মদ দোকানের সামনে গ্রামের মহিলাদের বিক্ষোভ। কোতোয়ালি থানার তেঘড়িপাড়ায়। নিজস্ব চিত্র।
আদালতের নির্দেশে বন্ধ থাকা মদ দোকান খুলতে গিয়ে গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হল পুলিশকে। এর আগেও ওই দোকান খুলতে গিয়ে বাধা পেয়ে ফিরতে হয়েছিল পুলিশকে। তবে এ বার কলকাতার হাই কোর্টের নির্দেশ পেয়ে পুলিশ দোকান খুলতে যায়। গ্রামবাসীরা বাধা দিলেও পুলিশ মালিককে দোকানে বসিয়ে দিয়ে ফেরে। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে যাতে কোনও অশান্তি না-হয় তার জন্য স্থানীয়দের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে বলে জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। গ্রামবাসীরাও পাল্টা জানিয়েছেন, দোকান খুললেও কোনও খরিদ্দারকে ঢুকতে দেওয়া হবে না।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর ডিসেম্বর মাসে কোতোয়ালি থানার তেঘরিয়াপাড়া এলাকায় ওই মদের দোকানের সামনে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় এলাকারই বাসিন্দা রাজু রাউত (৩৩) নামে এক যুবককে। মদ খেয়েই তাঁর মৃত্যু হয়েছে এই অভিযোগ এনে গ্রামবাসীদের একাংশ মদের দোকানে তালা ঝুলিয়ে দেন। তাঁদের অভিযোগ, মদের দোকানটি একেবারে গ্রামের ভেতরে হওয়ায় মহিলাদের রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করা অসম্ভব হয়ে পড়ছিল। মত্ত যুবকেরা পথচলতি মহিলাদের যৌন নিগ্রহও করে বলে অভিযোগ। সেই সঙ্গে মদের নেশার পিছনে টাকা খরচ করে নিঃস্ব হয়ে পড়ছিলেন বাড়ির পুরুষেরা। যে কারণে গ্রামবাসীদের একাংশ চাইছেন না যে, আবার ওই মদের দোকান খোলা হোক।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মদের দোকানের মালিক আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। আদালতের নির্দেশ পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে মালিক মদের দোকান খুলতে গেলে সে বারও গ্রামবাসীরা বাধা দিয়েছিলেন। দোকানে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে দোকানের মালিক শ্যামাপ্রসাদ সাহা ফের উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন। আদালত পুলিশকে দোকান খোলার নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশ পেয়ে এ দিন পুলিশ মালিককে নিয়ে দোকান খুলতে গেলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয়দের একাংশ। তাঁরা পুলিশকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। কোনও ভাবেই তাঁরা দোকান খুলে দেবেন না বলে জানিয়ে দেন।
পুলিশ গ্রামবাসীদের বুঝিয়ে দোকান খুলতে পারলেও বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন, আদালতের নির্দেশে তাঁরা দোকান খুলতে দিলেও কোনও খরিদ্দারকে দোকানে ঢুকতে দেবেন না। গ্রামবাসী নীতিন বিশ্বাস, প্রসেন সর্দারেরা বলেন, ‘‘দোকান খুললেও মদ বিক্রি করতে দেওয়া হবে না। খরিদ্দার আসতে দেব না। যেমন করেই হোক গ্রামের বর্তমান প্রজন্মকে আমরা রক্ষা করব।”
যদিও দোকানের মালিক শ্যামাপ্রসাদ সাহা বলেন, ‘‘আমাদের প্রায় ৭০ বছরের লাইসেন্স। কোনও দিন বেআইনি ভাবে ব্যবসা করিনি। তা হলে কেন বন্ধ করব? আদালত নির্দেশেই দোকান খোলা হল। আশা করি আগামী দিনে সব কিছু স্বাভাবিক হবে।’’