border

Border: ‘নতুন দরজা’য় নব আলোর আশা সীমান্তে

বাংলাদেশের সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগের এই ‘রুট’ নতুন নয়। স্বাধীনতার পরেও দীর্ঘদিন এই রাস্তা দিয়ে পণ্য পরিবহণ হত।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

চাপড়া শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২২ ০৭:২৯
Share:

পরিদর্শনে আধিকারিকেরা। চাপড়ায়। —নিজস্ব চিত্র।

চাপড়া হৃদয়পুর এলাকায় ভারত-বাংলাদেশের ‘নতুন দরজা’ তৈরি হওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তে নদিয়া সীমান্তে অনেকেই খুশি। দীর্ঘ দিন দুই দেশের মধ্যে এ ব্যাপারে কথাবার্তা চলছিল। অবশেষে তা বাস্তবায়িত হতে চলেছে বলে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি নদিয়ার ব্যবসায়ীরাও আশায় বুক বাঁধছেন। কৃষ্ণগঞ্জের গেদে অথবা টুঙি এলাকায় ‘স্থল বন্দর’ নিয়ে নতুন সম্ভাবনা দেখছেন তাঁরা।

Advertisement

নদিয়া জেলায় গেদে একটি রেল-স্থল বন্দর। এখানে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াতের একটি ‘এন্ট্রি-একজিট’ পয়েন্ট আছে। সেখান দিয়ে শুধু মানুষ যাতায়াত করতে পারে। পণ্য পরিবহনের জন্য বোনাপোলের পাশাপাশি দীর্ঘ দিন ধরে নদিয়ার টুঙি অথবা গেদে সীমান্তে একটি স্থল বন্দরের দাবি জানিয়ে আসছিলেন দুই দেশেরই ব্যবসায়ীরা। দুই দেশের সরকারি প্রতিনিধিদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের মধ্যে একাধিক বার বৈঠক হয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা একাধিক বার জায়গাগুলি দেখে গিয়েছেন। তবে সুনির্দিষ্ট কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে দুই দেশের তরফেই হৃদয়পুর-মুজিবনগরে নতুন একটি ‘এন্ট্রি-একজিট’ তৈরির ব্যাপারে সহমতের ভিত্তিতে সিন্ধান্ত হওয়ায় স্থল বন্দর তৈরির সম্ভবনা উজ্জ্বল হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকেই।

হৃদয়পুর-মুজিবনগর চেকপোস্ট

Advertisement

চাপড়ার হৃদয়পুর সীমান্তের উল্টো দিকে মুজিবনগর। এটি মেহেরপুর জেলার একটি ঐতিহাসিক স্থান। আগে নাম ছিল বৈদ্যনাথতলা। এখানেই বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকারের মন্ত্রী পরিষদ শপথ নেয়। সেই সরকারের রাষ্ট্রপতি ছিলেন শেখ মুজিবর রহমান আর রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। ফলে একে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী হিসাব ধরা হয়।

সেই মুজিবনগরে ‘এন্ট্রি-একজিট’ তৈরি হওয়ায় শুধুমাত্র স্থানীয় মানুষ অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হবেন তাই নয়, সেই ঐতিহাসিক স্থানটিকেও স্পর্শ করার সুযোগ পাবেন ভারতের বাসিন্দারাও। চাপড়া থেকে হৃদয়পুর ও মুজিবনগর হয়ে ঢাকা পর্যন্ত রাস্তাটির নাম রাখা হবে ‘স্বাধীনতা সড়ক’। একেবারে সীমান্ত এলাকায় ছ’শো মিটার নতুন রাস্তা তৈরি করতে হবে। নতুন ভিসা-ইমিগ্রেশন পয়েন্ট তৈরি হয়ে গেলেই দুই দেশের মানুষ অনেক সহজে ঢাকা-কলকাতা যাতায়াত করতে পারবেন। চাপড়ার তৃণমূল বিধায়ক রুকবানুর রহমান বলছেন, “এখানে ‘এন্ট্রি-একজিট’ পয়েন্ট তৈরি হলে চাপড়ার মানুষের অনেক উপকার হবে। এখানে স্থানীয় ভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে। অর্থনৈতিক ভাবে উন্নতি হবে।” চাপড়ার বিডিও দীনেশ দে বলছেন, “এ ব্যাপারে আমাদের যেমন নির্দেশ দেওয়া হবে সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে।”

টুঙি-গেদে

বাংলাদেশের সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগের এই ‘রুট’ নতুন নয়। স্বাধীনতার পরেও দীর্ঘদিন এই রাস্তা দিয়ে পণ্য পরিবহন হত। কৃষ্ণনগর থেকে যশোহর পর্যন্ত দত্ত কোম্পানির ‘লাল’ বাস চলত বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসীন্দারা। ১৯৬৫‌ সালে ভারত-পাকিস্থান যুদ্ধের সময় এই পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান, বীরভূম-হুগলি জেলার পণ্য রফতানি ও আমদানির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের সুবিধা হবে। কারণ, পেট্রাপোলের থেকে টুঙি দিয়ে গেলে দু’পাশেই রাস্তা অনেক কম হবে। তাতে পরিবহন খরচ যেমন কমবে তেমনই সময় বাঁচবে।

নদিয়ার টুঙি দিয়ে পণ্য পরিবহন করলে ঢাকা পর্যন্ত উভয় দিকে মোট প্রায় ১২০ কিলোমিটার রাস্তা কম হবে। কৃষ্ণনগর থেকে মাজদিয়া হয়ে টুঙি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের জীবননগর হয়ে কালীগঞ্জের উপর দিয়ে এই রাস্তা উঠেছে ঢাকা হাইওয়েতে। সেখান দিয়ে যাওয়া যায় ঢাকা অথবা খুলনা।

এই টুঙি সীমান্তে দুই দেশের জমির উপরে তৈরি হতে চলেছে ‘সীমান্ত হাট।’ এটি ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম ‘এন্ট্রি-একজিট পয়েন্ট’। এলাকার বাসিন্দারের দীর্ঘ দিনের দাবি, গেদেতেই স্থল বন্দরটি তৈরি করা হোক।

‘নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র যুগ্ম সম্পাদক গোকুলবিহারী সাহা বলেন, ‘‘টুঙিতে স্থলবন্দর চালু হলে এখানেও আমদানি ও রফতানি শুরু হবে। তাতে পেট্রাপোল-বেনাপোলের উপরে চাপ অনেকটাই কমবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement