West Bengal SSC Scam

পুলিশের চাকরি ছেড়ে যোগ দেন শিক্ষকতায়, কোর্টের রায়ে অন্ধকার দেখছেন ১০ বছরের চেষ্টায় সফল প্রদীপ

স্ত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আড়াই বছরের সন্তান এবং বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে চিন্তিত প্রদীপ মজুমদারের আফসোস, কেন যে পুলিশের চাকরিটা ছাড়তে গেলেন! পর ক্ষণেই বলছেন, হকের চাকরি ফিরে পাবেনই।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

রানাঘাট শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ২৩:১৭
Share:

শিক্ষকের চাকরি খুইয়ে আফসোস করছেন প্রাক্তন কনস্টেবল প্রদীপ মজুমদার। —নিজস্ব চিত্র।

পুলিশের চাকরি করতেন। কিন্তু লাঠির বদলে হাতে তুলে নিতে চেয়েছিলেন চক-ডাস্টার। ১০ বছরের চেষ্টায় এল সাফল্য। ২০১৬ সালে এসএসসি প্যানেলে নাম ওঠে প্রদীপ মজুমদারের। ২০১৮ সালে কনস্টেবলের চাকরি ছেড়ে যোগ দিয়েছিলেন ‘স্বপ্নের চাকরিতে’। কিন্তু, সোমবার আদালতের রায়ে চাকরি খোয়ালেন নদিয়ার ওই যুবক। তাঁর দাবি, কোনও শর্টকাট নয়, নিজের যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছিলেন। কিন্তু, ‘দুর্নীতির বলি’ হতে হল তাঁকেও। চাকরি খুইয়ে কার্যত চোখে অন্ধকার দেখছেন পরিবারের একমাত্র চাকুরে প্রদীপ।

Advertisement

নদিয়ার রানাঘাটের বাসিন্দা প্রদীপ জানান, প্রথম বার এসএসসি পরীক্ষায় সফল হননি। তবে দ্বিতীয় বারের প্রচেষ্টায় শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় পাশ করেন। পুলিশের চাকরি ছেড়ে বাড়ি থেকে একটু দূরে একটি স্কুলে শিক্ষকতার কাজে যোগ দেন। কিন্তু, সোমবার কলকাতা হাই কোর্টের রায়ের পর তাঁর আফসোস, কেন ছাড়তে গেলেন পুলিশের চাকরিটা! তা না হলে তো পরিবারের উপর এমন অনিশ্চয়তার মেঘ ঘনিয়ে আসত না।

প্রদীপ জানান, প্রায় ন’বছর পুলিশের চাকরি করেছেন। শিক্ষকের চাকরি পেয়ে যেতে সেই সরকারি চাকরি ছাড়ার কথা দু’বারও ভাবেননি। এখন জটিল অসুখে অস্ত্রোপচারের পর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন স্ত্রী। বৃদ্ধ বাবা-মা এবং আড়াই বছরের সন্তানকে নিয়ে প্রায় ২৪ ঘণ্টা বিনিদ্র রাত কেটেছে তাঁর। এখন কী করবেন? প্রদীপ জানাচ্ছেন, অসুস্থ স্ত্রীকে হাসপাতালে রেখে সকাল সকাল ছুটেছেন কলকাতার ধর্মতলায়। নিজেদের হকের চাকরি বুঝে নিতে ফের প্রস্তুতি নিচ্ছেন আইনি লড়াইয়ের।

Advertisement

চাকরি খুইয়ে অতীতের সংগ্রামের কথায় ফিরলেন প্রদীপ। তাঁর কথায়, ‘‘রাত জেগে পুলিশের ডিউটি করেছি। সকালবেলা বাসায় ফিরে বই নিয়ে বসেছি। পুলিশের কাজে ছুটিছাটার বড্ড অভাব। তার মধ্যে এসএসসির প্রস্তুতি নিয়েছি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সবই ঠিকঠাক চলছিল। হঠাৎ আদালতের ২৮২ পাতার রায়ে এক লহমায় জীবনটা ওলটপালট হয়ে গেল। বার বার আফসোস হচ্ছে আগের চাকরিটা ছাড়ার জন্য।’’ পর ক্ষণেই তাঁর প্রত্যয়ী মন্তব্য, ‘‘ন্যায্য চাকরি এক দিন না এক দিন তো ফিরে পাবই।’’

আদালতের রায়ে চাকরি খুইয়েছেন ২৫ হাজার ৭৫৩ জন শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মী। এ নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল অব্যাহত। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই রায়কে ‘একতরফা’ বলেছেন। জানিয়েছেন, রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যাবেন। প্রদীপ বলেন, ‘‘খুব গরিব ঘরের ছেলে আমি। অনেক কষ্ট করে বাবা-মা পড়াশোনা করিয়েছেন। অভাবের তাড়না, আর কিছু একটা করতেই হবে, এই খিদে থেকে পুলিশের চাকরিতে যোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু, স্বপ্ন তো ছিল শিক্ষক হওয়ার। অনেক কষ্ট করে স্বপ্নকে বাঁচিয়েছি। সংঘর্ষ করেছি। রাতদিন এক করে পড়াশোনা করেছি। বেতনের অসামঞ্জস্যের কথা না ভেবেই পুরনো চাকরি ছেড়েছি। ন্যূনতম দুর্নীতির যোগ আমার সঙ্গে নেই। তবুও অন্যদের সঙ্গে আমিও এখন ভুক্তভোগী!’’ প্রদীপ জানান, ২০১৬-র আগে ২০০৯ সালে এসএসসি দিয়ে ইন্টারভিউ পর্যন্ত দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেখান থেকেই বাদ চলে যান। আবার চেষ্টা শুরু করেন। সাফল্য আসে। ২০১৮ সালে রানাঘাটের একটি স্কুলে চাকরিতে যোগ দেন। ছ’বছর ধরে সেখানে শিক্ষকতা করছিলেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement