এ ভাবেই যাতায়াত। ছবি: কৌশিক সাহা
ভয়টা ছিলই। বর্ষার প্রথম টানা বৃষ্টিতে সেই আশঙ্কাই সত্যি হল। বাঁধ ভাঙল ব্রাহ্মণী নদীর। ঘর-বাড়ি আবাদি জমি ভাসিয়ে নিরাশ্রয় হলেন কয়েক হাজার গ্রামবাসী।
শুক্রবার ব্রাহ্মণীর বাঁধ ভাঙায় প্লাবিত হল খড়গ্রামের যাদবপুর-সহ আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রাম। এক দিকে টানা বর্ষণ, অন্য দিকে সংস্কার না হওয়া বাঁধ— এই জোড়া ধাক্কায় যাদবপুরের বাসিন্দারা বেশ কিছু দিন ধরেই স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বাঁধ মেরামতের দাবি জানাচ্ছিলেন। তা না হওয়াতেই এ দিন ভেসে গেল গ্রামটা।
বানভাসি হওয়ার পরে অবশ্য নড়েচড়ে বসা প্রশাসন যথারীতি ‘সবরকম’ সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত দু’দিন বীরভূম এবং লাগোয়া ঝাড়খণ্ড এলাকায় প্রবল বর্ষণের ফলে নদীর জল বাঁধ ছাপিয়ে এলাকায় ঢুকতে শুরু করেছিল। গ্রামের বাসিন্দা আসরাফ শেখ গোপাল মার্জিতরা জানান, জলের তোড়ে যে কোনও সময় বাঁধ উড়ে যেতে পারে সেই আশঙ্কায় বৃহস্পতিবার রাতভর তাঁরা চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। শুক্রবার দুপুরে সে আশঙ্কাই সত্যি হয়। প্রায় ৭০ মিটার বাঁধ ভেঙে হুড়মুড়িয়ে জল ঢোকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাঁধের প্রায় ২০০ মিটার এলাকা ধসে যায়। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি কাঁচা বাড়ি ভেঙে পড়েছে। আতঙ্কে বহু মানুষ বাড়ি ছেড়ে নদী পাড়ের উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ গ্রামের স্কুল বাড়িতে আশ্রয় খুঁজছেন বলে জানা গিয়েছে।
কল্যাণী মার্জিত, রুবিনা বিবি-সহ গ্রামের মহিলারা বলেন, “ছেলে-মেয়েদের নিয়ে রাতভর খোলা আকাশের নীচে বাঁধের উপর বসে রয়েছি। একটা ত্রিপলও জোটেনি।’’
গত বছরও বাঁধ উপচে প্লাবিত হয়েছিল এই গ্রাম। প্রায় এক সপ্তাহ জলের তলায় ছিলেন তাঁরা। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল সাত্তার, সাত্তার শেখ-সহ অন্যদের অভিযোগ, বন্যার পর থেকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেউ এলাকায় আসেননি। এলাকার বিধায়ক আশিষ মার্জিত বা তাঁর কোনও প্রতিনিধিও গ্রামে আসেননি বলে গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন। ব্যবস্থা করা হয়নি ত্রাণেরও।
গ্রামবাসীদের অধিকাংশই তুঁত চাষি। তাঁরা জানান, বন্যায় এলাকার প্রায় ৩০০ বিঘার তুঁত নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফলে তাঁদের সম্বৎসরের আয়ও হয়ে পড়েছে অনিশ্চিৎ।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণের ব্যবস্থা না হলেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, পাশের কেলাই, উঁচু যাদবপুর গ্রামের বাসিন্দারা। গত দু’দিন ধরে শুকনো মুড়ি, ও রুটি নিয়ে বন্যা দুর্গতদের দিচ্ছেন তাঁরা। পানীয় জলের টিউবওয়েল জলের তলায়। ফলে বন্যার ঘোলা জল ফুটিয়ে খেতে হচ্ছে। জলও তাঁদের জুটছে পড়শি গ্রামর লোকজনের বদান্যতায়। বাসিন্দাদের এমন অভিযোগ মানতে নারাজ খড়গ্রামের বিডিও খুরসিদ আলম। তিনি বলেন, “আমি নিজে ওই গ্রামে গিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেছি। খাবার ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলাম কিন্তু বাসিন্দারা খাবারের থেকে বাঁধ মেরামতির ব্যবস্থা আগে করার কথা জানিয়েছেন।’’
তাঁর দাবি, গ্রামে দশটি ত্রিপল দেওয়া হয়েছে। নদীর জল নামলে বাঁধ মেরামতির ব্যবস্থা করা হবে।