গলা ভেজাতে যুব কংগ্রেসের হেল্প-ডেস্ক এগিয়ে দিল লজেন্স। বহরমপুরে।—নিজস্ব চিত্র
নির্বাচন মিটে গিয়েছে।
আম-মানুষের অভিজ্ঞতা বলছে, এই ঘোর ‘অসময়ে’ ওঁদের তেমন দেখা পাওয়া যায় না। তার উপর, হরেক উৎসবের এই প্রাক-শীতের আমেজে তো নয়েই!
আকালে-অভাবে, স্বার্থ খুইয়ে ওঁরা পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন— এমন ‘অভিযোগ’ও বিশেষ নেই।
সেই ওঁরাই এই ঘোর নোট-আকালের দিনে ‘আমি তোমাদেরই লোক বোঝাতে এক্কেবারে দোরগোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছেন।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হেল্প ডেস্ক দেখে তেমনই মালুম হচ্ছে সাধারণ মানুষের।
নদিয়া এবং মুর্শিদাবাদ— দুই জেলার বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সামনে খোলা দলীয় পতাকার আড়ালে কার্তিকের রোদ আড়াল করে হেল্প ডেস্ক থেকে আসছে পরামর্শ, মিষ্টি কথা আর সাচ্চা জল। কোথাও বা সঙ্গে এক-আধ টুকরো বাতাসাও। হেল্পডেস্ক থেকে উড়ে আসছে আত্মীয়তা—‘শুধু জল নয় কাকু, একটা বাতাসা নিন।’ হাসি মুখে ফর্মটাও ভরে দিচ্ছেন অনেকে।
তখন প্রায় সাড়ে এগারোটা। শিবিরে টেবিলটা পাতা হয়েছে সবে, যেন হুমড়ি খেয়ে পড়লেন ব্যাঙ্কের গ্রাহকেরা। কৃষ্ণনগরের সদর মোড়ের কাছে একটি রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাঙ্কের সামনে রাস্তার পাশে শিবির করেছে শাসক দল। গ্রাহকদের হয়রানি যদি কিছুটা কমানো যায়। টেবিলের উপরে থাকে থাকে সাজানো টাকা জমা দেওয়া ও তোলার ফর্ম। গ্রাহকরা ভিড় করে আছেন। যাঁরা অক্ষম, বা অক্ষর জ্ঞান তেমন নেই। তাদেরকে ফর্মও পীরণ করে দেওয়া হচ্ছে। সঙ্গে পানীয় জল। চাইলে মিলবে চা-ও।
এরই মধ্যে শিবিরের সামনে সেই ভিড়ের পিছনে এসে দাঁড়ালেন এক বৃদ্ধ। ভিড় ঠেলে কিছুতেই এগোতে পারছেন না। চোখে পড়ে গেল এক কর্মীর। এগিয়ে এসে হাত ধরে নিয়ে গেলেন শিবিরের ভিতরে। চেয়ারে বসিয়ে নিজেই ভরে দিলেন ফর্ম।
শুধু কৃষ্ণনগর নয়, তালিকায় রয়েছে বিরোধী কংগ্রেস থেকে বামেরাও। বদলে যাচ্ছে শহরের নামও— বহরমপুর থেকে রানাঘাট, নবদ্বীপ থেকে কল্যাণী, সর্বত্র।
যাঁর সঙ্গে দেখা করতে এমনই লাইন পড়ত, দিন কয়েক আগেও, সদ্য দলবদল করা বহরমপুরের সেই পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্যও এ দিন সাত সকালে স্বেচ্ছায় দেখা করতে নেমে এসেছেন দীর্ঘ লাইনে। নিজেই এগিয়ে দিচ্ছেন জলের গ্লাস।
ডজন খানেক পুরকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বহরমপুর শহরের এ-মুড়ো থেকে ও-মুড়ো চষেও বেড়াচ্ছেন তিনি। যা দেখে লাইনে দাঁড়ানো এক যুবক তো বলেই পেললেন, ‘‘এমন নীলুদাকে তো চিনি না!’’
নদিয়ায় জেলা কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আজ, বুধবার থেকে তারাও সহায়তা কেন্দ্র খুলবে ব্যাঙ্কের সামনে। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে, বিশেষ করে বেথুয়াডহরি, ধানতলা, তেহট্ট, পলাশীপাড়ায় ব্যাঙ্কের সামনে নতুন করে জেগে উঠেছে বামেরাও।
দলের জেলা কমিটির সম্পাদক সুমিত দে বলেন, “মানুষ নাজেহাল হচ্ছে। আমরা পাশে থাকব না।’’
মুর্শিদাবাদে অবশ্য সহায়তার হাতটা সবার আগে বাড়িয়ে দিয়েছে কংগ্রেস। গত সোমবার থেকে কংগ্রেসের ছাত্র-যুব শাখা এ কাজ করছে। এ দিনও তাঁরা এই পরিষেবা বিলিয়েছে তারা। তবে মঙ্গলবার তাঁরা শহরের বদলে শহরতলি এলাকায় ম্যাড়াপ বেঁধেছে বেশি।
টাকার জন্য চাতক পাখির মতো লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষকে চা, বিস্কুট ও পানীয় জলের দেওয়ার পাশাপাশি ফর্ম পূরণ করে দিয়েছেন। কংগ্রেসের ছাত্র-যুব শাখার জেলা কো-অর্ডিনেটর মুস্তাক রশিদ মোহনলাল বলেন, ‘‘গত সোমবারের জনসভার জন্য ছেলেদের একটু বেশি খাটাখাটনি হয়েছে। তাই এ দিন ছেলেরা বিশ্রাম নিয়েছে। বুধবার থেকে জেলার সর্বত্র সহায়তা কেন্দ্র চালু থাকবে।’’