মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের মির্জাপুরের করিয়াল ও গরদ শাড়ি। নিজস্ব চিত্র।
বছরের শুরুতেই মির্জাপুরের তাঁত শিল্পীদের জন্য এল সুখবর। সেখানকার তৈরি গরদ ও কড়িয়াল শাড়ি জিআই (জিয়োগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন) তকমা পেল।
জিআই স্বীকৃতি নির্ভর করে তার প্রাচীনত্ব, সেই সংক্রান্ত প্রামাণ্য তথ্য, যাঁরা সেটি বানাচ্ছেন তাঁদের পূর্বসূরিরা প্রথম থেকে তা বানাতেন কি না সে সব বিশ্লেষণের পর। সেই নিরিখেই গরদ ও কড়িয়াল জিআই তকমা পেয়েছে। এই স্বীকৃতিতে খুশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইটে লিখেছেন, “সকল শিল্পীকে অভিনন্দন। তাঁদের জন্য আমি গর্বিত।”
মুর্শিদাবাদে মির্জাপুর মূলত গরদ সিল্কের জন্য খ্যাত। আগে গরদের শাড়ি দখল করত সীতাহরণ, জটায়ু বধ, শকুন্তলা। এখন পুরাণ সরিয়ে তাতে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। সাদা সিল্কের সুতোকে বিভিন্ন রঙে রাঙিয়ে তা দিয়েই তৈরি হচ্ছে গরদের রঙিন জাকার্ড শাড়ি। কোনওটা সিঙ্গল জাকার্ড, কোনওটা ডাবল। তার সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে থার্ড জাকার্ডের তাঁতের ছোঁয়া। একটায় পায়ের দিক, দ্বিতীয়টা বডি এবং তৃতীয়টা মিনা। এই ত্রিমুখী নকশার অভিনবত্বে তা নজরে ধরেছে আধুনিকাদেরও।
গোটা পরিবার তাঁত শিল্পের সঙ্গে বিশ্বজিত বাঁশোরের। তিনি বলেন, ‘‘কোরিয়াল গরদের মধ্যে একটি ক্লাসিক প্রোডাক্ট। কোরিয়াল শাড়ি তৈরির জন্য যে সময় লাগে বাস্তবে গরদের অন্য শাড়ি সেই সময়ে ২ থেকে ৩টি তৈরি করা যায়। সেই কারণেই তাঁতিরা কড়িয়াল শাড়ি তৈরির দিকে যায় না। এই শাড়ি তৈরি করতে হয় সম্পূর্ণরূপে হাতে। সেই শাড়ির চাহিদা নেই তা নয়। কিন্তু দাম বেশি, তুলনায় সময়ের কারণে মজুরি কম। তাই শুধু কোরিয়ালের উপর জিআই ট্যাগিংয়ে সেভাবে কোনও সুবিধে হবে না তাঁত শিল্পীদের। তবে সমস্ত গরদ যদি জিআই তকমা পেয়ে থাকে তবে মুর্শিদাবাদের গরদ যথেষ্ট লাভবান হবে ভবিষ্যৎ বাণিজ্যে।"
তাঁত শিল্পী তাপস গুঁচি বলেন, ‘‘কোরিয়াল শাড়ির শিল্পী বড় জোর ২ শতাংশ। মজুরি কম, সময় বেশি। তবে মুর্শিদাবাদে গরদ বলতে মির্জাপুরের শিল্পীদের বোঝায়। সকলেই প্রায় গরদ তৈরির সঙ্গে জড়িত। স্বীকৃতি পেলে প্রচার বাড়বে, শিল্পীদের কদর, সুনাম বাড়বে। স্বভাবতই গরদ শিল্পীরা লাভবান হবে। এর ফলে সরকারী ওয়েসাইট থেকে বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষজন জানতে পারবেন মুর্শিদাবাদে গরদের কারিগর কারা।”
জেলার প্রাক্তন সহ সভাধিপতি ঝর্না দাসের মতে, ‘‘মুর্শিদাবাদের গরদের যে তকমা পাওয়া দরকার, দেরিতে হলেও তা বর্তমান সরকার উপলব্ধি করেছেন।’’
মির্জাপুরে হাতে গোনা কোরিয়াল শিল্পীদের মধ্যে একজন কার্তিক বোধপুর। তাঁর বাড়িতেও একাধিক তাঁত রয়েছে। সবেতেই কোরিয়াল ও জাকার্ড। কার্তিকবাবু বলেন, ‘‘গরদের শাড়িতে হাতের কাজ যতটা ভাল ফুটিয়ে তোলা যায় অন্য শাড়িতে তা যায় না। কোরিয়ালে সাদা শরীরের দুই দিকে ৫ থেকে ৭ ইঞ্চির পাড়। সুন্দর দেখতে লাগে।’’