নিজেদের বেআইনি বাসিন্দা বলে মনে হয়

জেলায় প্রশাসনিক সভা করতে‌ এসে রাজ্যের জমিতে থাকা ১৫টি উদ্বাস্তু কলোনিকে দ্রুত অনুমোদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেমন হাল কলোনিগুলির? কারা থাকেন সেখানে? কী বলছেন তাঁরা? খোঁজ নিচ্ছে আনন্দবাজার।১৯৬৮ সাল নাগাদ শান্তিপুর শহরের প্রান্তে গড়ে উঠেছিল সুত্রাগড়চর সুর্যসেন কলোনি। প্রায় ৮৫টির মতো উদ্বাস্তু পরিবার আছে এখানে।

Advertisement

সম্রাট চন্দ

শান্তিপুর শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:২০
Share:

—প্রতীকী ছবি।

বাপ-ঠাকুর্দারা ও পার বাংলা থেকে এসেছিলেন এ পারে, নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। আশ্রয় জুটেছিল, কিন্তু বসবাসের জায়গার অধিকার জোটেনি দীর্ঘ কয়েক দশক। এত দিনে বোধ হয় সেই অধিকার জুটতে চলেছে, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরে অনিশ্চয়তার মধ্যে আশার আলো দেখছেন তাঁদের উত্তরপুরুষেরা। শান্তিপুরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের সুত্রাগড় চরের বাসিন্দা সাগর মাহাতো যেমন বললেন, ‘‘দু-পুরুষ কেটে গিয়েছে উদ্বাস্তুপল্লিতে রয়েছি। কিন্তু জমির দলিল মেলেনি। নিজেদের কেমন যেন বেআইনি বসবাসকারী মনে হয়। মুখ্যমন্ত্রী যখন বলেছেন তখন হয়তো জমির দলিল পাব। এত দিনে বৈধ হবে আমাদের বাস।’’

Advertisement

১৯৬৮ সাল নাগাদ শান্তিপুর শহরের প্রান্তে গড়ে উঠেছিল সুত্রাগড়চর সুর্যসেন কলোনি। প্রায় ৮৫টির মতো উদ্বাস্তু পরিবার আছে এখানে। বেশিরভাগই কৃষিশ্রমিক। কয়েক প্রজন্ম থাকার পরেও জমির মালিকানা পাননি। শহরের এই প্রান্তিক এলাকায় পৌঁছায়নি অধিকাংশ সরকারি সুযোগ সুবিধা। এখনও তাঁদের ভরসা কাঁচা রাস্তা। আলো জ্বলে না রাস্তায়।

স্থানীয় বাসিন্দা তুলসি অধিকারী বলেন, “যখন এক বছর বয়স তখন বাবা মায়ের সাথে যশোর থেকে এ দেশে চলে আসি। তখন থেকেই এখানে‌ বাস। একাধিক বার জমির দলিলের জন্য আবেদন করেও ফল হয়নি। উন্নয়ন, সরকারি সুযোগ সুবিধা, জমির মালিকানা স্বত্ত— কিছুই নেই আমাদের।’’শান্তিপুরের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের শ্যামাপল্লি গড়ে উঠেছিল ৬০ এর দশকের শেষের দিকে। নোয়াখালির দাঙ্গার সময়েই বাবা মায়ের সাথে এ দেশে চলে আসা রমেশ দেবনাথেরও। জমির মালিকের স্বীকৃতি না-পেয়ে এখনও কার্যত ভূমিহীন তাঁরা। রয়ে গিয়েছে উদ্বাস্তু তকমা।

Advertisement

শান্তিপুরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের চৈতন্যপল্লি গড়ে উঠেছিল ১৯৬৯ সালে। বর্তমানে প্রায় ১০০-র মতো পরিবার এখানে বাস করে। জমির মালিকানা পাননি কেউই। এই কারণেই জলের সংযোগ, ঋণের সুবিধা, সরকারি আবাস প্রকল্পের সুবিধা— কিছুই পান না তাঁরা। স্থানীয় বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ হালদার বলেন, “প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে কুষ্ঠিয়া থেকে দর্শনা হয়ে গেদেতে আসি। সেখান থেকে রানাঘাট হয়ে শান্তিপুর স্টেশন। স্টেশন থেকে পায়ে হেঁটেই বাগআঁচড়ায় আত্মীয়ের বাড়ি। কিন্তু আজও হাপিত্যেশ করে বসে রয়েছি জমির মালিকানার জন্য।” স্থানীয় বাসিন্দা বিকাশ সান্যাল বলেন, “আমরা নব্বইয়ের দশক থেকেই উদ্বাস্তুদের জমির মালিকানা দেওয়ার জন্য আন্দোলন করে এসেছি। বহু বার প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছি। কিন্তু ফল হয়নি। এ বার যদি কিছু হয় সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement