নিজেদের মধ্যে যতই আকচাআকচি থাক, কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রকে পাখির চোখ করতে চাইছে বিজেপি।
বিজেপির আশা, লোকসভা নির্বাচনে কৃষ্ণনগর (উত্তর), কৃষ্ণনগর (দক্ষিণ), নাকাশিপাড়া ও তেহট্ট বিধানসভা এলাকায় তারা ভাল ফল করবে। পঞ্চায়েত ভোটে দু’টি জেলা পরিষদ আসন ছাড়াও বেশ কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েতও তারা দখল করেছে। তার জন্য জোরদার হোমওয়ার্কও শুরু হয়ে গিয়েছে।
পঞ্চায়েত ভোটের পরে কৃষ্ণনগরে সভা করেন মুকুল রায়, এক সময়ে জেলা তৃণমূলের পর্যবেক্ষক হিসেবে যিনি নদিয়াকে হাতের তালুর মতো চিনতেন। ক’দিন আগে করিমপুরে সভা করে গিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও।
তৃণমূলও যে বিষয়টিকে হালকা ভাবে নিচ্ছে না, তার প্রমাণ দুই জায়গাতেই পাল্টা সভা করেছে তারা। কৃষ্ণনগরে একই জায়গায় মঞ্চ বেঁধে সভা করেছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, শুভেন্দু অভিকারীর মতো তাবড় নেতারা। শনিবার পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এসে সভা করলেন। বিজেপিকে আক্রমণের পাশাপাশি বারবার তুললেন উন্নয়নের কথা। রাজ্যের মধ্যে করিমপুরেই অন্যতম ভাল কাজ হয়েছে বলে দাবি করে আশ্বাস দিলেন আরও উন্নয়নের।
দুই শিবিরের এই তৎপরতার যথেষ্ট কারণও আছে।
২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে যেখানে গোটা নদিয়া জেলায় বিজেপি মাত্র ৮৭টি আসন জিতেছিল, সেখানে এ বার শুধু কৃষ্ণনগর লোকসভা এলাকাতেই তাদের সমর্থিত প্রার্থী-সহ মোট ৫৫৬টি আসনে তারা জিতেছে বলে বিজেপির দাবি। গত বার গোটা জেলায় পঞ্চায়েত সমিতির মাত্র তিনটি আসন পেয়েছিল তারা। এ বার কৃষ্ণনগর লোকসভা এলাকাতেই তাদের সমর্থিত নির্দল মিলিয়ে জিতেছে ৫৫টি আসনে। এই প্রথম জেলা পরিষদেও দু’টি আসন জিতেছে তারা। সেই দু’টিই এই লোকসভা কেন্দ্রে পড়ছে।
বিজেপির নদিয়া (উত্তর) সাংগঠনিক জেলার সভাপতি মহাদেব ঘোষের দাবি, “এই কেন্দ্র আমরা দখল করবই। এখন তো রাজ্য নেতারা আসছেন। কিছু দিন পর থেকে কেন্ত্রীয় নেতারাও চষে বেড়াবেন।” কিছু দিনের মধ্যেই কোনও কেন্দ্রীয় নেতাকে সঙ্গে নিয়ে মুকুল রায় ফের সভা করতে পারেন বলেও তিনি জানান।
তবে তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত প্রায় মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে বলেন, “মোদী-মোহন ভাগবতদের অস্তিত্বই সঙ্কটে। সেখানে দলের উচ্ছিষ্টদের নিয়ে ভাবব কোন দুঃখে?” তাঁর পাল্টা দাবি, “বুথভিত্তিক ফলই বলছে, পঞ্চায়েত ভোটে আমরা নাকাশিপাড়া, তেহট্ট, কৃষ্ণনগর (দক্ষিণ) কেন্দ্রে গত বিধানসভা ভোটের চেয়েও ভাল করেছি।”
সংখ্যালঘু ভোটও পুরোপুরি তাঁদের সঙ্গে আছে বলেও তৃণমূল নেতারা মনে করছেন। তা হলে পাল্টা সভা করতে হচ্ছে কেন? গৌরীশঙ্কর বলেন, “রাজনৈতিক হিংসা আর ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িকতার মোকাবিলা করতে হলে পাল্টা সভা করতেই হয়।”
কংগ্রেস আর বামেদের কার্যত সাইডলাইনে রেখে দুই পক্ষই যে সম্মুখসমরে নামতে তৈরি হচ্ছে, তাতে সন্দেহ নেই।