামটা যে আমার তা আমি অনুভব করতে পারতাম। এভাবেই আমাদের জীবন বেশ সুখে কাটছিল। একদিন শুনলাম একটা কি অসুখ এসেছে,যা খুব ভয়ানক। বিশ্বাস করতে পারছি না, আবার কাউকে বলতেও পারছি না। তার কয়েকদিন পর জানতে পারলাম অসুখটার নাম করোনা। এই রোগের কারনে ১৫ দিন সারা ভারতবর্ষ বন্ধ থাকবে লকডাউন। লকডাউন মানে যে এমন বন্ধ হবে তা বুঝতে পারেনি।

আমাদের কাজও বন্ধ। বাইরে বের হলে পুলিশ ধরে নিয়ে চলে যাচ্ছে। আমাদের ঘরে চাল আছে আনাজ নেই, কারণ আনাজ প্রতিদিন নিয়ে এসে রান্না করি। যে আলু ছিল দশ টাকা তার দাম কুড়ি টাকা, বেগুন, ডিম সবার দাম বেড়ে গিয়েছে। কী আর করা যাবে কিছুটা নিয়ে এলাম। আর ভাবলাম ১৫ দিন কোনও মতে কাটিয়ে নেব। কিন্তু ১৫ দিন শেষ না হতেই দ্বিতীয় লকডাউন ঘোষণা হতেই বুঝলাম আর এখানে থাকা যাবে না। কারণ লকডাউন কখন শেষ হবে তার ঠিক নেই। তাই আমরা বাড়ি চলে আসব।

Advertisement

বাস, ট্রেনে নয় আমাদের সাইকেলের প্যাডেলে ভর দিয়ে বাড়ি যাব। দ্বিতীয় লকডাউন শুরু হওয়ার চতুর্থদিনে আমরা সাইকেল নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে বেরিয়ে পড়লাম। সঙ্গে খাবার নিলাম বিহারের ছাতু, লবণ আর চিনি। রাস্তায় গাড়ি নেই। রাস্তার ধারে হোটেল, ধাবা সব বন্ধ। পানের দোকান, চায়ের দোকানও খোলা নেই। সাইকেলের প্যাডেল ঘুরিয়ে এগিয়ে আসছি বাড়ির দিকে এর জন্য অনেকটা ভাল লাগছিল। পুলিশের ভয়ে গ্রামের রাস্তা দিয়ে চলে আসি। বাধা পাই বাংলায় এসে। বাংলার পুলিশ বর্ডারে আটকে দিল। সারাদিন বসে থেকে রাতে হাসপতাল নিয়ে যায় সেখানে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে আমাদের ছেড়ে দেয়। তারপর বাড়ি যাই। বাড়ি এসে ১৫ দিন বাড়িতে থাকার পর বাইরে বের হয়েছি। এখানে কাজের কথা বলেছি। দেখি যদি কাজ পাই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement