প্রতীকী চিত্র
জেলায় প্রথম করোনা-আক্রান্তের মৃত্যু। অথচ, চাকদহের সেই ব্যক্তি কী ভাবে সংক্রমিত হলেন সেটাই বুঝে উঠতে পারছেন না জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা। সেখানেই প্রবল ভাবে সামনে চলে আসছে গোষ্ঠী-সংক্রমণের তত্ত্ব। আর সেটাই জেলা স্বাস্থ্যকর্তাদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সেই সঙ্গে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে কোয়রান্টিন সেন্টার থেকে কিছু পরিযায়ী শ্রমিকের পালিয়ে বাড়ি চলে যাওয়ার ঘটনা স্বাস্থ্যকর্তাদের অস্বস্তি আরও বাড়িয়েছে। কারণ, তাঁদের থেকে যে কোনও মুহূর্তে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
নদিয়া জেলায় বৃহস্পতিবার সকাল সাতটা পর্যন্ত ২১৯ জন করোনা আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। এঁদের মধ্যে ৩২ জনের চিকিৎসা জেলার বাইরে হয়েছে। জেলায় চিকিৎসা হয়েছে ১৮৭ জনের। এঁদের অধিকাংশই পরিযায়ী শ্রমিক। বিশেষ করে মহারাষ্ট্র থেকে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যাই বেশি। প্রতিদিন সেই সংখ্যা বাড়ছে। স্বাস্থ্যকর্তারা মনে করছেন, এই পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে এমন ব্যক্তি থাকতেই পারেন যাঁরা করোনা- আক্রান্ত, কিন্তু উপসর্গহীন। এঁদের সংস্পর্শে এসে অন্যদের সংক্রমিত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা।
চাকদহের মৃতের ক্ষেত্রে আক্রান্ত হওয়ার কোনও সূত্র এখনও পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না বলেই গোষ্ঠী সংক্রমণের তত্ত্ব প্রবল হয়ে উঠেছে। ওই ব্যক্তি মাঝে মধ্যে বাজারে যাওয়া ছাড়া ঘর থেকে বের হতেন না বলে দাবি করেছে তাঁর পরিবার। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অপরেশ বন্দোপাধ্যায়ও বলেন, “মৃত ব্যক্তি কী ভাবে সংক্রমিত হলেন সেটা এখনও পর্যন্ত আমাদের কাছেও স্পষ্ট নয়।” জেলার আরেক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, “এই মৃত্যু গোষ্ঠী সংক্রমণের আশঙ্কাকেই স্পষ্ট করে দিচ্ছে। যা অত্যন্ত উদ্বেগের।” স্বাস্থ্যকর্তাদের অনেকেই তাই চাইছেন, স্কুলের কোয়রান্টিন কেন্দ্রগুলিতে রাতে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা রাখতে। যাতে কোয়রান্টিনে থাকাকালীন কেউ সেখান থেকে বেরিয়ে বাড়ি যেতে না পারে। আপাতত গোষ্ঠী সংক্রমণ আটকাতে এটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে মনে করছেন তাঁরা।
জেলার বাইরে অন্য কোনও শারীরিক সমস্যার চিকিৎসা করিয়ে ফেরা ব্যক্তিদের নিয়েও উদ্বেগে আছেন কর্তারা। কারণ, ইতিমধ্যে জেলায় বেশ কয়েক জন আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে যাঁরা কলকাতায় কিডনি, হৃদরোগের মতো সমস্যার চিকিৎসা করাতে গিয়ে করোনা-আক্রান্ত হয়েছেন। খুব প্রয়োজন না-হলে জেলার হাসপাতাল থেকে রোগীদের এই সময়ে যেন কলকাতার হাসপাতালে রেফার করা না হয়, সে ব্যাপারেও জোর দেওয়া হচ্ছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “জেলা প্রশাসনের তরফে এই বিষয়টিতে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।”