ছবি: সংগৃহীত।
করোনা সংক্রমণ কখনও বাড়ছে, কখনও কমছে। কিন্তু বিপদ বাড়াচ্ছে জনপ্রতিনিধি বা তাঁদের আত্মীয়দের সংক্রমিত হওয়ার ঘটনা। অন্য দিকে, তেহট্ট ১ ব্লকে পরপর চার দিন কোনও সংক্রমণের খবর না থাকায় প্রশাসন অনেকটাই স্বস্তি পেয়েছে।
যেমন হাঁসখালি ব্লকের একটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান এবং তাঁর স্ত্রীর করোনা রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে। সংক্রমিত হয়েছেন রানাঘাট ২ পঞ্চায়েত সমিতির এক কর্মাধক্ষ্যও। তাঁর বাড়ি ধানতলা থানার কেশাইপুর।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, দিন কয়েক আগে ওই হাঁসখালির ওই পঞ্চায়েত প্রধানের জ্বর আসে। পরে তা সেরে গেলেও তাঁর শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল। তাঁর স্ত্রীরও মাঝে কিছু সময়ের জন্য হালকা জ্বর এসেছিল। পরে তাঁরা লালারসের নমুনা পরীক্ষা করান। শুক্রবার রাতে দুজনেরই পজ়িটিভ রিপোর্ট আসে। উপসর্গ না থাকায় তাঁদের বাড়িতেই রাখা হয়েছে। তাঁদের বাড়ির এলাকা ঘিরে দেওয়া হয়েছে। ওই প্রধান বলেন, “শুক্রবার রাতেই আমার এবং স্ত্রীর রিপোর্ট জানতে পারি। এই কয়েক দিনের মধ্যে আমাদের সংস্পর্শে কারা এসেছিলেন তার তালিকা প্রশাসনকে দিচ্ছি।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার সকাল পর্যন্ত হাঁসখালি ব্লকে নতুন করে আট জন সংক্রমিত হয়েছেন। এই নিয়ে ব্লকে সংক্রমিতের সংখ্যা ৬৮। জেলায় জনপ্রতিনিধিদের সংক্রমিত হওয়ার ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। এর আগে রানাঘাট ১ ব্লকের এক পঞ্চায়েত সমিতির নেতা সংক্রমিত হন। রানাঘাট ২ ব্লকেও পঞ্চায়েত স্তরের একাধিক জনপ্রতিনিধি আক্রান্ত হয়েছেন। দিন কয়েক আগে কৃষ্ণনগর সদর মহকুমার এক বিধায়কও আক্রান্ত হয়েছিলেন।
নদিয়ায় করোনা ২২৫৯ (মোট আক্রান্ত) জেলায় চিকিৎসা ৮৭৬ চিকিৎসাধীন ৯৭৪ সুস্থ ৭৩৩ মৃত ২৮ নতুন রোগী ৭৮ চাকদহ ব্লক- ৯, চাকদহ পুরসভা- ৩, চাপড়া ব্লক- ৯, হাসখালি ব্লক- ৮, হরিণঘাটা, ব্লক- ৯, কালীগঞ্জ ব্লক- ৩, কল্যানী পুরসভা- ৪, করিমপুর ১ ব্লক- ৫, কৃষ্ণনগর, পুরসভা- ২, কৃষ্ণনগর ১ ব্লক- ২, কৃষ্ণনগর ২ ব্লক- ১, নাকাশিপাড়া ব্লক- ৫, রানাঘাট পুরসভা- ৫, রানাঘাট ১ ব্লক- ৫, রানাঘাট ২ ব্লক- ৬, শান্তিপুর পুরসভা-১ নজরে পুরসভা (মোট আক্রান্ত) চাকদহ ২৪৩ হরিণঘাটা ৫৯ কৃষ্ণনগর ৮৪ কল্যাণী ১৩৮ রানাঘাট ৯৯ নবদ্বীপ ৬৭ শান্তিপুর ৩৪ শনিবার জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে
রানাঘাট ২ পঞ্চায়েত সমিতির যে কর্মাধক্ষ্য সংক্রমিত হয়েছেন, তাঁরও রিপোর্ট এসেছে শুক্রবার। গত সোমবার তিনি ও তাঁর পরিবারের লোকেরা আড়ংঘাটা ব্লক হাসপাতালে লালারস পরীক্ষা করিয়েছিলেন। তবে তাঁর স্বামী এবং ছেলের নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছে। তিনি এখন হোম আইসোলেশনে রয়েছেন। রানাঘাট ২ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সুদীপ রায় বলেন, ‘‘উনি এমনিতে সুস্থ আছেন। শারীরিক সমস্যা নেই।”
ওই কর্মাধ্যক্ষের স্বামী রঘুনাথপুর হিজুলি ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান। বাড়িতেই রয়েছে তাঁর অফিস। কয়েক দিন আগে তাঁর এক প্রতিবেশী-সহ তিন জন সংক্রমিত হন। ওই প্রতিবেশী প্রধানের বাড়িতে এবং তাঁর অফিসে নিয়মিত আসা-যাওয়া করতেন। তিনি আক্রান্ত হওয়ার পরে প্রধানের পরিবারের সদস্য ছাড়াও ওই যুবকের সংস্পর্শে আসা বেশ কয়েক জনের লালারস পরীক্ষা করানো হয়েছিল। এ বার কর্মাধ্যক্ষের রিপোর্ট পজ়িটিভ আসায় তাঁদের পরিবারের ছ’জনের লালারস পরীক্ষা করা হয়েছে। বাড়িতে জীবাণুনাশক ছড়ানো হয়েছে। রানাঘাট ২-এর বিডিও খোকন বর্মন জানান, ব্লক অফিসও স্যানেটাইজ় করা হয়েছে। যথারীতি কাজ চলছে।
তবে করোনার এই বাড়বাড়ন্তের মধ্যে তেহট্ট ১ ব্লকে সংক্রমণ স্তিমিত হওয়া নিঃসন্দেহে সুখবর। যে ব্লক দিয়ে নদিয়ায় করোনা সংক্রমণ শুরু হয়েছিল এবং দীর্ঘদিন সংক্রমণের নিরিখে জেলায় সবচেয়ে উপদ্রুত ছিল যে ব্লক, সেখানে পরপর চার দিন কোনও সংক্রমণ ধরা পড়েনি। তবে স্বাস্থ্য দফতরের মতে, এখনই উল্লসিত হওয়ার কিছু নেই। কিছু দিন আগেই বেতাইয়ের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে এক সঙ্গে পাঁচ জন কর্মীর সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। গত ১৪ অগস্ট এক দিনে ৩০ জনের করোনা ধরা পড়ে, যার মধ্যে বেতাইয়ের এক ব্যবসায়ীর পরিবারের ১১ জন এবং তাঁদের সংস্পর্শে আসা লোকজন ছিলেন। ফলে, আরও কিছু দিন না গেলে বলা সম্ভব নয় এই ব্লকে সংক্রমণ আদৌ নিয়ন্ত্রণে এসেছে কি না।
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)