মৃত শ্রমিক কর্মচারীদের পরিজনদের বাধায় বৃহস্পতিবার ব্যারাজের অতিথি নিবাসের হস্তান্তর আটকে গেল ফরাক্কায়।
এত দিন ব্যারাজের ভিআইপি অতিথি ভবনটি ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ নিজেরা রক্ষণাবেক্ষণ করতেন। কর্মী সঙ্কটের ফলে কয়েক’টি পরিষেবা চালু রাখতে সম্প্রতি ঠিকাদার নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ব্যারাজে। এরই প্রতিবাদে এ দিন অতিথি ভবনের সামনে হাজির হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন মৃত শ্রমিক কর্মচারী পরিবার বর্গ সমিতির শতাধিক সদস্য। ছিলেন মৃত কর্মীদের বিধবা স্ত্রী, কন্যারাও। সমিতির সম্পাদক রাজু দাসের অভিযোগ, ‘‘১৯৮৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ফরাক্কা ব্যারাজের অন্তত ৪৩০ জন কর্মী কর্মরত অবস্থায় মারা যাওয়ায় চাকরির তালিকায় রয়েছেন। কিন্তু বার বার দাবি জানিয়েও ওই সব পরিবারের কোনও পোষ্যকেই চাকরি দেওয়া হয়নি। বরং ব্যারাজের কর্মী সংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, নতুন কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে ব্যারাজে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে ঠিকাদারদের হাতে। তাঁরা নিয়োগ করছেন বহিরাগত অথবা তাঁদের নিজস্ব লোকদের। এর ফলে মৃত কর্মী পরিবারের সদস্যেরা সঙ্কটে পড়েছেন বলে সমিতির তরফে দাবি।
সমিতির দাবি, ঠিকাদারদের কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ হস্তক্ষেপ করুক। যাতে ব্যারাজে মৃত পরিবারগুলির পোষ্যদের একে একে নিয়োগ করেন ঠিকাদারেরা। এই দাবিতেই বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকেই সব পরিবারের লোকজন জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন অতিথি নিবাসের সামনে। ফলে এ দিন অনুষ্ঠান ভেস্তে যায়। ফরাক্কার জেনারেল ম্যানেজার সৌমিত্রকুমার হালদার অবশ্য স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘ব্যারাজে কর্মী সঙ্কট রয়েছে। ফলে ব্যারাজের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। কিন্তু নতুন নিয়োগের ব্যাপারে তার কিছুই করার নেই।’’
ফরাক্কা ব্যারাজের মৃত শ্রমিক কর্মচারী পরিবারের লোকজনের এই দাবি বহু দিনের। বহুবার বিক্ষোভ আন্দোলনেও কোনও ফল হয়নি। কিন্তু এ বারে ওই সব পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে তাদেরকে সবরকম ভাবে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন কংগ্রেস, সিপিএম ও তৃণমূল । ফরাক্কার বিধায়ক কংগ্রেসের মইনুল হক বলেন, ‘‘ওই সব পরিবারের দাবির প্রতি কংগ্রেসের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। ওই অসহায় পরিবারগুলির দিকে তাকিয়ে সে দাবি ব্যারাজ কর্তৃপক্ষের মেনে নেওয়া উচিত।’’ তাঁর দাবি, ‘‘আমি এ ব্যাপারে ফরাক্কার জেনারেল ম্যানেজারের সঙ্গে বুধবারই কথা বলেছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন বর্তমানে অতিথি নিবাস-সহ বিভিন্ন জায়গায় অস্থায়ী কর্মী হিসেবে যাঁরা কাজ করছেন তাঁদের কাজে বহাল রেখে অন্য কর্মীদের নিয়োগ করা হবে মৃত কর্মী পরিবারগুলি থেকে। তা না করলে আমি নিজে তাদের নিয়ে গিয়ে জেএমের সঙ্গে দেখা করব।’’
সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য আবুল হাসনাত খান বলেন, ‘‘ওই সব পরিবারগুলি চরম সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। এই এলাকায় তাদের কর্ম সংস্থানের বিকল্প কিছুই নেই। সিপিএম বরাবরই ওদের সঙ্গে রয়েছে।’’
তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সাহাজাদ হোসেন বলেন, ‘‘ফরাক্কা ব্যারাজে কোনও নিয়োগ হলে ব্যারাজের মৃত কর্মী পরিবারগুলি থেকেই নেওয়া উচিত। ওই সব কর্মীর মৃত্যু হয়েছে কর্মরত অবস্থায়। রাজ্য সরকারি কর্মচারিদের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার তা মেনেছেন। তাহলে কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রক তা মানবে না কেন। যতদিন যাচ্ছে কর্মী সঙ্কট তত বাড়ছে ফরাক্কায়। ফলে ব্যারাজের রক্ষণাবেক্ষণ ঠিক মতো হচ্ছে না। মাঝেমধ্যেই লক গেট ভাঙছে। ভাঙন প্রতিরোধের কাজ প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’’