পাশাপাশি: একই দেওয়ালে সিপিএম, তৃণমূল। কালীরহাটে। নিজস্ব চিত্র
একটা সময় ছিল রস আর রসদ—এই দুইয়েরই জোগান দিত ভোটের দেওয়াল বা পাঁচিল।
চুনকাম করা ইটের দেওয়ালে লেখা মুচমুচে নানা ছড়া মুখে চিলতে হাসি ফোটাত অনেকেরই। আবার এই ভোটের বাজারে দেওয়াল লিখে দু’পয়সা বাড়তি রোজগারও করতেন কেউ কেউ। দিন বদলেছে। ইদানীং প্রচার আর শুধু দেওয়াল-নির্ভর নয়। রাজনৈতিক দলগুলি ভোটে দেওয়ালের পাশাপাশি ‘ওয়াল’কেও প্রচারের হাতিয়ার করে তুলেছে।
দলগুলি দাবি করেছে, তড়িঘড়ি নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হওয়ায় দেওয়াল-লিখনে তেমন মনোযোগ দেওয়া যায়নি। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ওয়াল’-এ ইতিমধ্যে জমে উঠেছে নির্বাচনের লড়াই। দলের প্রার্থীদের হয়ে ‘ফেসবুক’ জুড়ে প্রচার শুরু হয়ে গিয়েছে। শাসকদল থেকে শুরু করে সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেস— সব দলই মনোনয়নকে কেন্দ্র যে সব ঘটনা ঘটছে তা যেমন সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরছে, তেমনি প্রার্থীর সমর্থনেও কাজে লাগানো হচ্ছে ওয়াল।
যেমন মুর্শিদাবাদ জেলা সিপিএম ‘ফেসবুক পেজ’-এ বলেছে, ‘অসহ্য দিন, বদলে দিন’। সিপিএমের সাংসদ মহম্মদ সেলিমের ছবি দিয়ে পঞ্চায়েত ভোটের প্রচার করা হয়েছে। তৃণমূলও একই ভাবে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরে ‘এগিয়ে বাংলা’র প্রচার করছে। তাতে ছড়া কেটে বলা হয়েছে, ‘কংগ্রেস হারিয়ে গিয়েছে, সিপিএম গর্তে ঢুকে গিয়েছে, বিজেপিতে জনগণের এলার্জি, উন্নয়নে শুধুই মমতা ব্যানার্জি’। আবার কোথাও বলা হয়েছে, ‘ঝকঝকে রাস্তা, চকচকে আলো, মমতাদিদির উন্নয়নে সবারই হচ্ছে ভাল’।
মুর্শিদাবাদ জেলা যুব কংগ্রেস প্রচার করছে, ‘২রা মে আসছে দিন, মুর্শিদাবাদে উন্নয়নে কংগ্রেসকে ভোট দিন। অনেক হল লুঠের রাজ, এ বার হবে জনগণের কাজ’। আবার নদিয়ায় বিজেপি ফেসবুকে লিখেছে ‘কংগ্রেসের হাত কাটা অংশ, পদ্ম এসে করেছে ওদের ধ্বংস, হাতুড়ি আর কাস্তে তারা, পদ্ম করল দেশ ছাড়া, তৃণমূলের পালা এ বার, পদ্ম এদের করবে সাবাড়’। বিজেপির নদিয়ার চাপড়ায় ফেসবুক পেজে বলা হয়েছে, ‘গড়তে বাংলা, আনতে সুদিন, বিজেপিকে ভোট দিন’।
দেওয়াল ও ওয়ালের প্রচার নিয়ে কী বলছে রাজনৈতিক দলগুলি?
প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাস জানিয়েছেন, অল্প সময়ের মধ্যে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা, মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। তাই সবে দেওয়ালে রঙের পোঁচ পড়েছে। তিনি বলেন, “সোশ্যাল মিডিয়ায় সহজেই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়। তাই প্রচারের হাতিয়ার হিসেবে সেগুলোকে ব্যবহার করা হচ্ছে।” সিপিএমের নদিয়া জেলা কমিটির সদস্য সুমিত বিশ্বাস বলছেন, “সোশ্যাল মিডিয়ায় অল্প সময়ে বেশি প্রচার হয় বলে সেখানেও লাগাতর প্রচার চালানো হচ্ছে।” বিজেপির নদিয়া উত্তরের সভাপতি মহাদেব সরকার বলছেন, “নানা সোশ্যাল মিডিয়ায় এখনকার প্রজন্মের আনাগোনা বেশি। তাই তার গুরুত্ব হেলাফেলার নয়। দেওয়াল লিখন হবেই। মনোনয়ন পর্ব মিটলেই দেওয়াল লিখনে জোর দেওয়া হবে।” মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র অশোক দাস বলছেন, “আমরা দেওয়াল-ওয়াল সর্বত্রই প্রচার শুরু করেছি। মনোনয়নের পরে দেওয়াল লিখনের উপর জোর দেওয়া হবে।’’