তোলা হচ্ছে দেহ।— নিজস্ব চিত্র
বাদলা আকাশ মাথায় নিয়ে দিনভর তাঁকে পদ্মার পাড় থেকে তোলা যায়নি। সাবিনা বেওয়ার একটাই কথা, ‘‘আস্ত মানুষটারে কী কইর্যা খাইল রে নদী, গেল কুথায়!’’
সিভিল ডিফেন্সের নৌকা ঘাটে ভিড়লেই ছুটে গিয়েছেন, ‘‘কই রে ব্যাটা এল বুঝি কিনা!’’ বুধবার, সারাটা দিন শেষে যখন সাঁঝ নামছে, ছেলেকে তাঁর ফিরে পাননি উদ্ধারকারীরা।
‘রাক্ষসী পদ্মা’র জলে বার বারই নেমে পড়তে চাইছিলেন আরও এক জন, হানিফা বিবি। পদ্মা গিলেছে তাঁর ছেলে হান্নান মণ্ডলকে (২৬)। বিকেলে বিএসএফের নৌকা তাঁর নিথর দেহটা ফিরিয়ে আনতেই কেমন চুপ করে গেলেন হানিফা। পদ্মা ফিরিয়ে দিয়েছে তলিয়ে যাওয়া আলাউদ্দিন শেখের (৫০) দেহও। বৃষ্টির মাঝেই মাঝ-পদ্মা থেকে বৃদ্ধের দেহটা টেনে নিয়ে আসার পরে কান্নার রোলটা ফের আছড়ে পড়েছে নদী-পাড়ে।
তিন জনকে ‘খেয়ে’ও পদ্মা এ দিনও ফুঁসেছে আগের মতোই। তার উথাল-পাথাল ঢেউকে বুক চিরে ঘুরপাক খেয়েছে ইঞ্জিনের নৌকা বিএসএফের বোট। কিন্ত না আর এক নিখোঁজের দেহ মেলেনি।
পুলিশ জানিয়েছে, নদীতে প্রচণ্ড স্রোত, উদ্ধারে সমস্যা হচ্ছে। শেষ বিকেলে অবশ্য দু’টি দেহ ফিরে পাওয়ায় যেন কিঞ্চিৎ স্বস্তি পেয়েছে প্রশাসন। তাদের দাবি, অনেক সময় পদ্মার স্রোতে দেহ ভেসে যায় সীমানা ভেহে ওপার বাংলাদেশে। তখন আর দেহ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। কিন্তু ঘটনার পর থেকে প্রশাসন, বিএসএফ যে ভাবে উদ্ধারে নেমেছিল তাতে কোনও ফাঁক-ফোকর তো ছিল না। পাড়ে বসে গ্রামবাসীরা বলছেন, ‘‘ঠিক মিলবে দ্যাখেন না!’’
মঙ্গলবারের দুর্ঘটনার পিছনে ছিল অতিরিক্ত যাত্রী বহণ। সে চরিত্রে অবশ্যা ভাঁটা পড়েনি। পদ্মা ভেঙে এ দিনও নৌকা বোঝাই করে গ্রামবাসীরা চরে গিয়েছেন চাষের কাজে। সাঁতার না জানা কেউ অবশ্য নৌকায় পা রাখেননি। তবে পাশের থানা জলঙ্গির টলটলি ঘাটে এ দিনও পারাপারের চেহারাটার কোনও বদল হয়নি। ভিড়ে ঠাসা নৌকায় বিপজ্জনক ভাবে যাতায়াত হয়েছে। যদিও মাঝিদের দাবি, আমরা ওই ঘটনার কথা বলে মানুষকে বারণ করেছি কিন্তু কে কার কথা শোনে। জলঙ্গি প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ওই এলকায় এ নিয়ে কোনও নজরদারি চোখে পড়েনি। জেলা পুলিশের এক কর্তা অবশ্য বলছেন, ‘‘তদন্ত হচ্ছে, প্রয়োজনে ওই ঘাটের মালিক থেকে মাঝি কেউ পার পাবেন না। গ্রেফতার করা হবে।’’