বিএসএফের সৌজন্যে মৃত দাদাকে শেষ বারের মতো দেখতে পান বোন। —নিজস্ব চিত্র।
কাঁটাতারের ও পারে সহোদরাকে পাত্রস্থ করেছিলেন দাদা। বেশ কিছু দিন ধরে সেই দাদা অসুস্থ ছিলেন। চেয়েছিলেন শেষ বারের মতো বোনের মুখ দেখতে। কিন্তু বাংলাদেশের উদ্ভুত পরিস্থিতির মধ্যে সেটা কী ভাবে সম্ভবপর হবে বুঝতে পারছিল না পরিবার। অনেক চেষ্টাচরিত্রের পরেও সম্ভব হয়নি। সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-র দ্বারস্থ হয়েছিল পরিবার। বিএসএফ যোগাযোগ করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-র সঙ্গে। দুই দেশের সমীন্তরক্ষী বাহিনীর তৎপরতায় দাদাকে দেখতে পেলেন বোন। তবে মৃত অবস্থায়! জ়িরো লাইনে ‘ভারতীয়’ দাদার দেহ শেষ বারের মতো স্পর্শ করেন ‘বাংলাদেশি’ বোন। বৃহস্পতিবার এমনই নাটকীয় দৃশ্যের সাক্ষী থাকল ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের মাটিয়ারী সীমা চৌকি এলাকা।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া মাটিয়ারী গ্রামটি পড়ে নদিয়া জেলায়। ওই গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন ৫২ বছরের শরিফুল মণ্ডল। দীর্ঘ দিন ধরে তিনি অসুস্থ এবং শয্যাশায়ী ছিলেন। হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন মৃত্যু আসন্ন। তাই বাংলাদেশের চুয়াডাঙায় থাকা বোন রুকসানা বিবিকে শেষ বারের মতো চোখের দেখা দেখতে চেয়েছিলেন। পরিবারের সদস্যেরা জানাচ্ছেন, চেষ্টাচরিত্র করেও সেই ইচ্ছা পূরণ করা সম্ভব হয়নি তাঁদের পক্ষে। শুক্রবার শরিফুল মারা যাওয়ার পর বিএসএফের কাছে যান পরিবারের সদস্যেরা। আবেদন জানান, দাদাকে যেন শেষ বারের মতো দেখতে পান রুকসানা। কাঁটাতারের ও পারের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা ভেবে সেটা সম্ভবপর হবে কি না, সন্ধিহান ছিল বিএসএফ। তবুও বিজিবি-র সঙ্গে যোগাযোগ করে বিএসএফের ৩২ নম্বর ব্যাটেলিয়নের জওয়ানেরা। দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পতাকা বৈঠকে চূড়ান্ত হয় ব্যবস্থা। জ়িরো লাইনে নিয়ে যাওয়া হয় শরিফুলের দেহ। ও দিক থেকে মৃত দাদাকে শেষ বারের জন্য দেখতে আসেন রুকসানা এবং তাঁর পরিবার। দাদার দেহ ছুঁয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বোন। আবেগঘন মুহূর্তের সাক্ষী থাকে দুই দেশের সীমান্তরক্ষা বাহিনী।
বিএসএফ সূত্রের খবর, শরিফুলের পরিবারের আবেদন ফেলতে পারেনি তারা। কূটনৈতিক জটিলতা ছিল। তবে বিজিবি-র কয়েক জন পদস্থ আধিকারিকের সঙ্গে আলোচনায় তা কাটানো গিয়েছে। তার পর বিএসএফেরই উদ্যোগে রিকশায় চাপিয়ে দেহ নিয়ে আনা হয়েছিল জ়িরো লাইনে। অন্য দিকে, বিজিবি-র তৎপরতায় জ়িরো লাইনে আসেন বোন। বিএসএফ দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি একে আর্য বলেন, ‘‘সীমান্তরক্ষার পাশাপাশি মানবিক মূল্যবোধ রক্ষা করাও তো আমাদের কর্তব্য। একটি পরিবারের জন্য এমন কাজ করা গিয়েছে, তার জন্য বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’’