বিল্লাল। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম
সৌমিক হোসেনের জায়গিরে জলঙ্গি ঘেঁষা তাঁর ওয়ার্ডটি যেন ‘দুই বিঘা জমি’।
ডোমকলে আর সব দুর্গের পতন হয়েছে। আঠারোটা গিয়েছে একপেশে ভোটে, দু’টো গিয়েছে গণনার পরে কেনাবেচার ঘোঁটে। বাকি শুধু তাঁর ২১ নম্বর ওয়ার্ড।
রাজ্যপাট নিষ্কণ্টক করতে হলে ওইটুকুও সৌমিকের লাগে। ঠিক যেন, ‘পেলে দুই বিঘে প্রস্থ ও দিঘে সমান হইবে টানা— ওটা দিতে হবে’।
অতএব তিনি, ২১ নম্বরে জয়ী কংগ্রেস প্রার্থী বিল্লাল হোসেন, যাঁর সঙ্গে ভোটেও টক্কর নিতে আসেনি তৃণমূলের বাহিনী, মন প্রায় ঠিক করে ফেলেছেন। কিন্তু দোনামনা যাচ্ছে না।
৯ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী যখন বুধবার জয়ের পরেই তৃণমূলের খাতায় নাম তুলেছেন, বিল্লালের সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। ফোন বন্ধ ছিল প্রায় সারা দিন। বৃহস্পতিবার তাঁর দেখা পাওয়া গেল জলঙ্গির পাড়ে অম্বরপুর গ্রামের বাড়িতে।
ফুলহাতা শার্ট আর লুঙ্গি পরে বাড়ির রকে দেওয়ালে ঠেস দিয়ে বসে বিল্লাল বললেন, ‘‘বাপ-দাদার আমল থেকে আমরা কংগ্রেস করি। আমাদের রক্তে মিশে আছে। এই এলাকায় কংগ্রেসকে টিঁকিয়ে রাখতে অনেক লড়েছি। এমনকী এই ভোটের আগেও তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের হানা আটকাতে রাতের পর রাত জেগে মাঠে পাহারা দিয়েছি। তাদের সঙ্গে যাই কী করে?’’
তৃণমূলে যেতেই হবে, এমন মাথার দিব্যি কে দিয়েছে?
বিল্লালের দাবি, ‘‘আমায় যাঁরা বুক দিয়ে আগলে রেখেছেন সব সময়, ভোট দিয়ে জিতিয়েছেন, তাঁদেরই ৯৫ শতাংশ এখন বলছেন, আপনি চলে যান তৃণমূলে। না হলে ওরা উন্নয়ন করতে দেবে না। পুলিশ দিয়ে, গুন্ডা দিয়ে হয়রান করবে। আপনাকে তো বটেই, আমাদেরও। তার চেয়ে ও দলে চলে যাওয়াই ভাল।’’
বিল্লাল যতই মনঃকষ্টের কথা বলুন, ইতিমধ্যেই তিনি তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বলে খবর। সৌমিকের দাবি, বুধবারই তাঁর বাড়ি এসে দেখা করেছেন বিল্লাল। তাঁর কথায়, ‘‘জোটের তিন জয়ী প্রার্থীই এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। দু’জন তো চলেই এসেছেন আমাদের সঙ্গে। বিল্লালও চাইলে আসতে পারেন।’’
বিল্লাল অবশ্য সৌমিকের বাড়িতে যাওয়ার কথা অস্বীকার করেন। বেশ তো, তা হলে কবে যাচ্ছেন? ‘‘কী করব, কিছুই এখনও ঠিক করিনি’’ — বলছেন বিল্লাল। ডোমকল পুরভোটে কংগ্রেসের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেত্রী শাওনী সিংহরায় বলেন, ‘‘বিল্লাল আমাদের লড়াকু কর্মী। কিন্তু এখন যা সন্ত্রাসের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, ও যদি চলেই যায়, আমাদের কিছু বলার নেই।’’