একা শাসকে রক্ষা নেই, পুলিশ দোসর — মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ লগ্নে এসে এমনটাই বলছেন বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা। আজ, শনিবারই পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। মনোনয়ন পর্বে সন্ত্রাসের যে চেহারা দেখা গিয়েছিল, প্রত্যাহার পর্বেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
সাগরদিঘিতে পুলিশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছিল, তা-ই এখন ফের উঠেছে ফরাক্কায়। কংগ্রেস বিধায়ক মইনুল হক এ দিন অভিযোগ করেছেন, মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের প্রার্থী নার্গিস খাতুন মনোনয়ন প্রত্যাহারে রাজি না হওয়ায় মিথ্যা মামলায় তাঁর স্বামী জামিরুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত দু’দিনে বিস্ফোরণের ভুয়ো মামলায় তাঁদের অন্তত ৩০ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে। এর মধ্যে দশ জন পঞ্চায়েতে প্রার্থী বা প্রার্থীর স্বামী।
সিপিএম নেতা আবুল হাসনাত খানেরও অভিযোগ, বল্লালপুর ও অর্জুনপুরে দু’টি বোমার মামলায় দুই প্রার্থী একবর শেখ ও মুরসেলিম শেখকে জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ফরাক্কা থানার আইসি উদয়শঙ্কর ঘোষ অবশ্য দাবি করেছেন, নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই এই ধরপাকড় হচ্ছে। জামিরুলের বিরুদ্ধেও বোমা মারার নির্দিষ্ট নালিশ ছিল। শুক্রবার জঙ্গিপুর আদালতে তোলা হলে তাঁকে তিন দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ দিন সকালে চাকদহে রাউতাড়ি বাজার থেকে নদিয়া জেলা পরিষদের ৪২ নম্বর আসনের সিপিএম প্রার্থী অনিমেষ ঘোষকে তুলে নিয়ে যায় মোটর বাইকে আসা যুবকেরা। কল্যাণী মহকুমাশাসকের দফতরে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে তিনি বিকেলে বাড়ি ফেরেন। রঘুনাথপুর-হিজুলি ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের চার সিপিএম প্রার্থীর বাড়িতেও হানা দিয়েছিল কয়েক জন। হুমকির জেরে দেবগ্রাম পঞ্চায়েতের এক সিপিএম প্রার্থী বাড়ি ছেড়ে পালান। মনোনয়ন ফিরিয়ে নিয়েছেন তিনি। এক বিজেপি প্রার্থীও সপরিবার ঘরছাড়া। দক্ষিণ জেলা বিজেপি সভাপতি জগন্নাথ সরকারের দাবি, “তৃণমূলের ভয়ে আমাদের অনেকেই মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।” জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত অবশ্য বলেন, “আমরা কেন ভয় দেখাতে যাব? নিজেরাই মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিচ্ছে।”
বৃহস্পতিবার হরিণঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির বিজেপি প্রার্থী রাধিকারানি মণ্ডল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। সেখানে অর্ধেক আসনেই বিরোধী প্রার্থী নেই। ব্লকের আটটি গ্রাম পঞ্চায়েতেও বিরোধীরা অনেকে মনোনয়ন তুলে নিয়েছেন। হুমকি দিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করানোর অভিযোগ রয়েছে যথারীতি।
জেলা কংগ্রেস সভাপতি অসীম সাহার বক্তব্য, যে ভাবে বাড়ি-বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে তাতে বিপদ বুঝেই ব্লক নেতারা হরিণঘাটায় ভোট প্রক্রিয়া থেকে সরে এসেছেন। ব্লকের এক বাম নেতার দাবি, ‘‘এখনও আমাদের শক্তি রয়েছে। কিন্তু প্রার্থীই তো দিতে দিল না, ভোটে লড়ব কী করে?’’ ব্লক তৃণমূল সভাপতি, জেলা পরিষদের প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ চঞ্চল দেবনাথ অবশ্য দাবি করেন, ‘‘নিশ্চিত হার জেনেই অনেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করছেন।’’