রাজ্যে শাসক দলের বিরুদ্ধে বিজেপির অবস্থান ঠিক কী? তৃণমূলের প্রতি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নরম মনোভাব কেন? নেতা-কর্মীদের থেকে এমন চোখা চোখা প্রশ্নের মুখে পড়ে বৃহস্পতিবার কার্যত জেরবার হলেন কেন্দ্রের শিল্পবাণিজ্য মন্ত্রী তথা বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত নেতা নির্মলা সীতারামন। কৃষ্ণনগরে এ দিন বিজেপির দলীয় সভায় নদিয়া-মুর্শিদাবাদের ব্লক ও জেলা নেতাদের একাংশের এমন সব প্রশ্নের সামনে অস্বস্তিতে পড়েন নির্মলাদেবী এবং রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। বিজেপি সূত্রে খবর, এই নেতাদের উপস্থিতিতে জেলার নেতারা সারদা প্রশ্নে সিবিআই-এর ভূমিকা, তৃণমূলের সন্ত্রাস, পুলিশি হয়রানি ও কর্মীদের মিথ্যে মামলায় ফাঁসানোর মতো একের পর এক প্রসঙ্গ তুলে আনেন।
উত্তরে নির্মলা যা বললেন, তাতে তেমন ঝাঁঝ খুঁজে পেলেন না বিজেপি-র দুই জেলার নেতারা। সভা শেষে ব্লক স্তরের এক নেতার কথায়, ‘‘নির্মলাদেবীর কাছ থেকে তৃণমূলের প্রতি আরও আক্রমণাত্মক কথা আশা করেছিলাম। তিনি কেবল কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রাখতে বলে গেলেন। নতুন কী বললেন বুঝলাম না।’’ অনেকেরই আক্ষেপ, তৃণমূল-বিরোধিতার কথা কেন্দ্রীয় নেত্রী সেইটুকুই বললেন, যা না বললে নয়।
সম্প্রতি হাওড়ার শরৎ সদনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে অমিত শাহ রাজ্য বিজেপিকে ২০১৯-এর ভোটকে পাখির চোখ করতে বলেছিলেন। তারপর অরুণ জেটলি একটি অনুষ্ঠানে এসে বলে গিয়েছেন, এ রাজ্যে তৃণমূল আসার পর উদ্যোগপতিরা ফের বিনিয়োগে উৎসাহ দেখাচ্ছেন। এই প্রসঙ্গ তুলে এক ব্লক নেতা প্রশ্ন করেন, ‘‘সাধারণ মানুষ জানতে চাইছেন, তা হলে আমরা কি রাজ্যের শাসক দলের সঙ্গে সমঝোতার পথে যাচ্ছি?’’
দলীয় সূত্রে খবর, এ দিন সভাতে একাধিক নেতা প্রশ্ন তোলেন, পুলিশ একের পর এক মিথ্যে মামলায় নেতাকর্মীদের ফাঁসিয়ে দিলেও তাঁদের পাশে রাজ্য বা কেন্দ্রের নেতারা কতটা থাকছেন? রাজ্য বিজেপির বিশেষ পর্যবেক্ষকের দায়িত্বভার পেয়ে রাজ্যের নানা প্রান্তে ইতিমধ্যেই সাংগঠনিক সভা করেছেন নির্মলাদেবী। গত বুধবারই খড়্গপুরের মালঞ্চে কমিউনিটি হলে দলের মহাসম্পর্ক অভিযানে যোগ দেন তিনি। কিন্তু সেখানে এমন তীব্র প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়নি তাঁকে।
দলীয় সূত্রে খবর, এ দিন এক বুথ স্তরের নেতা সভায় বলেন, ‘‘দলের তিনটি ভূমিকায় আমরা হতাশ। এক, সুব্রত ঠাকুরকে প্রার্থী করা। দুই, সারদা তদন্তে সিবিআই-এর ভূমিকা। তিন, দুধকুমারের সম্পর্কে দলের মনোভাব। সর্বোপরি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মাঝেমধ্যে তৃণমূল সরকারের প্রশংসা করা কর্মীদের হতাশ করছে।’’ প্রসঙ্গত, এ দিন জেলাস্তরের নেতারা এই প্রশ্নগুলি তুললেও, রাজ্যস্তরের বিজেপি নেতারাও এ প্রশ্নগুলি দলের অন্দরে আগেই তুলেছেন।
এ দিন নির্মলাদেবী সংযত ভাবেই দলের নেতাদের প্রশ্নের উত্তর দেন। তিনি সভায় বলেন, তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপি-র সমঝোতার সম্ভাবনা নেই। তাঁর ব্যাখ্যা, অমিত শাহ তাঁর ভাষণে ২০১৯-এর লোকসভার লড়াইয়ের কথা বলতে চেয়েছিলেন। বিজেপি-র সভাপতির সে কথার অপব্যাখ্যা করা হচ্ছে বলেও তাঁর দাবি। সংবাদমাধ্যমে তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির সমঝোতার বিষয়ে যা লেখা হচ্ছে, তাকে গুরুত্ব না দিতে অনুরোধ করেন। পশ্চিমবঙ্গ যে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপরেই ভরসা রাখতে হবে, তা-ও বলেন নির্মলা।
তবে, দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের গলাতে এ দিন শোনা যায় আত্মসমালোচনার সুর। তিনি দলের সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, সারদা-কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী জেলে গেলেও বিজেপি ক্ষমতায় আসতে পারবে না। কারণ ক্ষমতায় আসতে গেলে সংগঠন মজবুত হওয়া জরুরি। রাহুল জানান, পুজোর পরে বিজেপি পুরোদস্তুর আন্দোলনের পথে যাবে।