পারল না তৃণমূল কিস্তিমাত বিজেপির

গোষ্ঠী কোন্দল প্রকট ভাবে সামনে আসায় অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কারামন্ত্রী অবশ্য দাবি করেন, “বিজেপির কাছে আমরা সমর্থন চাইনি। ভিতরে কে কাকে সমর্থন করল আমরা কী করে বুঝব?”

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৩৪
Share:

পোড়াগাছায় জয়ী বিজেপি। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

চেষ্টা করেও ঘর বাঁচাতে পারল না তৃণমূল। নির্দলদের নিজের দিকে টেনে পোড়াগাছা পঞ্চায়েতের দখল নিল বিজেপি। ভাতজাংলা পঞ্চায়েতে আবার নিজেদের কোন্দলে ভাগ হয়ে যাওয়া তৃণমূলের একটি অংশ হাত ধরেছে বিজেপির।

Advertisement

কৃষ্ণনগর ১ ব্লকের পোড়াগাছা পঞ্চায়েতে লড়াইটা ছিল হাড্ডাহাড্ডি। ১৮টি আসনের মধ্যে তৃণমূল আটটি, বিজেপি আটটি ও নির্দল দু’টি আসন পায়। ফলে নির্দলেরা যার দিকে যাবেন, তারাই বোর্ড পাবে। দুই নির্দল প্রার্থীকে নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে যায়। এই নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হয়। আগাম আঁচ করে বুধবার সকাল থেকেই প্রচুর পুলিশ মোতায়ন ছিল সেখানে। এরই মধ্যে তৃণমূলের অঙ্ক গুলিয়ে দিয়ে বিজেপি বাজিমাত করে। দুই নির্দল সদস্যের সমর্থন নিয়ে বোর্ড গড়ে তারা। প্রধান হন আদ্যনাথ সরকার, উপপ্রধান মীরা মালাকার।

এই এলাকাতেই পৈতৃক বাড়ি কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের। দিন কয়েক আগেই তিনি ভাতজাংলার নির্দল সদস্যের বাড়ি গিয়ে ক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন। তিনি বলেন, “এটা আমার বিধানসভা এলাকার মধ্যে পড়ে না। স্থানীয় বিধায়ক কাউকে টেনে এনে বোর্ড গঠন করতে চাননি। পরে দেখুন কী হয়।’’ আর বিজেপির উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মহাদেব সরকার বলছেন, “অনেক রকম ভাবেই তো চেষ্টা করল তৃণমূল। পারল কী?”

Advertisement

ওই ব্লকেরই ভাতজাংলা গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েও ঐক্য ধরে রাখতে পারল না। এই পঞ্চায়েতের মোট আসন ২৭টি। তৃণমূল জিতেছে ১৪টি, বিজেপি আটটি, সিপিএম দু’টি, নির্দল তিনটি। কিন্তু কে প্রধান হবেন তা নিয়ে ঘোঁট হতে থাকে তৃণমূলের অন্দরে। এক দিকে প্রাক্তন প্রধান কমল ঘোষের ছেলে কৌশিক ঘোষ, অন্য দিকে কারামন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ স্বপন ঘোষ। এই নিয়েই দলের সদস্যেরা আড়াআড়ি ভাগ হয়ে যান।

আর সেই সুযোগ কাজে লাগাতে আসরে নামে বিজেপি। তাদের দাবি, উভয় পক্ষই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছিল। এর মধ্যে আবার বিজেপির দু’টি গোষ্ঠী তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীকে সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে বিজেপির সমর্থন বোর্ড গড়া হোক, কারামন্ত্রী সেটা চাননি। তৃণমূল সূত্রের খবর, এ দিন সকালেও মন্ত্রী কৌশিক ঘোষদের ডেকে প্রস্তাব দেন যাতে স্বপন ও কৌশিক আড়াই বছর করে প্রধান থাকবেন। মন্ত্রীর সামনে তা মেনে নিলেও বোর্ড গঠনের সময় আগের অবস্থানে ফিরে স্বপন ঘোষের বিরুদ্ধে কৌশিক প্রধান পদে দাঁড়িয়ে পড়েন। তখনই ভোটাভুটি হয়।

ভোটাভুটিতে প্রধান পদে স্বপন ঘোষ ও উপপ্রধান পদে শম্পা খাতুন ১৫টি করে ভোট পান। আর কৌশিক ঘোষরা পান ১১টি করে ভোট। পরে বাইরে বেরিয়ে এসে স্বপন দাবি করেন, তৃণমূলের আট আর বিজেপির সাত জনকে নিয়েই তিনি ১৫ ভোট জোগাড় করেছেন। তবে কৌশিকদের দাবি, তাঁদের সঙ্গে তৃণমূলের ছ’জন, তিন নির্দল, বিজেপি ও সিপিএমের এক জন করে ছিলেন। সিপিএমের এক মহিলা সদস্য উপস্থিত থাকলেও ভোটদানে বিরত থাকেন।

দলের এই গোষ্ঠী কোন্দল প্রকট ভাবে সামনে আসায় অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কারামন্ত্রী অবশ্য দাবি করেন, “বিজেপির কাছে আমরা সমর্থন চাইনি। ভিতরে কে কাকে সমর্থন করল আমরা কী করে বুঝব?” বিজেপির মহাদেব সরকার বলেন, “তৃণমূলের বিভাজনকে ক্রমশ বাড়ছে। খেলা সবে শুরু!”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement