রুইপুকুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের সময় পুলিশি তৎপরতা। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র।
এ যেন মুখের সামনে থেকে বাড়া ভাতের থালা ছিনিয়ে নেওয়া!
সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েও মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের নিজের এলাকায় রুইপুকুর গ্রাম পঢ্চায়েতে বোর্ড গঠন করতে ব্যর্থ হল তৃণমূল। রাম-বামের হাত আঁকড়ে প্রধানের পদ ছিনিয়ে নিয়ে গেলেন দলেরই টিকিটে জয়ী এক সদস্য, যাঁকে এখন ‘ঘরশত্রু বিভীষণ’ ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারছেন না তৃণমূল নেতাকর্মীরা। সেই সদস্য এবং তাঁর সঙ্গী আর এক পঞ্চায়েত সদস্যের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন উজ্জ্বল।
ওই পঞ্চায়েতে ২২টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ১৩টি, বিজেপি সাতটি ও সিপিএম দু’টি আসন পেয়েছিল। পরে দুর্ঘটনায় এক তৃণমূল সদস্য মারা গেলে ২১ আসনের মধ্যে তৃণমূলের হাতে ছিল ১২টি। কয়েক দিন আগেই তৃণমূল নেতৃত্ব প্রধান পদপ্রার্থী হিসাবে ইনার আলি শেখের নাম ঘোষণা করে। মঙ্গলবার ভোটাভুটির পর দেখা যায়, ইনার আলি পেয়েছেন ১০টি ভোট, আর তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়ানো তৃণমূলেরই সদস্য অনুপ বিশ্বাস ১১টি। বিজেপির সুপ্রিয়া মণ্ডলও ১১টি ভোট পেয়ে উপপ্রধান নির্বাচিত হয়েছেন।
তৃণমূল সূত্রের দাবি, ইনারকে প্রধান হিসাবে মানতে নারাজ অনুপ ও তাঁর ঘনিষ্ঠ এক তৃণমূল সদস্য প্রথমে বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। ঠিক হয়, বিজেপি অনুপকে প্রধান পদে সমর্থন করবেন আর অনুপেরা সু্প্রিয়াকে উপপ্রধান পদে সমর্থন করবেন। কিন্তু তাতেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা হচ্ছে না। তাই সিপিএম সদস্যদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়।
এ ভাবে পঞ্চায়েত হাতছাড়া হওয়া কোনও ভাবেই মানতে পারছে না তৃণমূল। স্থানীয় বিধায়ক উজ্জ্বল বিশ্বাসের দাবি, “ওই দু’জনই টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গিয়েছে। আমরা ওদের দল থেকে বার করে দেব।” বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অর্জুন বিশ্বাস পাল্টা বলেন, “তৃণমূলের এখন ‘আঙুর ফল টক’। তাই এই সব বলছে।” আর, সদ্য প্রধান পদে নির্বাচিত অনুপ বিশ্বাস বলছেন, “আমি তো বিজেপিতে যোগ দিইনি। আমি তৃণমূলেই আছি।”
তাঁর ব্যাখ্যা, “শুধু দলের প্রধান পদপ্রার্থী পছন্দ না হওয়ায় স্বচ্ছ বোর্ড গঠনের স্বার্থে নিজে প্রার্থী হয়েছি। কে সমর্থন করল, সেটা বলতে পারব না।”
সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য চাপে পড়ে গিয়েছেন। দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুমিত বিশ্বাস বলেন, “আমাদের দুই পঞ্চায়েত সদস্যের এক জন দলেরও সদস্য। তাঁর এবং অপর মহিলা প্রার্থীর স্বামীর দলীয় সদস্যপদ খারিজ করা হয়েছে। এর পরেও যদি কেউ দলের অবস্থানের বাইরে যায়, তাদের বিরুদ্ধেও কড়া ব্যবস্থা হবে।” বোর্ড গঠনের পরে বিজেপি ও সিপিএম সমর্থকদের এক সঙ্গে দলীয় পতাকা হাতে হইহই করতে দেখা যায়। সুমিত বলেন, ওখানে যারা দলের পতাকা নিয়ে হাজির ছিল, তাদেরকেও চিহ্নিত করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধেও দল পদক্ষেপ করবে।’’