গা-ছাড়া বহরমপুর, আঁটোসাঁটো কৃষ্ণনগর

সপ্তাহ দুই আগে, ফোনে-বিভোর এক মহিলা কনস্টেবলের ছবি ফেস বুকে পোস্ট করে, কৃষ্ণনগরের ট্রাফিক শিরদাঁড়ায় তিনি যে শিহরণ বইয়ে দিয়েছেন এ দিনের বদলে যাওয়া ছবিটা সে কথাই বলছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:১৮
Share:

শুক্রবারের কাগজে কৃষ্ণনগর শহরের এই ছবি প্রকাশের পরেই নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ-প্রশাসন। —ফাইল চিত্র।

ঘুম যে একেবারে ভেঙে গিয়েছে, বলা যাচ্ছে না। তবে নিশ্চিত নিদ্রায় যে একটা টোকা পড়েছে, শীতের দুপুর জুড়ে কৃষ্ণনগরের ব্যস্ত মোড়ে পা রাখলে আঁচ পাওয়া গিয়েছে শুক্রবার।

Advertisement

মুখে রুমাল, মাথায় হেলমেট, সক্রিয় চেহারার মহিলা আর পুরুষ কনস্টেবলদের হাঁটাচলায় যেন ফিরে এসেছে একটা স্পষ্ট সর্তকতা। যা নিয়ে শহরের আনাচকানাচের জটলায় ঘুরে ফিরে উঠছে— ‘কলেজ পড়ুয়া মেয়েটার দাপট দেখেছ!’

সপ্তাহ দুই আগে, ফোনে-বিভোর এক মহিলা কনস্টেবলের ছবি ফেস বুকে পোস্ট করে, কৃষ্ণনগরের ট্রাফিক শিরদাঁড়ায় তিনি যে শিহরণ বইয়ে দিয়েছেন এ দিনের বদলে যাওয়া ছবিটা সে কথাই বলছে। তবে ঘটনাটা গড়িয়ে ছিল অনেক দূর। কেন এমন ছবি দিলেন? পরের দিনই তার ওপর চড়াও হয়ে চড় কষিয়ে যান ওই কনস্টেবল। বৃহস্পতিবার খবরটা জানাজানি হতেই হইচই পড়েছিল। ক্লোজ করা হয়েছিল ওই কনস্টেবলকে। শুক্রবার থেকেই তাই বদল যেতে শুরু করেছে ছবিটা।

Advertisement

নিষ্ক্রিয়। কাজের সময়ে মোবাইল হাতে মগ্ন ট্রাফিক পুলিশ। শুক্রবার বহরমপুরে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

তবে, তা নিয়ে অবশ্য হেলদোল নেই পড়শি জেলা সদরে, ভাবখানা, ‘ও তো অন্য জেলার ঘটনা’। বহরমপুরের রাস্তাঘাটে তাই এ দিনও দু’পা হাঁটলেই চোখে এড়াচ্ছে না— মোবাইলে মত্ত কনস্টেবল কিংবা ঠেস দেওয়া স্কুটির উপরে খোশ গল্পে মেতে থাকা কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীদের। পুলিশ সুপারের দফতরের সামনেই মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা গিয়েছে এক মহিলা ট্রাফিক পুলি‌শ কর্মীকে, হাসতে হাসতে বলছেন, ‘ডিউটি শেষ হলেই যাচ্ছি...’। রবীন্দ্রসদনের পিছনে শহিদ ক্ষুদিরাম মূর্তির ছায়ায় গল্পে মেতে থাকতেও দেখা গিয়েছে দুই কর্মীকে। হেলমেটহীন মোটরবাইক, মাল বোঝাই ভ্যানের হুটোপুটি আর থেকে থেকে যানজটে স্তব্ধ হয়ে পড়া রাস্তা নিয়ে ভাবার সময় কোথায়!

এ দিন বহরমপুরের সমবায়িকা মোড়ে কর্তব্যরত এক ট্রাফিক কর্মীকে দেখা গেল অনর্গল ফোনে কথা বলে যেতে। কৃষ্ণনাথ কলেজ স্কুলের মোড়ে আবার গল্প করতে দেখা গেল কর্তব্যরত দুই মহিলা ট্রাফিক কর্মীকে। ছবিটা প্রায় একই রকম ভ্রূক্ষেপহীন বাণীবাগান মোড়েও।

সক্রিয়। শহরের রাস্তায় হেলমেটহীন বাইক আরোহীদের পথ আটকাচ্ছেন ট্রাফিক কনসেটবল। শুক্রবার কৃষ্ণনগরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

জেলা পুলিশের কর্তারা অবশ্য এ নিয়ে ভাবার কারণ পাচ্ছেন না এখনও। তবে, নদিয়ার পুলিশ অবশ্য ইতিমধ্যে কর্তব্যরত অবস্থায় ট্রাফিক পুলিশের ফোন করার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া বলেন, “ট্রাফিক আইন ভাঙলে বা অন্য কোন আপরাধ করলে সকলের বিরুদ্ধেই আইনে যা বলা আছে সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে।’’

তবে, টনক যে নড়েছে পুলিশের খতিয়ানই তাই বলছে— বৃহস্পতিবার সারা দিনে কৃষ্ণনগর শহরে বিভিন্ন মোড়ে হেলমেট না পরার দায়ে ধরা হয়েছিল সাকুল্যে ন’জনকে। আর শুক্রবার? সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ৩৫।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement