শিক্ষক নেই, ধুলো জমছে কম্পিউটরে

মুর্শিদাবাদের সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের আধিকারিক সৌমেন দত্ত বলেন, ‘‘এমনটা তো হওয়ার কথা নয়। চুক্তিভিত্তিক প্রশিক্ষকদের কম্পিউটর শেখানোর কথা। তাঁরা সপ্তাহে কত দিন ক্লাস নিচ্ছেন তা খতিয়ে দেখব।’’

Advertisement

মনিরুল শেখ ও সামসুদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৫৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

বছর দুই আগে রাজ্যের প্রায় ছ’শো হাই মাদ্রাসায় প্রায় ১০টি করে কম্পিউটার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রশিক্ষকের অভাবে বেশিরভাগ মাদ্রাসাতেই সেই কম্পিউটারের উপরে ধুলো জমছে। কেন? মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, যাঁদের কম্পিউটার শেখানোর কথা, তাঁদেরই দেখা নেই। সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের তরফে কয়েকটি মাদ্রাসায় কম্পিউটার শিক্ষণে অস্থায়ী প্রশিক্ষক নিয়োগ করা হয়। প্রয়োজনের তুলনায় সেই সংখ্যাটা নগণ্য। এখন তাঁদেরও দেখা মিলছে না বলেই অভিযোগ।

Advertisement

নদিয়ায় ২৭টি এবং মুর্শিদাবাদে ১০৫টি হাই মাদ্রাসা আছে। দফতরের তরফে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে কম্পিউটারগুলি দেওয়া হয়েছিল। দুই জেলার একাধিক হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, কম্পিউটরের জন্য নয়া পাঠক্রমও তৈরি করা হয়। ঠিক ছিল, সপ্তাহে দু’দিন প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে পড়ুয়াদের। কিন্তু কাজ যা হওয়ার তা খাতায়-কলমেই হয়েছে। বাস্তবে পড়ুয়ারা কিছুই শেখেনি।

চাপড়ার একটি হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক জানাচ্ছেন, তাঁদের মাদ্রাসায় কম্পিউটারের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য নিয়মিত কেউ আসেন না। সরকার নিযুক্ত একটি সংস্থার কর্মীদের কম্পিউটর শেখানোর কথা। কিন্তু তাঁরাও নিয়মিত আসেন না। ফলে কম্পিউটারগুলি পড়ে নষ্ট হচ্ছে। রানাঘাট সাব ডিভিশনাল ফকির মহম্মদ হাই মাদ্রাসার দশম শ্রেণির ছাত্র রাহুল মণ্ডলের আক্ষেপ, ‘‘মাদ্রাসায় কয়েকটি কম্পিউটার রয়েছে। কিন্তু আমাদের তা শেখানো হয় না। ইচ্ছে ছিল, কম্পিউটার শেখার। রুটিনেও কম্পিউটর ক্লাস ছিল। কিন্তু বাস্তবে কোনও ক্লাসই হয় না।’’ চাপড়ার বেলতলা হাই মাদ্রাসার ইংরেজি শিক্ষক আবুল হোসেন বিশ্বাস জানাচ্ছেন, এই সময় কম্পিউটর না শেখা মানে তো পিছিয়ে পড়া। অথচ স্কুলে কম্পিউটর রয়েছে, প্রশিক্ষক নেই। বিষয়টি মাদ্রাসা শিক্ষা অধিকর্তাকে জানানো হয়েছে।

Advertisement

ছবিটা কমবেশি একই রকম পড়শি মুর্শিদাবাদে। বহু মাদ্রাসায় নষ্ট হচ্ছে কম্পিউটার। ডোমকলের এক মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক জানাচ্ছেন, কালেভদ্রে জেলা সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের তরফে নিযুক্ত লোকজন এসে ক্লাস করান। কিন্তু মাসের বেশির ভাগ দিনই কোনও ক্লাস হয় না।

আবার এর উল্টো ছবিও রয়েছে। সেটাও কম উদ্বেগের নয়। সেখানে কম্পিউটার শেখানোর জন্য প্রশিক্ষক রয়েছেন। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় কম্পিউটর নেই। নদিয়ার চাপড়ার একটি হাই মাদ্রাসার শিক্ষক আব্দুর রহিম বলছেন, ‘‘মাধ্যমিক স্তরে প্রায় ১৩০০ পড়ুয়া। এক জন প্রশিক্ষকও রয়েছেন। অথচ কম্পিউটার সাকুল্যে আটটি। সব পড়ুয়া শেখার সুযোগই পায় না।’’ কেন এমন অবস্থা?

মুর্শিদাবাদের সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের আধিকারিক সৌমেন দত্ত বলেন, ‘‘এমনটা তো হওয়ার কথা নয়। চুক্তিভিত্তিক প্রশিক্ষকদের কম্পিউটর শেখানোর কথা। তাঁরা সপ্তাহে কত দিন ক্লাস নিচ্ছেন তা খতিয়ে দেখব।’’ আর রাজ্যের মাদ্রাসা বোর্ডের সচিব রেজাউল করিম বলছেন, ‘‘পড়ুয়াদের কথা ভেবেই কম্পিউটরের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেটা যাতে মসৃণ ভাবে চলে অবিলম্বে সে ব্যবস্থা করা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement