দুরাবস্থা ঘুচিয়ে ফরাক্কা ব্যারাজ প্রজেক্ট উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে ফের স্বমহিমায় ফিরিয়ে আনতে রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে একজোট হয়ে পথে নামল কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম ও বিজেপি। মঙ্গলবার ফরাক্কা ব্যারাজ প্রকল্প শহরের জেনারেল ম্যানেজারের অফিসের সামনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সেন্টারে চার দলের নেতারা মিলে এক বিক্ষোভ সভা করেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন কয়েকশো অভিভাবকও। প্রায় আড়াই ঘন্টা ধরে ওই বিক্ষোভ সভা চলে। হাজির ছিলেন ওই স্কুলের প্রাক্তন অধ্যক্ষ হরিশচন্দ্র রায়ও। সভার পাশাপাশি প্রাক্তন ওই অধ্যক্ষকে সভাপতি করে ২০জন অভিভাবককে নিয়ে স্কুল বাঁচাও কমিটিও গড়াও হয়।
এ দিনের ওই সভায় বিদ্যালয়ের দুরাবস্থার জন্য জেনারেল ম্যানেজারকে সরাসরি দায়ি করে বিজেপি নেতা ষষ্ঠীচরণ ঘোষ বলেন, ‘‘একটি নামী বিদ্যালয় এভাবে অচল হয়ে পড়বে তা কখনই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সব দল মিলে এ নিয়ে দরবার করব।’’ সিপিএম নেতা অরুণময় দাস বলেন, ‘‘৫০ বছরের প্রাচীন বিদ্যালয় থেকে রাজ্যে মাধ্যমিকে চতুর্থ স্থান দখল করেছিল এক ছাত্র। আজ সেটি দুর্দশাগ্রস্ত। তাই বিদ্যালয়ের উন্নয়নের দাবিতে সকলেই একজোট হয়েছি।’’ তৃণমূল নেতা সাহাজাদ হোসেনের কথায়, ‘‘বিদ্যালয়ের এই দুরবস্থার কথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়ে তার হস্তক্ষেপ চাইব। বিদ্যালয়ের স্বার্থেই তাই যৌথ আন্দোলনে সামিল সকলেই।’’ অন্য দিকে, সদ্য গঠিত ওই কমিটির সম্পাদক কংগ্রেসের অক্ষয় সরকার বলেন, ‘‘জেলারেল ম্যানেজার দিল্লি থেকে ফরাক্কায় ফিরলেই কমিটির নেতৃত্বে ৪৮ ঘণ্টা অবস্থান বিক্ষোভে বসবেন অভিভাবকেরা। উপস্থিত থাকবেন সব রাজনৈতিক দলের নেতারাও।’’
ফরাক্কায় ব্যারাজ তৈরি শুরুর সময় ১৯৬৫ সালে ফরাক্কায় ওই কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়টি চালু করে কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রক। পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদের নিয়ন্ত্রণে এনে বিদ্যালয়টির অনুমোদন দেয় রাজ্য সরকার। একসময়ে মুর্শিদাবাদ জেলার মধ্যে নামী বিদ্যালয় হিসেবে ঠাঁই করে নিয়েছিল সেটি। এমনকী এই বিদ্যালয় থেকে এক ছাত্র মাধ্যমিকে চতুর্থ স্থানও দখল করেছিল। কিন্তু যত দিন দিয়েছে বিদ্যালয়ের শ্রীবৃদ্ধি দূর অস্ত কমেছে পুড়ুয়া সংখ্যা। একসময়ে যে বিদ্যালয়ে ছাত্র সংখ্যা তিন হাজার ছুঁইছুঁই ছিল এখন কমে তা ১১০০তে দাঁড়িয়েছে। যে বিদ্যালয়ে ৬০ জনেরও বেশি শিক্ষক ১০টি শ্রেণিতে ৪০টিরও বেশি বিভাগে পড়াতেন সেই বিদ্যালয়ে শিক্ষকের সংখ্যা কমতে কমতে এখন তেরোতে ঠেকেছে। ফলে বিজ্ঞান বিভাগের সমস্ত গবেষণাগার প্রায় বন্ধ। জীববিদ্যার, অঙ্কের, বাংলার কোনও শিক্ষক নেই। রসায়নের শিক্ষক কয়েকদিন পর অবসর নেবেন। বাধ্য হয়ে এ বছর প্রথম শ্রেণিতে ছাত্র ভর্তি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যালয়ের বর্তমান অবস্থার কথা জানিয়ে বতর্মান অধ্যক্ষ মনোজকুমার পানি কেন্দ্রীয় জল সম্পদকে মন্ত্রককে চিঠি দিয়েছেন একাধিকবার। কিন্তু কোনও ফল হয়নি। রেডিওতে নরেন্দ্র মোদীর ‘মন কি বাত’ শুনে নিজেদের বিদ্যালয়ের দুরবস্থার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি চিঠি লিখেছিলেন এলাকার মহিলারা। সেই চিঠি পেয়েই তড়িঘড়ি ফরাক্কার জেনারেল ম্যানেজারের কাছে ফরাক্কা ব্যারাজ প্রজেক্ট উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ‘স্টাটাস’ রিপোর্ট চেয়ে পাঠায় প্রধানমন্ত্রীর দফতর। যাঁর উদ্যোগে ওই চিঠি লেখা হয়েছিল বিদ্যালয়েরই সেই অভিভাবিকা গীতিকা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘চোখের সামনে বিদ্যালয়টির উত্থান-সঙ্কট দেখেছি। রেডিও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানটি শুনে তখনই ঠিক করি বিদ্যালয়টির দুরবস্থার কথা জানিয়ে চিঠি লিখব তাঁকে। সেই মতো বিদ্যালয়ের ৭২ জন অভিভাবিকা মিলে চিঠি লিখি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ফরাক্কার এই বিদ্যালয়ের সঙ্গে আমরা জড়িয়ে রয়েছি তিন প্রজন্ম ধরে। আমার মা পড়াশুনো করেছেন এই বিদ্যালয়ে। আমি, ভাই,-বোন সকলেই এই বিদ্যালয়ের পড়ুয়া ছিলাম। এখন আমার ছেলেমেয়েও এই বিদ্যালয়ে পড়ে।’’
জেনারেল ম্যানেজার সৌমিত্রকুমার হালদার বলেন, ‘‘ফরাক্কা ব্যারাজ বিদ্যালয়ের পরিস্থিতির কথা জানিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। যা ব্যবস্থা নেওয়ার তারাই নেবে।’’ এ দিকে, এ দিনের বিক্ষোভ সভাকে ঘিরে নিরাপত্তার কারণে প্রচুর সংখ্যায় সিআইএসএফ জওয়ান মোতায়েন করা হয়। মোতায়েন ছিল মহিলা জওয়ানরাও। তবে জেনারেল ম্যানেজার এ দিনই দিল্লি চলে যাওয়ায় বিক্ষোভকারীরা তাঁর অফিসে কোনও দাবিপত্র পেশ করেননি।