জওহরলাল নেহরু আরবান রিনিউয়াল মিশনের অধীনে বছর চার আগে কল্যাণীতে গরিব মানুষের জন্য ঘর তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছিল পুরসভা। এত দিনে প্রায় সাড়ে তিন হাজার উপভোক্তার সিংহভাগই পুরো টাকা পাননি। নির্মীয়মাণ ঘরের পাশেই কেউ ত্রিপল টাঙিয়ে আছেন। কেউ বা আধা-তৈরি বাড়িতে থাকছেন। তাঁদের অভিযোগ, পুরকর্তাদের জানিয়ে ফল হয়নি। পুরসভা বারবার বকেয়া টাকা মেটানোর আশ্বাসই দিয়েছে কেবল।
পুরসভা সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের গোড়ায় বস্তিবাসীর জন্য ঘর তৈরির ব্যবস্থা হয়। কেন্দ্রীয় প্রকল্পের মাধ্যমে ৩২৩ বর্গফুটের বাড়ি পেতে উপভোক্তাকে এককালীন বা কিস্তিতে ২৬,৪৫৪ টাকা দিতে হয়। সরকারের দেওয়ার কথা ১,৪৭,২৭১ টাকা। উপভোক্তারা নিজেদের টাকা জমা দিয়ে ঘর তৈরি শুরু করেন। পুরসভা ধাপে-ধাপে বেশ কয়েক হাজার টাকা দিয়েছে। ছ’টি কিস্তিতে পুরো টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অভিযোগ, তিন-চারটি কিস্তির পর পুরসভা এক রকম হাত গুটিয়ে নিয়েছে।
কল্যাণীর ৫ নম্বর ওয়ার্ডের তালতলার বাসিন্দা নারায়ণ বিশ্বাস ও তাঁর স্ত্রী শেফালি ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি ঘর তৈরির কাগজপত্র পান। তাঁদের অভিযোগ, নিয়ম মেনে টাকা জমা দিয়েছিলেন। পুরসভা চারটি কিস্তিতে ৯০ হাজার টাকা দিয়েছে। আরও প্রায় ৬০ হাজার টাকা পাওনা। পুরসভার দরজায় বারবার ঘুরেও টাকা মেলেনি। চড়া সুদে মহাজনের থেকে ধার নিয়ে কাজ শেষ করেছেন। একই অবস্থা তালতলার বালা দম্পতিরও। ২০১৪ সালের তালিকায় নাম ছিল বিপুল ও কাজল বালার। তাঁরা এখনও ঘর বানানোর কয়েকটি কিস্তির টাকা পাননি। বিপুল জানান, তিনি আগে বিড়ি শ্রমিক ছিলেন। ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত হওয়ায় কাজ করতে পারেন না। কাজল বলেন, “৫০ হাজার টাকা ধার নিয়ে ছাদ দিয়েছি। কিন্তু প্লাস্টার, মেঝে, দরজা-জানলা করতে পারিনি। স্বামী কাজ করতে পারে না। এর মধ্যে আবার সুদের টাকা গুনছি।”
চার নম্বর ওয়ার্ডের এক মহিলা জানান, পুরসভা থেকে ঘর বাবদ তিনিও প্রায় ৭০ হাজার টাকা পাবেন। অসমাপ্ত ঘরে তিনি থাকেন না। ঘরের সামনের এক চিলতে জায়গায় বাঁশ-কাঠ-ত্রিপলের অস্থায়ী ঘরে ছেলেমেয়ে নিয়ে থাকেন। তাঁদের আক্ষেপ, এখন বকেয়া টাকা পেলেও সমস্যা পুরোপুরি মিটবে না। কেননা এর মধ্যে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় বকেয়া টাকা পেলেও ঘর তৈরি করা সম্ভব হবে না।
বিরোধীদের অভিযোগ, গরিবের ঘর তৈরির টাকায় পুরসভা লেকের সৌন্দর্যায়ন করেছে। বিপাকে গরিবেরা। প্রাক্তন পুরপ্রধান, সিপিএমের শান্তনু ঝা বলেন, “এক খাতের টাকা অন্য খাতে খরচ করলে তো এমনটাই হবে। এ নিয়ে স্মারকলিপিও দিয়েছি। কিন্তু ওরা গরিবের জন্য কিছুই করছে না।” পুরপ্রধান তৃণমুলের সুশীল তালুকদার জানান, ঘর তৈরির কিছু টাকা লেকের সংস্কারে ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু পরে সেই টাকা ঘর বানানোর তহবিলে জমাও করা হয়। আসলে ওই প্রকল্পের প্রায় ১৬ কোটি টাকা কেন্দ্র বকেয়া রেখেছে। তাই এই অবস্থা চলছে।
তবে এর শেষ কোথায়, তার কোনও কিনারা অবশ্য মেলেনি।