চিকিৎসায় গাফিলতি, কাজে ফাঁকি নিয়ে অভিযোগ বিস্তর। অনেক সময় চিকিৎসকদের মারধরের অভিযোগও মেলে। কিন্তু এতদিন অভিযোগ খতিয়ে দেখতে হাতেগরম প্রমাণ মিলত না। সমস্যার সমাধানে এ বার কল্যাণী জেএনএম মেডিক্যাল কলেজ বসছে হাসপাতাল ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে ৯৩টি সিসি ক্যামেরা বসবে। পরে সংখ্যাটা বাড়তেও পারে। পূর্ত দফতরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ক্যামেরা বসানোর জন্য। এই কাজে প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা খরচ ধরা হয়েছে। যা দেবে রাজ্য স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়।
জেএনএম মহকুমা হাসপাতাল থেকে মেডিক্যাল কলেজের তকমা পেয়েছে পাঁচ বছর হতে চলল। কিন্তু শুরু থেকে বিতর্কই সঙ্গী এই হাসপাতালের। অ্যাম্বুল্যান্স থেকে শুরু করে আয়া— সবেতেই সিন্ডিকেট। অভিযোগের তালিকায় রয়েছেন চিকিৎসক-নার্সদেরও। হাসাপাতল চত্বরে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান থাকলেও বাইরের দামি ওষুধ লেখাটা চিকিৎসকদের অভ্যেসে দাঁড়িয়েছিল। নার্সেরা নিজেদের কাজ আয়াদের দিয়ে করাতেন বলে অভিযোগ। আর সে সবের জন্য বাড়তি টাকা গুণতে হত রোগীকে।
তবে মাস ছয়েক হল অবস্থাটা খানিক বদলেছে। এখন এক অর্থেই বিনামূল্যে চিকিৎসা মিলছে। হাসাপাতালেই মিলছে ইন্ডোর রোগীদের ওষুধ। এমনকী, অস্ত্রোপচারের সামগ্রীও কিনে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পরিষেবা নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ এখনও রয়ে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, রাশ আলগা হলে দীর্ঘদিনের চেনা রোগ যে ফের ফিরে আসবে না, তেমন গ্যারান্টিই বা কোথায়? তাই এ বার ঘরে-বাইরে নজরদারি চালাতে সিসিক্যামেরার ব্যবস্থা।
সম্প্রতি রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। কল্যাণীর মহকুমা শাসকের নেতৃত্বে রোগী কল্যাণ সমিতির সাব কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাঁরা বিভিন্ন দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁরা যেন নিজের কর্তব্য সঠিক ভাবে পালন করেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। রোগী কল্যাণ সমিতিতে বিষয়টি উঠতেই সিসিক্যামেরার বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ঠিক হয়েছে হাসপাতালের সব ওয়ার্ডে, ইমারজেন্সি, আউটডোর, করিডোর, হাসপাতালের বাইরে, বিভিন্ন অফিসগুলিও সিসিক্যামেরা বসানো হবে। কল্যাণীর মহকুমা শাসক স্বপন কুণ্ডু জানান, ‘অভিযোগ এলে দু’পক্ষের বক্তব্য খতিয়ে দেখতে এই ব্যবস্থা।’’
সম্প্রতি মাস দেড়েক আগে হাসপাতালের কয়েকজন জুনিয়র ডাক্তারকে মারধর করা হয়। নিরাপত্তারক্ষীদের ডিউটি নিয়েও বিস্তর প্রশ্ন রয়েছে। দিন কয়েক আগে কয়েকজন সুপারভাইজারকে বৈঠকে তলব করা হয়েছিল। সেই সময় হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, কর্মীরা বলেন, এই সুপারভাইজারদের কখনও তাঁরা দেখেননি। অথচ, খাতায় কলমে তাঁদের নাম রয়েছে। মাসে মাসে বেতন পান তাঁরা। এসডিও জানিয়েছেন, এ বার থেকে তাঁদের যদি নিজের জায়গায় না দেখা যায়, তা হলে প্রথমে শো-কজ, প্রয়োজনে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়াদের হস্টেলেও বসছে ক্যামেরা।