মুনাফার লোভেই মুছে যাচ্ছে মেয়াদ

দোকান মালিকদের একাংশ অভিযোগ করেছেন, মেয়াদউত্তীর্ণ ওষুধ ফেরত নিতে গড়িমশি করে অনেক উৎপাদক সংস্থা। কাটা ওষুধ অনেকে নিতে চায় না।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৮ ০০:৫৩
Share:

ওষুধের দোকানে পড়ে থেকে মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়া ওষুধ নিয়ে নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে ড্রাগ কন্ট্রোলের। ওই ওষুধ ফেরত নিয়ে আবার তার বদলে নতুন ওষুধ দেওয়ার কথা উৎপাদক সংস্থার। সহজ নিয়মে ‘এক্সপায়েরি ডেট’ পেরোনো ওষুধের বদলে নতুন ওষুধ পাওয়ার ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও কিছু দোকান মালিক কেন মেয়াদ-উত্তীর্ণ ওষুধের গায়ে লেখা তারিখ মুছে নতুন তারিখ লিখে বিক্রির দুর্নীতিকে আশ্রয় করছেন সেই প্রশ্ন উঠছে।

Advertisement

দোকান মালিকদের একাংশ অভিযোগ করেছেন, মেয়াদউত্তীর্ণ ওষুধ ফেরত নিতে গড়িমশি করে অনেক উৎপাদক সংস্থা। কাটা ওষুধ অনেকে নিতে চায় না।ওষুধ কেনার সময় যে বোনাস থাকে, ছাড় থাকে তা ফেরতের সময় দেখা হয়না। ফলে খুচরো ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয়। দোকান মালিকদের সংগঠন ‘বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশন’-এর নদিয়া জেলা সম্পাদক সজল সাহা বলেন, ‘‘ওষুধ মেয়াদ-উত্তীর্ণ হওয়ার তিন মাস আগে থেকে তিন মাস পর পর্যন্ত তা উৎপাদক সংস্থাকে ফেরত দেওয়া যায়। অনেকসময় এমন হয়েছে যে, আমরা বার-বার জানিয়েছি, অপেক্ষা করেছি, কিন্তু উৎপাদক সংস্থা তা ফেরত নেয়নি। ৬ মাস পার হয়ে গিয়েছে। তার পরে ওষুধ ফেরত দিয়ে আর বিনা পয়সায় নতুন স্টক পাওয়া যাবে না।’’

তবে ওই সংগঠনের বহরমপুর জোনের সদস্য রবিউল ইসলামের অবশ্য দাবি, মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ ফেরানোর পদ্ধতি সহজ এবং এতে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হওয়ার কথা নয়। সমস্যাও খুব বেশি হয় না। তাঁর দাবি, ‘‘কোনও অসাধু চক্র মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ চালানোর চেষ্টা করছে। আর কোনও কোনও ওষুধের দোকানের মালিক সেই ফাঁদে পা দিয়ে ফেলছেন। তাঁদের হয়তো টাকার লোভ দেখানো হচ্ছে। আমরা ড্রাগ কন্ট্রোলের কর্তাদের বিষয়টি দেখতে বলেছি।’’

Advertisement

গত শনিবার নদিয়ার হাঁসখালির ভায়না বাজারের একটি ওষুধের দোকান থেকে জ্বরের ওষুধ কিনেছিলেন এক ব্যক্তি। তা খাওয়ানো হয়েছিল বছর দু’য়েকের এক শিশুকে। ওষুধ খাওয়ার পরেই মেয়েটির বমি শুরু হয়। পরে দেখা যায়, ওষুধের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৬ সালেই। ওষুধের প্যাকেটের গায়ে সেই তারিখের উপরে নতুন স্টিকার লাগিয়ে সেখানে ‘এক্সপায়েরি ডেট’ লেখা হয়েছে ২০২০।

রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলের এক অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর ব্যাখ্যা করেন, মূলত মুনাফার জন্যই মেয়াদ-উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও ওষুধ উৎপাদকের কাছে ফেরত দেন না অনেক দোকান-মালিক। কী রকম মুনাফা? ধরা যাক, একটি ওষুধ উৎপাদন করতে ১০ টাকা খরচ হয়, দাম ১০০ টাকা। ওই ওষুধ উৎপাদক ২০ টাকায় বিক্রি করল পাইকারি বিক্রেতাকে। তিনি ১০ টাকা লাভ রেখে ৩০ টাকায় বিক্রি করলেন খুচরো বিক্রেতাকে। এ বার যে ওষুধগুলি বিক্রি হল না এবং মেয়াদউত্তীর্ণ হল সেগুলি ফেরত নিয়ে আবার ৩০টাকায় দিতে চান না পাইকারি বিক্রেতা। কারণ, তাতে তাঁর মুনাফা কম হয়। ৭০ শতাংশ ছাড় পাবেন না বলে কিছু খুচরো বিক্রেতাও ওষুধ ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে ঘুরপথে ওষুধের নতুন লেবেল বসিয়ে তা বিক্রিতে আগ্রহী হন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement