শনিবার শুরু উচ্চ মাধ্যমিক। চলছে বেঞ্চে রোল নম্বর সাঁটার কাজ। কৃষ্ণনগরের এক স্কুলে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
অতিমারির পর প্রথম উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা হতে চলেছে আজ শনিবার থেকে। উচ্চ মাধ্যমিকের ইতিহাসে এই প্রথম পরীক্ষা হচ্ছে হোম সেন্টারে। যা নিয়ে প্রথম থেকেই বিতর্ক রয়েছে। করোনা-পরবর্তী মাধ্যমিক যদি প্রথা মেনে অন্য স্কুলের কেন্দ্রে হতে পারে তা হলে উচ্চ মাধ্যমিক কেন হবে না, সেই প্রশ্ন উঠছে।
এ দিকে নিজেদের স্কুলে পরীক্ষা দিতে পারাকে পরীক্ষার্থীদের একাংশ বিরাট সুযোগ হিসাবে ধরে নিচ্ছে। চেনা ক্লাসঘরের পরিচিত আবহে স্কুলের স্যার-ম্যাডামেরা প্রয়োজনে একটু-আধটু ‘সাহায্য’ করবেন, এমন আশাও অনেকে রাখছে। তাই পড়ুয়াদের অনেকেই বলছে, “অত কিছু ভাবছি না। স্যারেরা আছেন যখন, পরীক্ষা ভালই হবে।”
এখানেই চাপ বাড়ছে শিক্ষকদের। অনেক অভিভাবকের মত, স্কুল বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন। অল্প সময়ের প্রস্তুতিতে ছাত্রছাত্রীরা এ বার পরীক্ষায় বসছে। মাঝে অনেকটা সময় ক্লাসে বসে পড়াশোনা ও পরীক্ষা দেওয়ার অভ্যাসই নষ্ট হয়ে গিয়েছে তাদের।এ সব কথা মাথায় রেখে স্কুলের একটু হায্য করা উচিৎ। কারণ, স্কুলের ছেলেমেয়েরা ভাল ফল করলে আখেরে তো স্কুলেরই সুনাম ছড়াবে।
যদিও পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে একগুচ্ছ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে উচ্চ মাধ্যমিক কাউন্সিল। ফলে সব দিক বজায় রেখে সুষ্ঠু ভাবে পরীক্ষা নেওয়া নিয়ে বেশ চাপে রয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। নবদ্বীপে উচ্চ মাধ্যমিকের সেন্টার সেক্রেটারি তথা নবদ্বীপ হিন্দুস্কুলের প্রধানশিক্ষক সুখেন্দু নাথ রায় বলেন, “যেহেতু পরীক্ষা এ বার নিজের-নিজের স্কুলে তাই ফলে পড়ুয়া এবং তাদের অভিভাবকদের প্রত্যাশা অনেক বেশি। সেটা সামাল দেওয়াটাই সব থেকে বড় কথা। কাউন্সিল কঠোর নির্দেশিকা জারি করেছেন। আশা করা যায় সব স্কুলই বিষয়টি মাথায় রাখবে।”
দে পাড়া বিষ্ণুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক অজিত ভট্টাচার্যের কথায়, “হোম সেন্টারে ছাত্রছাত্রীদের সুবিধা হল চেনা পরিবেশ। সেই সঙ্গে রয়েছে চেনা বিভিন্ন আবদার। এ জন্যই উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ একাধিক নির্দেশিকা জারি করেছে। আ্যডমিট কার্ড দেওয়ার সময়ই পরীক্ষার্থীদের পর্ষদের বিধিনিষেধগুলি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
শান্তিপুর মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক কিংশুক চক্রবর্তীও বলেন, “যেহেতু হোম সেন্টারে পরীক্ষা হচ্ছে তাই ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের থেকে সাহায্য চাইতে পারে। সেটাই বড় সমস্যা।”
প্রধানশিক্ষকদের অনেকের মত, অধিকাংশ স্কুলেই পাঠ্যক্রম শেষ হয়নি। পড়ুয়ারা অনেকেই ভেবেছিল যে, এ বারেও অনলাইনে পরীক্ষা হবে। কিন্তু তা না-হওয়ায় অনেকেই নিজের স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছ থেকে সাহায্য চাইতে পারে। অন্য সেন্টারে পরীক্ষা হলে মানসিক প্রস্তুতি থাকত যে, কোনও সাহায্য পাওয়া যাবে না। ছাত্রছাত্রীরা চেনা স্যার-ম্যামের থেকে সাহায্য চেয়ে না-পেলে ক্ষোভ ও অসন্তোষও সৃষ্টি হতে পারে। করিমপুর জগন্নাথ হাইস্কুলের শিক্ষক রজতকুমার সরকার বলেন, “কী ভাবে পরীক্ষা নেওয়া হবে, কারা গার্ড দেবেন, সবই কাউন্সিল ঠিক করে দিয়েছেন। সমস্যা হওয়ার কথা নয়।”
তবুও আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। বিভিন্ন বিদ্যালয়ের মধ্যে নজরদারি সাযুজ্য থাকবে কিনা, সেই প্রশ্নও উঠছে! কোনও স্কুল হয়তো ছাত্রছাত্রীদের সাহায্য করল না, আবার কোনও স্কুল করল। সে ক্ষেত্রে কী হবে? নদিয়ার ডিআই দিব্যেন্দু কুমার পাল বলেন, “প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রে শিক্ষকদের সঙ্গে স্পেশাল অবজার্ভার নিযুক্ত করা হয়েছে। তাঁরা এ ব্যাপারে লক্ষ্য রাখবেন। সংযম এবং শুভবুদ্ধির মাধ্যমে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে পরীক্ষাকে সফল করতে হবে।’’
উচ্চ-মাধ্যমিক নদিয়ায়
মোট পরীক্ষার্থী: ৮৮৫৭৪
ছাত্রী: ৪৮০২৪
ছাত্র: ৪০৫৫০
প্রধান পরীক্ষাকেন্দ্র: ৫২টি
উপ-পরীক্ষাকেন্দ্র: ৩২৬টি
মোট পরীক্ষাকেন্দ্র: ৩৭৮টি