coronavirus

দূরত্ব সুদূরই, গায়ে গা ঘেঁষে পথে শহর

রাস্তায় এই ভিড়ের কথা অস্বীকার করেননি জঙ্গিপুরের এসডিপিও প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন 

শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২০ ০২:১৮
Share:

লকডাউনের দিনেও বেলা সাড়ে এগারোটার খাগড়া। ছবি: ইন্দ্রাশিস বাগচী।

যত ক্ষণ না সূর্য মাথার উপরে উঠছে, রাস্তাঘাট এক রকম গমগমই করছিল। সে বহরমপুরই হোক বা সালার, ডোমকল, হরিহরপাড়া, রঘুনাথগঞ্জ বা ধুলিয়ান। বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ বহরমপুরের খাগড়ায় রিকশা চলতেও দেখা গিয়েছে। টোটো করেও বেরিয়েছেন অনেকে। দোকানপাট খোলা। বাজারে বেশ ভিড় ছিল। একে অপরের মধ্যে যে দূরত্ব রাখা দরকার, সেই লক্ষ্মণরেখা না মেনেই গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বাজার করেছেন অনেকে। রাস্তায় বহু লোককে পাশাপাশি যাতায়াত করতে দেখা গিয়েছে। বারণ করার কেউ ছিলেন না। জেলার প্রায় সব জায়গা থেকেই শোনা গিয়েছে, পুলিশ ছিল, কিন্তু নীরব দর্শকের মতো দাঁড়িয়ে থেকেছে।

Advertisement

রাস্তায় এই ভিড়ের কথা অস্বীকার করেননি জঙ্গিপুরের এসডিপিও প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘প্রতিটি রাস্তাতেই পুলিশ রয়েছে। তাঁরা মাইক নিয়ে লকডাউনের প্রচারও করছেন। বোঝাচ্ছেন। কিন্তু লোকজন না শুনলে, কী আর করা যাবে? মারধোর করা তো সম্ভব নয়।’’ পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘লাঠি চালিয়ে মানুষকে ঘরে ঢোকানো যায়। কিন্তু ইতিমধ্যেই পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ উঠছে। এর পরে আর লাঠি উঁচিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।’’ ডোমকলের এক পুলিশকর্তারও একই বক্তব্য। মাত্র এক দিন আগে যিনি বলেছিলেন, ‘‘চার-ছয় না মেরে স্রেফ খুচরো রান নিয়ে খেলতে হচ্ছে’’ সেই কর্তাই এ দিন বলেন, ‘‘ব্যাট নিয়ে নেমে আমরা এ বার হিট উইকেট হয়ে যাচ্ছি। তাই এখন আর খুচরো রানের ঝুঁকিও নেওয়া সম্ভব নয়।’’

এই অবস্থায় অনেকে যেন ভুলেই গিয়েছেন পড়শি জেলা নদিয়ায় একই পরিবারের ৫ সদস্য আক্রান্ত এবং তাঁদের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে লালগোলা প্যাসেঞ্জারের সম্পর্ক। হাটে বাজারে প্রশাসনের এঁকে দেওয়া লক্ষ্মণরেখাও মানেনি অনেকে। ভারি বড় যানবাহনহীন ফাঁকা রাস্তায় বেড়েছে বাইকের দাপট। কান্দি মহকুমার সালার, ভরতপুর, পাঁচথুপি ডাকবাংলো কুলি সহ বিভিন্ন বাজারে মানুষের রীতিমতো ঢল নামে। দোকানের সামনে গোল গোল করে যে দাগ কেটে রাখা ছিল, তারও তোয়াক্কা করেননি অনেকেই। একই ছবি ছিল ডোমকল এবং জঙ্গিপুর মহকুমাতেও। রাস্তাঘাটে বাস, ট্রাক অবশ্য দেখা যায়নি।

Advertisement

অবস্থাটা কিন্তু এমন ছিল না শুক্রবারও। বুধ-বৃহস্পতিবার কড়া হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নামেন পুলিশকর্মীরা। ভিন্ রাজ্য থেকে ফেরা শ্রমিকরা তখন ছুটির মেজাজে ঘোরাফেরা শুরু করেছিলেন। আবেদন নিবেদনে কাজ না হওয়ায় লাঠি হাতে পথে নামে পুলিশ। তাতেই গোটা জেলা লকডাউনের চেহারায় চলে গিয়েছিল। কিন্তু তার পর থেকে চাপ বাড়তে থাকে পুলিশের উপরে, লাঠি চালানো নিয়ে সমালোচনা হয় বিভিন্ন মহলে। হাত গুটিয়ে নেয় পুলিশ। আর তার পরেই লকডাউন ভেঙে পথে নামে জেলার একাংশের মানুষ।

ধুলিয়ানে শুক্রবার বিকেল থেকে পাইপ ফেটে যাওয়ায় পরিস্রুত পানীয় জল বন্ধ থাকে। শুক্রবার সকাল থেকে দেখা যায় গঙ্গার ঘাটে মানুষের ভিড়। কেউ স্নান করছেন, কেউ পাশেই দাঁড়িয়ে কাপড় কাচছেন, কেউ খাবার জল সংগ্রহ করছেন একই ঘাট থেকে। সেখানে পরস্পরের মধ্যে দূরত্ব রাখার কোনও বালাই ছিল না। বিকেলে আবার সুনসান অবস্থা কিছুটা ফেরে।

জেলার পুলিশ সুপার অজিত সিংহ যাদব বলেন, ‘‘লকডাউন সত্ত্বেও মানুষ বাইরে বেরোচ্ছেন। পুলিশ তাদের বারবার সচেতন করছে। সব সময় শহরের বিভিন্ন এলাকায় টহল দিচ্ছে। তবে সবার আগে মানুষের নিজের সচেন হওয়ার দরকার রয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement