—প্রতীকী চিত্র।
হরিণঘাটার নগরউখড়া-১ পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের জন্য কোনও রাজনৈতিক দলই ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছাতে পারেনি। এই পঞ্চায়েত ত্রিশঙ্কু অবস্থায় রয়েছে।
দক্ষিণ নদিয়ায় পায়রাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতও ত্রিশঙ্কু অবস্থায় আছে। এই পঞ্চায়েত শেষ পর্যন্ত কাদের দখলে যাবে, সে দিকেই অনেকেই তাকিয়ে।
নগরউখড়ায় ২২টি আসনের মধ্যে বিজেপি ১১টি, তৃণমূল ৬, বামফ্রন্ট ৩ ও কংগ্রেস ২টি আসন পেয়েছে। বোর্ড গঠনের ক্ষেত্রে বাম-কংগ্রেস জোটের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে বলে অনেকেই মনে করছেন। আবার পায়রাডাঙায় এ বছর আসন সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩০টি। তার মধ্যে তৃণমূল ১৩টি, সিপিএম ন’টি, কংগ্রেস চারটি ও বিজেপি চারটি আসনে জয়ী হয়েছে। সুতরাং, বিজেপির চার প্রার্থী যে দিকে ঝুঁকবেন, সে দিকেই বোর্ড গঠনের ক্ষেত্রে পাল্লা ভারী হবে।
এই দুই পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের বিষয়ে প্রত্যেক রাজনৈতিক দলই জল মাপছে। যদিও বিজেপির আত্মবিশ্বাস, তারাই বোর্ড গঠন করবে। হরিণঘাটা ব্লকের বিজেপির আহ্বায়ক নৃপেন বিশ্বাস বলেন, "আগামী ২০ তারিখের আদালতের রায়টা দেখে নিই। তবে বোর্ড আমরাই গঠন করছি।"
রাজনৈতিক মহল অবশ্য আঁচ করছে, তৃণমূলও বোর্ড গঠনের জন্য ঝাঁপাবে। সে ক্ষেত্রে নগরউখড়ায় তাঁদের লড়াইটা অনেকটাই কঠিন। হাতে সাকুল্যে ৬ জন। বোর্ড গঠনের ক্ষেত্রে আরও ৬ জনের দরকার। বাম-কংগ্রেসের ৫ জনকে নিজেদের দিকে আনতে পারলেও তারা ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছাতে পারবে না। সেক্ষেত্রে বিজেপির ১১জনের মধ্যে ভাঙন ধরাতে হবে। যদিও হরিণঘাটা ব্লকের তৃণমূলের সভাপতি নারায়ণচন্দ্র দাস বলেন, "নগরউখরা-১ নিয়ে আপাতত আমরা ভাবছি না। ব্লকের অন্য যে ৭টি পঞ্চায়েত পেয়েছি সেগুলো নিয়েই ভাবছি।"
তবে তৃণমূল সূত্রে খবর, ভিতরে ভিতরে তৃণমূল বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে। পাশাপাশি বিজেপির শিবিরে ভাঙন ধরাও অসম্ভব নয় বলে জানাচ্ছেন তৃণমূলের এক নেতা। নগরউখরা-১ পঞ্চায়েতেই বাম-কংগ্রেস জোট হয়েছিল। তাঁদের হাতে রয়েছে ৫ জন।
বামফ্রন্ট-কংগ্রেস সূত্রে জানা যাচ্ছে, বিজেপি বামেদের নিচুতলার নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করলেও তাঁদের তরফ থেকে কোনও সাড়া দেওয়া হয়নি। বাম-কংগ্রেসও পরিস্থিতি দেখছে। জল কতদূর গড়ায়, সে দিকেই তাদেরও নজর রয়েছে। এমনও হতে পারে যে, বোর্ড গঠনের ক্ষেত্রে তাঁরা অংশগ্রহণ করল না। সে ক্ষেত্রে শপথ গ্রহণই শুধু করবে। হরিণঘাটা ব্লকের বামফ্রন্ট কমিটির আহ্বায়ক অমূল্য দেবনাথ ও হরিণঘাটা ব্লকের কংগ্রেসের সভাপতি অনিল ঘোষ বলেন, "বোর্ড গঠনের আগের দিন বা ওই দিনই সিদ্ধান্ত নেব আমরা কী করব। তবে যা করব, আমরা এক সঙ্গেই সিদ্ধান্ত নেব।"
অনেকের ধারণা, পায়রাডাঙায় তৃণমূল চাইছে বিজেপির চার জনকে নিজেদের দিকে টানতে। আবার বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী নির্বাচনী প্রচারে এসে তৃণমূল বিরোধী সব শক্তিকে জোট তৈরির বার্তা দিয়েছিলেন। সেই লাইনে গেলে সিপিএম ও কংগ্রেসের সঙ্গেই গাঁটছড়া বাঁধতে পারে বিজেপি। সে ক্ষেত্রে পায়রাডাঙা এ বারেও তৃণমূলের নাগালের বাইরেই থেকে যাবে।
পায়রাডাঙা পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান, কংগ্রেসের বিজয়েন্দু বিশ্বাস এ বার পঞ্চায়েত সমিতিতে জয়ী হয়েছেন।
তাঁর কথায়, "পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের বিষয়য়ে এখনও আমরা ভাবনাচিন্তা কিছু করিনি। মানুষ যাদের চাইবে, তারাই বোর্ড গঠন করবে।" রানাঘাট ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি শেফালী বিশ্বাসের দাবি, "ত্রিশঙ্কু পঞ্চায়েতগুলিতে বোর্ড গঠনের ক্ষেত্রে অন্য দলের জয়ী প্রার্থীরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। দল এ ক্ষেত্রে যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই হবে।"
নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সভাপতি পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায় বলছেন, "এ বিষয়ে এখনও আমরা কোনও সিদ্ধান্ত নিইনি। তবে এ বার নির্বাচনের আগে আমাদের স্লোগান ছিল, একটিও ভোট মমতাকে নয়।"