রুদ্রদেবের স্নানযাত্রা। শুক্রবার কান্দিতে। নিজস্ব চিত্র।
গাজন উৎসবকে কেন্দ্র করে কান্দিতে রুদ্রদেবের স্নানযাত্রায় মেতে উঠেছেন কান্দির বাসিন্দারা। শুক্রবার কান্দি পুরসভা এলাকার রূপপুরের রুদ্রদেবের মন্দির থেকে রুদ্রদেবের স্নানযাত্রা শুরু হয়। রূপপুরের মন্দির থেকে বাবাকে পালকিতে চাপিয়ে কান্দির হোমতলায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই স্নান হয়।
রুদ্রদেবের স্নানযাত্রাকে কেন্দ্র করে রুদ্রদেবের টানা ১১ দিন ধরে হোম উৎসব হয়। শুরু হয় ১৯ চৈত্র। সে দিন থেকেই রুদ্রদেবের মধু ভাঙা ভক্ত হয়। মৌমাছির চাক ভেঙে ভক্তরা রুদ্রদেবের মন্দিরে উপাসনা করেন। পরে আসেন কাঁটাভাঙা ভক্তরা, যাঁরা বেল ও কুলের কাঁটা নিয়ে রুদ্রদেবের উপাসনা করেন। সিদ্ধিভাঙা ভক্ত ও গোয়াল ভক্ত হয়। ধাপে ধাপে রুদ্রদেবের ভক্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এবং স্নানযাত্রার আগের রাত রুদ্রদেবের চোরা জাগরণ হয়। সে দিন মন্দির চত্বরে আতসবাজির মাধ্যমে ওই রাতটি পালন করার সঙ্গে ভক্তদের বিশেষ গান হয়। রাতভর ওই ভাবেই বাবার উপাসনা করার পর সকালে রুদ্রদেবকে মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে বের করে পালকিতে চাপিয়ে স্নানযাত্রার উদ্দেশে নিয়ে যান ভক্তরা।
রূপপুর থেকে বেরিয়ে বিজয়নগর, শিবরাম্বাটি হয়ে রুদ্রদেবের পালকি এসে পৌঁছয় কান্দির বিশ্রামতলায়। স্নানযাত্রা পথে বাবা রুদ্রদেব বিশ্রাম নেওয়ার কারণেই ওই এলাকায় নাম হয়েছে বিশ্রামতলা। সেখানে গড়ে উঠেছে মন্দির। ওই মন্দিরে বাবা কিছু ক্ষণের জন্য বিশ্রাম নেওয়ার পর ফের পালকিতে চেপে রুদ্রদেব যায় হোমতলায়। ওই যাত্রা পথে এলাকার বাসিন্দারা রুদ্রদেবকে দুধ, গঙ্গাজল ও ঘি মিশ্রিত জলে স্নান করান।
মাত্র দেড় কিমি ওই স্নানযাত্রার রাস্তা অতিক্রম করে হোম তলায় পৌঁছতে সময় লেগে যায় প্রায় চার ঘণ্টা। ওই মন্দিরের সেবায়েতদের কথায় ১৩০১ বঙ্গাব্দে কামদেব ব্রহ্মচারী নামে এক জন পরিব্রাজক সন্ন্যাসী বাবা রুদ্রদেবের মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁকে হোমতলায় কানা ময়ূরাক্ষী নদীর ধারে সমাধিস্থ করা হয়েছিল। কথিত আছে স্নানযাত্রায় বেরিয়ে বিশ্রামতলায় বিশ্রাম নেওয়ার পর ওই সন্ন্যাসীর সমাধির উপর বাবাকে প্রথম নামানো হবে। সেই নিয়মের আজও কোনও পরিবর্তন হয়নি। সেখানে রুদ্রদেবকে স্নান করানোর পর হোমতলার মন্দিরে বাবাকে রাখা হয়। সেখানে পুজো করার পর রুদ্রদেবকে যজ্ঞের আগুনে বাবাকে ছেঁকা দেয় ভক্তরা। তারপর রুদ্রদেবের স্নান করানো হয়, যার নাম দাদুরঘাটা। ওই মন্দিরের প্রবীণ সেবায়েত অধীর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দীর্ঘ দিন ধরেই ওই একই নিয়মে রুদ্রদেবের স্নানযাত্রা হয়ে আসছে। নিয়মের কোনও পরিবর্তন হয়নি। স্নানযাত্রার পর আগামীকাল রুদ্রদেবকে ফের পালকিতে চাপিয়ে বাবার মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হবে।”
ওই স্নানযাত্রাকে কেন্দ্র করে কান্দি থানার আইসি মৃণাল সিনহা ও পুরসভার পুরপ্রধান জয়দেব ঘটক-সহ একাধিক পুলিশ কর্মী ও পুরসভার কাউন্সিলররা সারাক্ষণ সঙ্গেই ছিলেন। পুরপ্রধান জয়দেব বলেন, “রুদ্রদেবের স্নানযাত্রা কান্দিবাসীর কাছে আবেগ। শুধু কান্দি পুরসভা নয় বহু গ্রামের বাসিন্দা ওই দিন বাবার উপাসনা করেন এবং স্নানযাত্রায় অংশ গ্রহণ করেন।”