কোন সংস্থার তাতে কিছু যায় আসে না। নাম ছিল স্টেট বাস। প্রবীণরা বলতেন ডিএসটিসি। কিন্তু সে বাসের মেজাজই ছিল আলাদা। এলাকার বাসিন্দাদের কাছে সে বাসের কদরই ছিল আলাদা। মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে দাপিয়ে বেড়াত সরকারি বাসগুলি।
উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের দুরপাল্লার বাসগুলি প্রত্যন্ত এলাকা ছুঁয়ে যেত বলে বহু মানুষ উপকৃত হতেন। কিন্তু, সরকারি সেই বাসগুলি বেমালুম উধাও হয়ে গিয়েছে।
ডোমকল-জলঙ্গী সহ বিভিন্ন রুটে ১৫টি বাস চলত ঘন ঘন। এ ছাড়া দূর পাল্লার বেশকিছু বাস চলত। কিন্তু এখন সেই বাসের দেখা নেই। সরকারি সংস্থাগুলির তরফে দাবি করা হচ্ছে, বাস চালিয়ে লোকসান হচ্ছিল বলেই বন্ধ হয়ে পড়েছে ওই বাস গুলি।
যদিও যাত্রীদের দাবি কিন্তু অন্য। তাঁরা জানাচ্ছেন, সরকারি বাসগুলিতে ভালই ভিড় হত। সরকারী বাস পেলে বেসরকারী বাসে যাত্রীরা উঠতে ছাইতেন না। কারণ, সারকারি বাসের যাত্রা যেমন আরামের ছিল, তেমন দ্রুতগতিতে পৌঁছানো যেত।
প্রশ্ন উঠছে, তার পরেও কেন লাভের মুখ দেখতে পেল না সারকারি পরিবহন সংস্থার বাসগুলি?
যাত্রীদের অভিযোগ, এতে যাত্রীদেরও দোষ ছিল। কারণ, অনেকেই কম ভাড়ায় যাতায়াতের জন্য টিকিট কিনতেন না অনেকেই। কন্ডাক্টরের হাতে কিছু টাকা ন্যায্য ভাড়ার অনেক কম টাকা ধরিয়ে বাস থেকে নেমে যেতেন। পরে আখেরে ক্ষতি হল যাত্রীদেরই।
তবে কিছু যাত্রীদের অভিযোগ, লোকসানের অভিয়োগ ঠিক নয়। জেলা তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি আবু সুফিয়ান অবশ্য বলেন, ‘‘লাভের মুখ না দেখতে পেয়েই বাসগুলি বন্ধ হয়ে পড়েছে। আমরা নতুন করে পরিকল্পনা করে আবারও সেই বাস চালানোর চেষ্টা করছি।’’
জেলা জুড়ে বেসরকারী বাস রমরমিয়ে চললেও সরকারি সংস্থার বাসগুলি মুখ থুবড়ে পড়েছে। বহরমপুর ডিপো থেকে জেলার ১৩টি রুটে চলা ১৫ টি বাসের মধ্যে কেবল লালবাগ-জিয়াগঞ্জ রুটে দু’টি বাস চলে। এ ছাড়া জেলার আর কোনও রাস্তায় সরকারি বাস চলে না।
একটা সময় প্রায় ১৫ টি বাস জেলার বিভিন্ন রুটে চলত। কান্দি, রঘুনাথগঞ্জ, ডোমকল, জলঙ্গি, হরিহরপাড়ার মত প্রত্যন্ত এলাকার বহু গ্রাম ছুঁয়ে বাসগুলি চলাচল করত। তা ছাড়াও বিভিন্ন রাস্তায় সংস্থার অন্যান্য ডিপোর আরও কিছু বাসও চলত নিয়মিত। কিন্তু তাতে নাকি সংস্থার লাভ হয়নি।
সরকারি পরিবহন সংস্থার কর্মীরা জানাচ্ছেন, অনেক সময় বেসরকারী বাসের চাপে পড়ে বাস বন্ধ করতে হয়েছে। তাদের দাবি, সরকারি বাসগুলিকে আগে যেতে না দেওয়া, সরকারি বাসের ঠিক আগে বেসরকারি বাস ছাড়ার মত নানা ঘটনা ঘটত। সেটাও সরকারি বাস বন্ধ করে দেওয়ার কারণ।
নদিয়ার শিকারপুর থেকে উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণবঙ্গের দুর্গাপুর-বাঁকুড়া যাওয়ার একাধিক সরকারী বাস চলত। তা ছাড়া ডোমকল ও সাগরপাড়া সেখপাড়া থেকে কলকাতা, দুর্গাপুর, কোচবিহার যাওয়ার জন্য কয়েকটা সরকারী বাস চলত। কিন্তু বছর সাতেক থেকে প্রায় বন্ধ হয়ে যায় বাসগুলি।
যাত্রীদের বক্তব্য, ‘‘সরকারি বাসে কয়েক ঘণ্টার যাত্রা করলেও কোনও অসুবিধা হত না। কিন্তু বেসরকারী বাসের দু’টি আসনের মধ্যে জায়গা এতটাই ছোট যে, একবার কলকাতা গেলে হাটুর ব্যাথায় ভুগতে হয় কয়েকদিন।’’
উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার-সহ অধিকর্তা উত্তম কুমার গণ এ বিষয়ে কিছু বলতে চালনি।