পদ্ম-পতনে বামে স্বস্তি, খুশি তৃণমূল

তিন রাজ্যের ভোটে কংগ্রেসের প্রবল উত্থানে খানিকটা হলেও মুষড়ে পড়েছেন নদিয়া জেলা বিজেপির নেতা-কর্মীরা। কিন্তু কংগ্রেসের এই প্রত্যাবর্তনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়দের বিরোধী জোটের ভবিষ্যৎ যতই ম্লান হোক, জেলা তৃণমূল নেতারা খুশি। 

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন 

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:১৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

তিন রাজ্যের ভোটে কংগ্রেসের প্রবল উত্থানে খানিকটা হলেও মুষড়ে পড়েছেন নদিয়া জেলা বিজেপির নেতা-কর্মীরা। কিন্তু কংগ্রেসের এই প্রত্যাবর্তনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়দের বিরোধী জোটের ভবিষ্যৎ যতই ম্লান হোক, জেলা তৃণমূল নেতারা খুশি।

Advertisement

গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভাল ফল করা ইস্তক বিজেপি যে ভাবে বিকল্প শক্তি হিসাবে উঠে আসার চেষ্টা করছে, মুখে স্বীকার না করলেও তা নিয়ে চিন্তিত তৃণমূল। লোকসভা ভোটে কৃষ্ণনগর আসনটি পেতে তারা যে মরিয়া হয়ে ঝাঁপাবে, তাতে সন্দেহ নেই। তার উপরে রথযাত্রা আপাতত স্থগিত হলেও তা নিয়ে যে চর্চা চলছে, বিজেপি তারও ফয়দা তোলার চেষ্টায় আছে। রাজস্থান, ছত্তীসগঢ় এবং মধ্যপ্রদেশে বিধানসভা ভোটের ফল যে সেই উন্মাদনায় এক ঘটি জল ঢেলে দিল তাতে সন্দেহ নেই। ফলে, তৃণমূল নেত্রী যতই কংগ্রেসের জয়ের কথা মুখে না আনুন, জেলা নেতাদের স্বস্তির যথেষ্ট কারণ আছে।

শুধু তৃণমূল নয়, আপাতত কিঞ্চিৎ স্বস্তিতে বামেরাও। কেননা তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই দেওয়ার জন্য সিপিএম থেকে একটা বড় অংশের ভোটার-কর্মী বিজেপির ছাতার তলায় আশ্রয় নিচ্ছিলেন। অনেকেই মনে করছিলেন, কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকার সুবাদে তাঁরা বিজেপির কাছ থেকে বেশি লাভবান হতে পারেন। মঙ্গলবারের এই ফল কিন্তু ঈঙ্গিত দিচ্ছে, আসন্ন লোকসভা ভোটে নরেন্দ্র মোদীর ক্ষমতায় ফেরা সহজ না-ও হতে পারে। ফলে তৃণমূল বা সিপিএম ছেড়ে বিজেপিতে চলে যাওয়ার প্রবণতা কমবে বলে আশা করছেন অনেকেই। সিপিএমের এক জেলা নেতার মতে, ‘‘অন্য রাজ্যের মানুষ বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করছেন। ফলে এ বার বিজেপির সঙ্গে গিয়ে সুদিনের খোয়াব দেখার আগে দু’বার ভাবতে হবে।’’

Advertisement

এ দিন দুপুর থেকেই জেলা কংগ্রেস দফতরে খুশির হাওয়া। এই জেলাকংগ্রেস কার্যত সাইনবোর্ড। জেলা কংগ্রেস সভাপতি অসীম সাহার আশা, ‘‘এই ফলাফল দেখে বিজেপি ও তৃণমূল ছেড়ে বহু ‘ঘরের ছেলে’ই ঘরে ফিরতে শুরু করবে।’’

এই আশা কতটা ফলবতী হবে, তা বোঝা শক্ত। কিন্তু তৃণমূল নেতারা চওড়া হাসছেন। তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের দাবি, “গোটা দেশের মানুষ বুঝে গিয়েছে, সার্বিক ভাবে বিজেপি ব্যর্থ। সর্বত্রই তাদের প্রতি মানুষের অনাস্থা প্রকাশ পাচ্ছে। নদিয়া কি তার ব্যতিক্রম নাকি?’’ তার পরেই তাঁর সংযোজন, ‘‘যদিও নদিয়ায় বিজেপি দলটিকে খুঁজে পাওয়া কঠিন।”

শুধু এ-বিজেপি দলের নেতারাই নন, রাজনীতি সচেতন অনেকেই মনে করছেন, এর প্রভাব পড়তে বাধ্য। কৃষ্ণনগর দ্বিজেন্দ্রলাল কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক পরীক্ষিত ঠাকুর মনে করছেন, “লোকসভা ভোটের ঠিক আগে এই ফল প্রমাণ করল, দেশের বৃহত্তম দলকে ঠেকানো সম্ভব। তার প্রভাব জনমানসে পড়তে বাধ্য।”

নিচুতলার বিজেপি কর্মীরা স্পষ্টতই হতাশ। যদিও দলের জেলা নেতারা তা প্রকাশ্যে স্বীকার করতে নারাজ। বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মহাদেব সরকারের দাবি, “নদিয়ায় কোনও প্রভাবই পড়বে না। তৃণমূলের দুর্নীতি দেখে জেলার মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন।”

উপরমহল কী নির্দেশ দেয়, এখন তারই প্রতীক্ষা পদ্ম শিবিরে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement