অনেক জলঘোলা করে শেষ পর্যন্ত শুক্রবার বিকেলে কল্যাণী ঋত্বিক সদনে কল্যাণী পুরসভার চেয়ারম্যানের শপথগ্রহণ হল। নব নিবর্বাচিত চেয়ারম্যান হলেন তৃণমূলের সুশীলকুমার তালুকদার। ১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জিতেছেন তিনি। সুশীলবাবু আগের বোর্ডে এই পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। পরে তাঁকে সরিয়ে কল্যাণ দাসকে ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়। ১৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বিজয়ী কল্যাণবাবু এ বারেও ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছেন। সব পুরসভায় যখন চেয়ারম্যানরা নির্বাচিত হয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছেন পুরোদমে তখন কল্যাণী পিছিয়ে কেন?
শপথ বাক্য পাঠ করানোর পর কল্যাণীর মহকুমাশাসক স্বপনকুমার কুন্ডু বলেন, ‘‘প্রশাসনিক কিছু নিয়ম নীতিতে চেয়ারম্যানের শপথ নেওয়ার দিন পিছিয়েছিল। ভাল ভাবেই তা সম্পন্ন হয়েছে।’’ তবে অন্য সূত্রে খবর, কল্যাণীতে অন্য কাউন্সিলরদের শপথ নেওয়ার ১ মাস ৮দিন পার করে নতুন চেয়ারম্যানের শপথের ঘটনার পিছনে অন্যতম কারণটি হল ২১টি আসনে নিজেদের অপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা। ফলাফলে বিরোধীশূন্য হওয়ার আগেই যে ভাবে প্রার্থী নির্বাচন করা হয়েছিল তাতে এসসি (তফসিলি) প্রার্থীদেরই বেশি করে টিকিট দেওয়া হয়েছিল। গত বোর্ডে কল্যাণীতে অনেক উন্নয়ণের কাজ করেছে তা দলমত নির্বিশেষে কল্যাণীর মানুষ স্বীকারও করেছেন। তাই প্রাক্তন চেয়ারম্যান নীলিমেশ রায়চৌধুরীকে সামনে রেখেই ভোট যুদ্ধে নেমেছিল তৃণমূল। চেয়ারম্যান হলে আরও কী কী উন্নয়ণ করবেন তার স্বপ্নও দেখিয়েছিলেন নীলিমেশবাবু। জয়ের পরে গত ১২মে কল্যাণী বিদ্যাসাগর মঞ্চে জেলার সাতটি পুরসভার নির্বাচিত কাউন্সিলরদের নিয়ে সভা করেছিলেন রাজ্যের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী ও দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সে দিনের সভায় হুইপ জারি করে নীলিমেশবাবুকেই চেয়ারম্যান করার কথা সর্বসম্মতভাবে ঘোষণা করেছিলেন তিনি।
১৮মে বাকি কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণের পর যখন চেয়ারম্যান হিসাবে নীলিমেশবাবু শপথ নিতে মঞ্চে উঠেছেন তখনই মহকুমাশাসকের কাছে একটি সরকারি নির্দেশ আসে ওই শপথ অনুষ্ঠান সাময়িইক ভাবে স্থগিত রাখার জন্য। পরে জানা যায় নিয়ম অনুযায়ী ২১জন তৃণমূল কাউন্সিলরের মধ্যে ১৩জনই এসসি হওয়ায় এসসি প্রার্থীকেই চেয়ারম্যান হতে হবে। কিন্তু নীলিমেশবাবুর এ ভাবে চেয়ারম্যান পদ আটকে যাওয়ায় দলের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। যদিও শুক্রবার বিকেলে ঋত্বিক সদনে সুশীলবাবু চেয়ারম্যান হওয়ার পরে অনুষ্ঠানে উপস্থিত পার্থবাবু বলেন, ‘‘দল বিব্রত হবে, মানুষের চোখে খারাপ লাগবে, এমন কোনও কাজ করা যাবে না। নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি থাকা চলবে না। ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। মানুষের প্রত্যাশা মেটাতে হবে। মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেবেন না।’’ নীলিমেশবাবুও সৌজন্য দেখিয়ে নতুন চেয়ারম্যানকে বুকে জড়িয়ে ধরেন।
শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের শেষে এই মঞ্চেই ২১ জুলায়ের প্রস্তুতির সভা হয়। তাতে পার্থবাবু ছাড়াও মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস, বিধানসভার পরিষদীয় সচিব নীলিমা নাগ, নদিয়া জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত, কার্যকরী সভাপতি অজয় দে-সহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।