স্কুলের পাশেই ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে এক জনের। আতঙ্ক কাটাতে স্কুলে হাজির ব্লক স্বাস্থ অধিকর্তা। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।
ডেঙ্গিতে মৃত্যু হল এক কলেজ ছাত্রের। সোহেল রানা (১৯) নামে শমসেরগঞ্জের মধ্য চাচণ্ডা গ্রামের বাসিন্দা দিন সাতেক ধরে ভুগছিলেন জ্বরে। সাধারণ জ্বর ভেবে চিকিৎসা চলছিল তাঁর। কিন্তু সাত দিনেও জ্বর না ছাড়ায় এক বেসরকারি ল্যাবে রক্ত পরীক্ষা করতেই ধরা পড়ে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত তিনি।
এরপরই তাঁকে ভর্তি করা হয় মহেশাইল ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। তাঁর বাবার কথায়, ‘‘ডেঙ্গি হয়েছে জানা মাত্র তাকে মহেশাইল স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করি।ভর্তির পরে চিকিৎসায় মঙ্গলবার দুপুরে কিছুটা সুস্থও দেখায় ছেলেকে। বিকেল থেকে আবার অবস্থার অবনতি ঘটে। বমি করতে থাকে ছেলে।তারপর স্যালাইন ও কয়েকটি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। এক বোতল স্যালাইন টানার পরে ছেলে প্রচণ্ড কাঁপতে শুরু করে। তার হিমোগ্লোবিন ছিল অত্যন্ত কম। তারপর প্রায় শেষ অবস্থা।’’
ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে জঙ্গিপুরে রেফার করা হলেও ছেলেকে নিয়ে তাঁরা যান জঙ্গিপুরের এক বেসরকারি নার্সিংহোমে। সেখানেই আইসিইউতে ভর্তি করা হয় সোহেলকে।কিন্তু রাত ১০টা নাগাদ মৃত্যু হয় তাঁর।
ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে ১৯ বছরের এক কলেজ পড়ুয়ার মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় শোকের পাশাপাশি নেমেছে আতঙ্কও।
ডেঙ্গিতে সোহেল রানার মৃত্যুর খবর স্বীকার করে শমসেরগঞ্জের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক তারিফ হোসেন বলেন, “৫ অগস্ট তাঁর রক্ত পরীক্ষায় ‘এন এস ১’ পজিটিভ পাওয়া যায়। জ্বর হয়েছে জেনেও বাড়িতে রক্ত পরীক্ষা না করে রেখে দেওয়ার ফলে অনেকটাই সময় নষ্ট হয়েছে। তা না হলে এ ক্ষেত্রে মারা যাওয়ার কথা নয়।”
এলাকার তৃণমূল সদস্য বদরুল হক বলেন, “১০ থেকে ১২ দিন আগে এখানে কয়েক জনের ডেঙ্গি হয়েছে বলে রিপোর্ট পাই। মধ্য চাচণ্ডায় আরও ৬ জনের ডেঙ্গি ধরা পড়েছে। এলাকায় এক বার স্প্রে করা হয়েছে। আবার খবর দেওয়া হয়েছে স্প্রে টিমকে। মধ্য চাচণ্ডার এই এলাকা অত্যন্ত আতঙ্কিত। তাই এই এলাকাকে রেড এরিয়া ধরে নজর দিতে বলছি স্বাস্থ্য দফতরকে।”
ডেঙ্গিতে মৃত্যুর খবর পেয়েই এ দিন এলাকায় যান ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক। চাচণ্ড বিজে হাইস্কুল লাগোয়া এলাকায় এই মৃত্যু ঘটেছে।
তাই স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের ডেঙ্গি এড়াতে কী করা দরকার, তার পরামর্শ দেন ক্লাসে ক্লাসে ঘুরে। শমসেরগঞ্জে জল জমার সমস্যা অত্যন্ত প্রকট। ঘন বসতি। মশারি টাঙাবার বালাই কম।
ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, “জ্বর হলেই তৎক্ষণাৎ রক্ত পরীক্ষা করতে হবে। দেরি করা যাবে না। রক্ত পরীক্ষার জন্য কোথাও যাওয়ার দরকার নেই। স্থানীয় আশা কর্মীদের খবর দিলেই রক্ত পরীক্ষার যাবতীয় ব্যবস্থা মজুত রয়েছে। সবটাই বিনা পয়সায়। তাই রক্তপরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়া হয়েছে কি না। তারপর যদি সাধারণ জ্বর হয়ে থাকে তবে সেই মতো ওষুধ খাবেন। তাতে ভয় থাকবে না।”
গত কয় দিনে নাগাড়ে বৃষ্টিও হচ্ছে জেলা জুড়ে। প্রায় সর্বত্রই জল জমছে। শমসেরগঞ্জ ও ফরাক্কার কিছু ঘনবসতি পূর্ণ এলাকায় ডেঙ্গির সংক্রমণ নতুন কিছু নয়।
এত দিন স্বচ্ছ জলের এডিস ইজিপ্টাই মশার আক্রমণই ছিল ডেঙ্গির কারণ। কয়েক বছর আগে শমসেরগঞ্জে প্রচুর সংখ্যায় অ্যালবোপিকটাস মশার খোঁজ মিলেছিল।
শমসেরগঞ্জ এলাকায় শাসক দলের ৫ জন বিধায়ক, ১ জন সাংসদ রয়েছেন। কিন্তু ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়ার রোধে তাঁদের সে ভাবে কোনও উদ্যোগই নেই বলে দাবি।
মশারি টাঙিয়ে ঘুমোনোর জন্য সতর্কতাও সে ভাবে তৈরি হয়নি এলাকায়।
যদিও সাংসদ খলিলুর রহমান বলেন, “সমস্ত পঞ্চায়েত প্রধানদের বলা হয়েছে যুদ্ধকালীন ব্যবস্থায় সক্রিয় প্রতিরোধে নামতে। সচেতনতা বাড়াতে আরও বেশি করে প্রচারে উদ্যোগী হতে।’’