নেতা-দাদা-পুলিশকর্তা, ম্যানেজ করতে হয় সবাইকেই

শাসকদলের নেতা ম্যানেজ করেই কাম খতম হবে না, বিরোধী দলের নেতা কেউ ছিটেফোঁটা না দিলে আইন দেখাতে ছাড়বে না সে! সঙ্গে রয়েছে, অফিসের বড়বাবুর ঘরে পা রাখলে মেজবাবুর রাগ।

Advertisement

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস

ডোমকল শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৯ ০১:৩৪
Share:

আর পাঁচটা ব্যবসার মতো টাকা থাকলেই খুলে বসলাম, এমনটা নয় ইট ভাটার কারবার। জমি থেকে পাশের বাগান মালিক, পাড়ার দাদা থাকে রাজনৈতিক দলের নেতা, পুলিশ থেকে প্রশাসন— ম্যানেজ করা কম হ্যাপার ব্যাপার নয়।

Advertisement

জমি ঠিক হলেও বেঁকে বসে পাশের জমির মালিক এ পাড়ার দাদা ম্যানেজ হলে ও পাড়ার দাদা মুখ গোমরা করে। আর শাসকদলের নেতা ম্যানেজ করেই কাম খতম হবে না, বিরোধী দলের নেতা কেউ ছিটেফোঁটা না দিলে আইন দেখাতে ছাড়বে না সে! সঙ্গে রয়েছে, অফিসের বড়বাবুর ঘরে পা রাখলে মেজবাবুর রাগ। আর মেজবাবুর সঙ্গে কথা বলতে দেখলেই চোখ বড় করেন বড় বাবু। সব ম্যানেজ করতে গিয়ে নাজেহাল ইটভাটার কারবারীদের। ‘‘এত কিছু করেও বাটা ব্যবসায় টিঁকে আছি কেন জানেন, টাকাটা মন্দ আসে না’’, মন খুলেই কখাগুলো বলছেন, গোয়াস এলাকার এক ভাটা মালিক।

জলঙ্গির এক ভাটা মালিক বলছেন, পরিস্থিতি বুঝে পা ফেলতে হয়েছে আমাদের। কখনও নেতাদের সঙ্গে নিয়েছি ইটভাটার কারবারে, আবার কখনও আমরা ব্যবসা চালাতে গিয়ে নেতা হয়ে বসেছি। বুঝে গিয়েছি রাজনীতিতে এখন ভাত ছড়ালে আর কাকের অভাব নেই!’’

Advertisement

একটা সময় ইট ভাটা তৈরি থেকে চালানো সবক্ষেত্রেই নেতারা নাক গলাতেন আমাদের উপরে। এখন তারা নিজেরাই রাজনীতিতে পা রাখায় নেতাদের ভাটায় যুক্ত করে সেই সমস্যাটা আর নেই। সাপও মরেছে, লাঠিও ভাঙেনি। তা ছাড়া এই দুই পন্থায় আমলারাও বেশ চাপে রয়েছে।

ইটভাটা করতে গেলে প্রথমে দরকার পড়ে মাটির। আর এই মাটির জন্য দরকার হয় এলাকার জমিদার গোছের মানুষের। যাদের বিঘা বিঘা জমি থাকে একই এলাকায়। সেই জমিকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হয় ভাটা। অন্তত শুরুর সময় সাধারন মানুষ জমি নিয়ে কোনও আঙুল তুলতে না পারে, তার জন্য ওই কৌশল। তার পরে সেখান থেকে শুরু হয়, একের পর এক জমি লিজ নিয়ে মাটি কাটা। জলঙ্গির সাহেবনগর এলাকার বাসিন্দা সাল্লুর সরকার বলেন, ‘‘আমাদের মাঠে একটা সময় এলাকার এক প্রভাবশালী লোক এলাকার এক নেতাকে সঙ্গে নিয়ে একটি ইটভাটা তৈরি করার চেষ্টা করে আমরা আদালত পর্যন্ত গিয়ে বিষটি আটকালেও পরে একটু দুরে অন্য মৌজায় সেটা তৈরি করে নিয়েছে।’’

কিন্তু যাদের পক্ষে আদালত পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব নয় সেই চাষিদের কি হবে? হয় মেনে নিতে হয় না হলে চাষের পাট উঠিয়ে দিন মজুরি। জলঙ্গির সাদিখাঁরদিয়াড় এলাকার বাসিন্দা মাজের আলি বলেছেন, ‘‘আমাদের মাঠে ভাটা তৈরির সময় বাধা দিয়েছিলাম। পরে দেখলাম ওদের পাশে নেতা আছে, পুলিশ আছে, প্রশাসন আছে। এমনকি এলাকার লাঠিয়াল বাহিনীও তাদের কব্জায়, আর সামনে এগিয়ে যেতে সাহস করিনি। এখন আমরা দিন মজুর!’’

ডোমকল মহকুমার ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক মহম্মদ ইকবাল অবশ্য শুনিয়ে রাখছেন, ‘‘তা কেন, আমরা খবর পেলেই তো আইনি পদক্ষেপ করি।’’ মাজের আলি যা শুনে বলছেন, ‘‘শুভেচ্ছা রইল!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement