প্রতীকী ছবি।
বছর চোদ্দোর কিশোরীর বাবা-মা দু’জনেই দৃষ্টিহীন। ভিক্ষাবৃত্তি করে কোনওরকমে সংসার চলে। কিশোরী কিন্তু দৃষ্টি রয়েছে। তাকে ঘিরেই বাবা-মায়ের যাবতীয় স্বপ্ন। অভিভাবকদের অনুপস্থিতিতে সেই নাবালিকাকে ইটভাটায় নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেছে এক প্রতিবেশী।
শান্তিপুরের বাইগাছি-তে গত বুধবার অর্থাৎ ১ অগস্ট এই ঘটনা ঘটে। কিশোরী তা বাড়িতে জানায় মঙ্গলবার। শান্তিপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন অভিভাবকেরা। অভিযুক্ত দুলাল বিশ্বাসকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে পকসো আইনে মামলা রুজু হয়েছে। নির্যাতিতা নাবালিকার মেডিকেল পরীক্ষা করা হয়েছে। পুলিশকে ওই কিশোরী জানিয়েছে, বাবা-মা চোখে দেখতে পান না, সেই সুযোগ নিয়ে যখন-তখন তাদের বাড়ি এসে তার গায়ে হাত দিত দুলাল। অসভ্যতা করত। বিয়ে করার কথা বলত। শনিবার বেড়াতে নিয়ে যাবে বলে দুলাল তাকে ইটভাটায় ডেকে নিয়ে যায়, তার পর সেখানে ধর্ষণ করে। কাউকে বললে মেরে ফেলবে বলে হুমকিও দেয়। সেই ভয়ে সে কয়েকদিন মুখ বন্ধ করে ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার তার পেটে অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়। তখন সে বাবা-মাকে সব জানায়।
ঘটনার কথা জানাজানি হতেই পাড়ার লোক ক্ষোভে ফেটে পড়েন। অভিভাবকদের অসহায়তার সুযোগে নাবালিকার উপর এই ভাবে অত্যাচার চালানোয় কড়া শাস্তি দাবি করেছেন তাঁরা। স্তম্ভিত অভিযুক্ত দুলালের পরিবারও। সে নিজে লেদ মিস্ত্রি। বাড়িতে স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে রয়েছে। পরিবার সূত্রের খবর, তাঁরা ভাবতেন, অসহায় পরিবারকে সাহায্য করতে সে নাবালিকার বাড়ি যাচ্ছে। কিন্তু তার মনে যে এই ছিল ভাবতে পারেননি। কার্যত বাকরুদ্ধ হয়ে যান তার স্ত্রী।
নাবালিকার বাবা-মা জানিয়েছেন, তাঁদের চোখের দৃষ্টি না-থাকায় মেয়েকে দোকানবাজারে নিয়ে যাওয়া, ঘুরতে বা ঠাকুর দেখতে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে দুলালের উপর নির্ভর করতেন। তার এই পরিণতি কল্পনার অতীত ছিল। নির্যাতিতার মা বলেন, “বিভিন্ন কাজে দুলালের উপরেই ভরসা করতাম আমরা। এমন সর্বনাশ করবে ভাবিনি। তবে, আমার স্বামী কিছুদিন আগেই বলেছিলেন, দুলাল বোধহয় মেয়ের গায়ে হাত দেয়। ওকে বাড়িতে আসতে বারণ করেছিলাম।” নির্যাতিতার বাবার কথায়, “আমি চোখে সামান্য দেখতে পাই। তাতে মনে হয়েছিল, দুলাল মেয়ের গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা করছে। সন্দেহ হওয়ায় ওকে আসতে বারন করে দিই। তার পরেই ও এই কাণ্ড ঘটাল। মেয়েটার জীবন নষ্ট করে দিল।”