কল্যাণী ‘বি’ ব্লকে বিবেকানন্দ পার্কে ঝড়ে ভেঙে পড়েছে গাছ। কল্যাণীতে মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র amitmondal.ju@gmail.com
শেষ বিকেলে আধঘণ্টার ঝড়ে ফের লন্ডভন্ড হয়ে গেল কল্যাণী শহর। সোমবারের পরে মঙ্গলবারও। কয়েক জন আহত হয়ে ভর্তি হয়েছেন বলে জেএনএম কর্তৃপক্ষের দাবি। গাছ পড়েছে কৃষ্ণনগর, নবদ্বীপ নাকাশিপাড়াতেও। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে, তার ছিঁড়ে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ বিপর্যয় হয়েছে। হোগলবেড়িয়ার এক জনের ঝড়ে আম কুড়োতে গিয়ে জখম হয়ে মৃত্যু হয়েছে।
এ দিন হোগলবেড়িয়ায় ঝড়ে আম কুড়াতে গিয়ে জখম হয়ে মৃত্যু হল এক ব্যক্তির। মঙ্গলবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটে হোগলবেড়িয়ার জয়রামপুর গ্রামে। জানা গিয়েছে, বছর পঞ্চাশের শরিফুল মণ্ডন ঝড়-বৃষ্টির সময়ে আম কুড়াতে গিয়েছিলেন। এমন সময়ে গাছের একটি ডাল তাঁর মাথার উপরে এসে পড়ে।
গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হতে দেখে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁকে শক্তিনগর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। পরে রাত আটটা নাগাদ তাঁরমৃত্যু হয়।
এ দিন ঝড়ের তীব্রতা সোমবারের চেয়ে অনেক বেশি ছিল। একাধিক জায়গায় বড়-বড় গাছ ও গাছের ডাল ভেঙে পড়ে। একাধিক জায়গায় ডাল পড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙেছে। বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিনের ঝড়ে শহরের ১২টি বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়েছে। বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে শহরের অধিকাংশ এলাকা।
কোতোয়ালি থানার হরিশপুর এলাকায় কৃষ্ণনগর নবদ্বীপ ঘাট রাজ্য সড়কে চলন্ত গাড়ির উপর গাছ ভেঙে পড়ে। তবে হতাহতের কোনও খবর পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া, কৃষ্ণগঞ্জের মাজদিয়া এলাকায় বেশ কিছু গাছ ঝড়ে ভেঙে পড়েছে বলেও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। নবদ্বীপ এবং সংলগ্ন অঞ্চলে জোরালো ঝড়বৃষ্টি হয়। ঝড়ের কারণে দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎহীন হয়ে থাকে শহর। তবে কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর নেই।
বিকালে উত্তরে কালীগঞ্জ ও নাকাশিপাড়া-সহ জেলার বিভিন্ন জায়গায় ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়। তাতে আম, লিচু, ধান, তিল, ফুলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেক খেতে পাটের কোনও ডগা নেই। সব সমান হয়ে গিয়েছে। কুমড়ো গাছ দলা পাকিয়ে গিয়েছে। গোড়া থেকে গাছ উঠে গিয়েছে। নাকাশিপাড়া ব্লকে বীরপুর মসজিদের সামনে বিশাল গাছ পড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
কালীগঞ্জের চাষি মুকুল সেখ বলেন, "দমকা হাওয়ায় তিল চাষের ক্ষতি হয়েছে।" হাটগাছা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় জিয়ারুল হক সেখ লক্ষাধিক টাকা ঋণ নিয়ে মুরগির ব্যবসা শুরু করেছিলেন। ঝড়ের ঝাপটায় মুরগি খামারে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাঁর আফসোস, "ঋণ করে ব্যবসা শুরু করেছিলাম। এই ক্ষতির মাসুল গুণব কী ভাবে?” বহু গাছের আমও ঝরে গিয়েছে।
দক্ষিণে কল্যাণীর বুদ্ধপার্ক, রথতলা, ফার্ম মোড়-সহ একাধিক জায়গায় বড় বড় গাছ ভেঙে পড়েছে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ৬০টি বড় গাছ ভেঙেছে শহরে। কোথাও কোথাও গাছ ভেঙে পাঁচিল আর বাড়ির ফটকও পড়ে গিয়েছে। কল্যাণী সীমান্ত এলাকায় বেশ কয়েকটি বাড়ির টিনের চাল উড়ে গিয়েছে। কোথাও কোথাও বিদ্যুতের তারে টিন ঝুলতে দেখা গিয়েছে। হাইমাস্ট লাইটও খুলে ঝুলতে দেখা গিয়েছে। কল্যাণীর পুরপ্রধান নীলিমেশ রায়চৌধুরী বলেন, "পুরসভার পাঁচটি দল শহরের বিভিন্ন জায়গায় ভেঙে পড়া গাছ বা ডাল সরানোর কাজ শুরু করেছে।" বহু জায়গায় স্থানীয় বাসিন্দারাও ভেঙে পড়া গাছ সরানো শুরু করেছেন।