আন্ত্রিক মোকাবিলায় মেডিক্যাল ক্যাম্প। রবিবার জলকর মথুরাপুরে। নিজস্ব চিত্র
বেড়েই চলেছে আন্ত্রিকে আক্রান্তের সংখ্যা। পরিস্থিতি সামাল দিতে গ্রামে একাধিক মেডিক্যাল ক্যাম্প বসানো হয়েছে। তার পরেও যে পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি হয়েছে, তেমনটা মনে করছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। বরং পাশের ব্লক চাপড়াতেও আন্ত্রিক ছড়াতে শুরু করায় উদ্বিগ্ন প্রশাসন। তবে স্বাস্থ্যকর্তাদের কেউ কেউ মনে করছেন, শুধু আন্ত্রিকের কারণে নয়, অনেকেই আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলেও স্বাস্থ্য দফতরের দাবি।
গত ২৬ অগস্ট থেকে কৃষ্ণনগর ১ ব্লকের জলকর-মথুরাপুর গ্রামে কয়েক জনের শরীরে আন্ত্রিকের উপসর্গ দেখা দিতে থাকে। তার মধ্যে শুভদীপ হালদার নামে বছর বারোর এক কিশোর জেলা সদর হাসপাতাল থেকে কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যায়। পরিবারের তরফে আন্ত্রিকে তার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করা হলেও স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, সেপ্টিসেমিয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে।
ওই কিশোরের মৃত্যুর পর দেখা যায়, গ্রামের আরও অনেকের তারই মতো আন্ত্রিকের উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। তাদের একে একে জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হতে থাকে। বিষয়টি জানার পর গ্রামে যান স্বাস্থ্যকর্মীরা। পুলিশ এসে পাইপ লাইনের মাধ্যমে জল সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। বিলি করা হয় ওআরএস। গ্রামবাসীদের জল ফুটিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও বিশেষ লাভ হয়নি।
শনিবার রাত পর্যন্ত জেলা হাসপাতালে ১১ জনকে ভর্তি করতে হয়েছিল। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে থাকে। একের পর এক বাড়ি থেকে অসুস্থ হওয়ার সংবাদ আসতে থাকে। শিশু থেকে বৃদ্ধ কেউ বাদ যায়নি। রবিবার বিকাল পর্যন্ত জেলা হাসপাতালের শক্তিনগর ও সদর ক্যাম্পাসে মোট ৪৫ জনকে ভর্তি করতে হয়েছে। চাপড়া গ্রামীণ হাসপাতালে আছেন দু’জন। তবে এ দিন বিকালের পর থেকে আর তেমন গুরুতর রোগীর সন্ধান মেলেনি বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের দাবি।
এ দিন জলকর-মথুরাপুর গ্রামে মেডিক্যাল ক্যাম্পে ছিলেন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক-সহ তিন জন চিকিৎসক। ৮০ জন গ্রামবাসী উপসর্গ নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। তার মধ্যে এক জনকে জেলা হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। তবে শনিবার বিকাল থেকে পাশেই চাপড়া ব্লকের মথুরাপুর গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে আন্ত্রিকের উপসর্গ দেখা দিতে শুরু করে। ওই গ্রাম থেকে মোট ১৩ জন আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। তাঁদের চাপড়া ও জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
কী কারণে ওই এলাকায় আন্ত্রিক ছড়াচ্ছে, তা অবশ্য পরিষ্কার নয়। স্বাস্থ্য দফতর জল ও আক্রান্তদের মলের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠালেও রাত পর্যন্ত তার রিপোর্ট আসেনি। নিশ্চিত ভাবে কিছু জানাতে পারছেন না জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের কর্তারাও। কৃষ্ণনগর ১ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক বিশ্বজিৎ মজুমদার বলেন, “পুরোপুরি নিশ্চিত না হলেও আমাদের ধারণা, পাইপলাইনের জল থেকেই সংক্রমণ ছড়িয়েছে। জলের ট্যাঙ্ক থেকে একটি পাইপ লাইন যে যে এলাকার ভিতর দিয়ে দিয়েছে সেই এলাকায় আন্ত্রিক দেখা গিয়েছে। আবার যারা পাইপ লাইনের জল না খেয়ে নিজের বাড়ির নলকূপের জল খান, তাঁদের কারও কিছু হয়নি। তবে রিপোর্ট হাতে পেলেই আসল কারণটা বোঝা যাবে।”
ভীমপুর থানার পুলিশের পক্ষ থেকে গ্রামে চারটি এক হাজার লিটার জলের ট্যাঙ্ক রাখা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার লিটার জল সরবরাহ করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পুলিশের পক্ষ থেকে জল সরবরাহ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
চাপড়া ব্লক প্রশাসনও তাদের এলাকায় মেডিক্যাল ক্যাম্প করেছে। তৈরি করা হয়েছে বিশেষ দল। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে সচেতন করছে, জল ফুটিয়ে খেতে বলছে। চাপড়ার বিডিও দীনেশ দে বলেন, “পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রয়োজনীয় সমস্ত পদক্ষেপই করা হচ্ছে।”
জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের আর্সেনিক ২ ডিভিশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়র কৌশিক পালের বক্তব্য, “আমাদের জল থেকে এমনটা হওয়ার কথা নয়। কারণ মাটি থেকে জল তোলার পর পরিশোধন করে তবেই ট্যাঙ্কে তোলা হয়। ক’দিন আগেই ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করা হয়েছে। পাইপ লাইনে ফুটো বা ফাটলের খবরও নেই।”
তা হলে রোগ ছড়াচ্ছে কেন?
কৌশিক বলেন, “আমরাও জলের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য নিজেদের ল্যাবরেটরিতে পাঠাব। রিপোর্ট এলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। আমরাও সেই মতো পদক্ষেপ করতে পারব।”