পুলিশের গাড়ি দেখেই ছুট। বহরমপুরে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
সপ্তাহে দু’দিন লকডাউন ঘোষণা হতেই পুলিশ প্রচারে নেমেছিল। অপ্রয়োজনে বেরোলেই কড়া ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল। লকডাউনের দিনে কড়া ব্যবস্থা নিতে দেখা গেল পুলিশকে। লকডাউনের সকালে কোথাও লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করতে দেখা গিয়েছে, কোথাও বা অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বেরোনোর অভিযোগ পুলিশ আটক করেছে সব মিলিয়ে ৩০০ জনকে। তবে জঙ্গিপুর পুলিশ জেলায় কাউকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি। কিন্তু অধিকাংশ জায়গাতেই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বাসিন্দারা লকডাউন সফল করেছেন। দু’এক জায়গায় যে বিধিভঙ্গের ছবি মিলেছে, তা নেহাৎই বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেই জানিয়েছে প্রশাসন।
জেলা সদর বহরমপুরে মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার কে শবরী রাজকুমার বৃহস্পতিবার নিজে লকডাউন কেমন হচ্ছে, তা দেখতে বেরোন। শহরের বিভিন্ন এলাকা তিনি ঘুরে দেখেন। এ ছাড়া জেলা জুড়ে পুলিশকে টহল দিতে দেখা গিয়েছে। বাইরে কেউ বেরোলে গাড়ির কাগজপত্র থেকে শুরু করে পরিচয়পত্র দেখতে চেয়েছে পুলিশ। বাইরে বেরনোর পর্যাপ্ত কারণ না দেখাতে পারলেই পুলিশ তাদের আটক করে থানায় নিয়ে গিয়েছে।
মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার কে শবরী রাজকুমার বলেন, ‘‘লকডাউনের প্রথম দিন সফল হয়েছে। লোকজন ঘর থেকে না বেরিয়ে আমাদের সহযোগিতা করেছেন। আবার অপ্রয়োজনে বাইরে বেরিয়েছে এমন ৩০০ জনকে আটক করা হয়েছিল। পরে তাঁদের বুঝিয়ে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’’
বহরমপুরে শহরের কয়েকটি জায়গায় চায়ের দোকান, আড্ডার ঠেকের বাইরে সাধারণ মানুষকে তেমন রাস্তায় দেখা যায়নি। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনের ব্যস্ততম ওষুধের দোকান থেকে খোলা থাকলেও সেখানেও ভিড় ছিল না। হাসপাতাল চত্বরেও লোকজন অন্য দিনের তুলনায় কম ছিল। দোকান বাজার থেকে শুরু আনাজ, মাছ, মাংসের দোকানও এ দিন বন্ধ ছিল।
হরিহরপাড়া, নওদায় ওষুধের দোকান ছাড়া সব কিছু বন্ধ ছিল। এদিন হরিহরপাড়ার সাপ্তাহিক হাট বন্ধ ছিল।
লকডাউনের প্রথম দিন হরতালের চেহারা নিয়েছিল জঙ্গিপুর মহকুমা জুড়ে। পুলিশ কড়া মেজাজে থাকলেও কারও গায়ে হাত তোলেনি, এমনকি লাঠি থাকলেও ঘা পড়েনি কারও পিঠে। জঙ্গিপুরের এসডিপিও প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধায় জানান, ‘‘জঙ্গিপুরে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে। তাই পুলিশকে বলা হয়েছিল মানুষের ছোঁয়া এড়িয়ে পরিস্থিতি সামলাতে। সংক্রমণ এড়াতেই পুলিশ কারও গায়ে হাত তোলেনি। তবে পুলিশি টহল
ছিল সর্বত্র।’’
অতীতে এমন সফল লকডাউনের চেহারা দেখা যায়নি কোথাও। এমনকি শমসেরগঞ্জ ব্লক ও ধুলিয়ান শহরেও পুলিশ দাপিয়ে বেরিয়েছে এদিন। ঝাড়খন্ড লাগোয়া ভাসাইপাইকর, বাসুদেবপুরে এ পর্যন্ত কখনও এমন লকডাউন দেখা যায়নি। এ দিন সেখানেও দোকান পাট ছিল পুরোপুরি বন্ধ। রাস্তায় লোকজন বা যানবহন দেখা যায়নি বললেই চলে। রঘুনাথঞ্জ ও জঙ্গিপুর শহরে আনাজের সমস্ত বাজার ছিল বন্ধ। দু’একটি দোকান খোলার চেষ্টা করলেও পুলিশ ছিল অত্যন্ত কড়া মেজাজে। রঘুনাথগঞ্জে মাছের বাজার ভোরে খোলা হয়। খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ যেতেই পাঁচ মিনিটের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। বিড়ি শিল্পতালুক অরঙ্গাবাদ ছিল শুনসান।
ডোমকলেও কড়া ছিল পুলিশ। এদিন সকালে অপ্রয়োজনে কিছু লোক বেরোতেই পুলিশ লাঠি উচিয়ে তাড়া করে। মুহূর্তের মধ্যে ডোমকলে সে খবর ছড়িয়ে পড়ে। ফলে সকাল থেকেই রাস্তাঘাট সুনসান হয়ে যায়। দোকান বাজার বন্ধ ছিল। এ ছাড়া অপ্রয়োজনে ঘর ছেড়ে বেরনোর জন্য কয়েকজনকে পুলিশ আটক করেছে।
লালবাগ মহকুমাতেও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পুলিশি টহল ছিল। লালগোলা, ভগবানগোলা জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জের কয়েকটি জায়গায় আড্ডা ছিল। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে কান্দির বাজার, হাট, ব্যস্ততম মোড়ের মাথা দখল নিয়েছিল পুলিশ। এদিন কান্দি, বড়ঞা, খড়গ্রাম, ভরতপুর ১ ও ২ ব্লকের রাস্তাঘাট সুনসান ছিল। দোকান বাজার সাপ্তাহিক হাট, আনাজের বাজার, মাছের বাজারও বন্ধ ছিল।