‘ব্যাগটা খোলো তো দেখি’

কিন্তু, বিধি বাম, শেষ রক্ষা হল না। শনিবার সন্ধ্যায় বড়ঞার করালিতলা মোড়ে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার একটি বাস থেকে অস্ত্র-সহ গ্রেফতার হল বছর পঁয়ত্রিশের এক অস্ত্র কারবারি।

Advertisement

সামসুদ্দিন বিশ্বাস ও কৌশিক সাহা

বহরমপুর ও কান্দি   শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৪২
Share:

দূরত্বটা মেরেকেটে ৩১০ কিলোমিটার। কিন্তু সাবধানের মার নেই! তাই, প্রায় ৬৫০ কিলোমিটার রাস্তা উজিয়ে ‘সামান’ যাচ্ছিল গন্তব্যে।

Advertisement

কিন্তু, বিধি বাম, শেষ রক্ষা হল না। শনিবার সন্ধ্যায় বড়ঞার করালিতলা মোড়ে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার একটি বাস থেকে অস্ত্র-সহ গ্রেফতার হল বছর পঁয়ত্রিশের এক অস্ত্র কারবারি। হুমায়ুন শেখ নামে ওই বেআইনি কারবারির বাড়ি আদতে মালদহের কালিয়াচকের কুরারিচাঁদপুরে। রবিবার তাকে কান্দি আদালতে তোলা হয়।

‘সামান’, অস্ত্র কারবারের সার্কিটে এ নামেই পরিচিত আগ্নেয়াস্ত্র। যা এত দিন আসত মুঙ্গের থেকে জামালপুর, ভাগলপুর হয়ে ফরাক্কার পথে। কিন্তু পুলিশের কাছে সে পথ চেনা হয়ে যাওয়ায় এ বার তা ঘুরপথে মুঙ্গের থেকে জামালপুর, ভাগলপুর, নলহাটি হয়ে মুর্শিদাবাদে প্রবেশ করানোর মতলব ছিল কারবারিদের।

Advertisement

পাকুড়, রামপুরহাট হয়ে ট্রেনপথে হাওড়া এবং সেখান থেকে বাসে কখনও বীরভূম কখনও বা বর্ধমানের সীমান্ত উজিয়ে তা পাচার হচ্ছিল মুর্শিদাবাদে। কিন্তু ‘সঠিক’ জায়গায় পৌঁছনোর আগে ধরা পড়ে হুমায়ুন।

জেলা পুলিশের দাবি, ধৃতের কাছ থেকে ৪টি পিস্তল, ১০ রাউন্ড গুলি, ৮টি ম্যাগজিন, ২০ অসম্পূর্ণ পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। সেগুলি একটি লাল পিঠব্যাগে ছিল। উদ্ধার হয়েছে একটি মোবাইল ফোনও। যার কল লিস্টে রয়েছে এমন কিছু নাম, যা দেখে চমকে উঠেছে পুলিশ।

অসম্পূর্ণ অস্ত্রগুলি কালিয়াচকে তৈরি করে ফের মালদহ মুর্শিদাবাদে দুষ্কৃতীদের হাতে পৌঁছে যেত। ধৃত কারবারি পুলিশকে জানিয়েছে, দু’লক্ষ টাকা বরাত পেয়ে অস্ত্রগুলি পাচার করছিল সে।

মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, ‘‘গত ৩০ জানুয়ারি মালদহ ও মুঙ্গের দুই অস্ত্র কারবারিকে গ্রেফতার করে হুমায়ুনের খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল। তার উপর আমাদের নজর ছিল। সেটা বুঝতে পেরে রুট বদল করে হাওড়া হয়ে ঘুরপথে মুর্শিদাবাদে ঢুকছিল সে।’’ পুলিশ হাওড়া স্টেশন থেকে মোবাইলের সূত্র ধরে তার পিছু নিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তাকে বড়ঞাতে গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মুঙ্গের থেকে জামালপুর, ভাগলপুর, ফরাক্কা হয়ে সরাসরি মুর্শিদাবাদ কিংবা মুঙ্গের, জামালপুর, ভাগলপুর নলহাটি হয়ে মুর্শিদাবাদ— এই রুটে অস্ত্র আসত। পুলিশি ধরপাকড় শুরু হওয়ার পরে রুট নয়, খোদ মুঙ্গেরকে তুলে আনা হয়েছিল মালদহ-মুর্শিদাবাদে। সেখানকার অস্ত্র কারবারে যুক্ত কর্মীদের এনে এখানকার ছোট ছোট কারখানায় অস্ত্র তৈরি হচ্ছিল। জেলা পুলিশি অভিযানে তাও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল মাস কয়েক আগে। এ বার তাই রুট বদলের ছক কষেছিল তারা।

পুলিশ সূত্রের খবর, গত ৩০ জানুয়ারি বহরমপুরের চুনাখালি নিমতলা থেকে দুই অস্ত্র কারবারিকে গ্রেফতার করে। তারা মুঙ্গেরের জুমরাতি শেখ ওরফে রশিদ ও মালদহের বৈষ্ণবনগরের তোফেল শেখ। পুলিশের দাবি, তাদের কাছ থেকে মালদহের কালিয়াচকের কুরারিচাঁদপুরের হুমায়ুন শেখের নাম জানতে পারে পুলিশ।

মুঙ্গের থেকে জামালপুর, ভাগলপুর, রামপুরহাট হয়ে হাওড়া স্টেশনে মুঙ্গেরের এক অস্ত্র কারবারি পৌঁছয়। তার পরে অস্ত্রগুলি ভরে ফেলে নিতান্তই সাদামাটা একটি ব্যাগে। হাওড়ার ৬ নম্বর গেট দিয়ে বেরিয়ে ধর্মতলায় পৌঁছয় সে। সেখান থেকে উমরপুরগামী একটি বাসে উঠে পড়ে হুমায়ুন। তক্কে তক্কে ছিল পুলিশ। বড়ঞায় বাস দাঁড়াতেই হুমায়ুনের কাঁধে টোকা দেন পুলিশকর্মী, ‘‘ব্যাগটা খোলো তো দেখি!’’ ঝোলা থেকে নিমেষে বেরিয়ে পড়ে ‘সামান’!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement