অভিযুক্তের মিল সিল করছে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র
ফের প্রচুর পরিমাণে ভেজাল মশলা উদ্ধার হল। বুধবার বিকেলে ফরাক্কার জামতলা মোড়ের একটি মিল থেকে ওই ভেজাল মশলা উদ্ধার হয়।
গোপন সূত্রে খবর পেয়ে এদিন ওই মিলে হানা দিয়েছিল ফরাক্কা থানার পুলিশ। বিশাল একটি ঘরের মধ্যে তিনটি পেষাই মিল রাখা ছিল। ওই ঘরে সার দিয়ে রাখা ছিল ৩৩৫ বস্তা নকল হলুদের গুঁড়ো এবং কয়েক বস্তা নকল জিরে এবং ধনে। ওই মশলায় ভেজাল হিসেবে চালের তুষ, তেজপাতা ও কাঠের গুঁড়ো মেশানো হচ্ছিল বলে অভিযোগ। এ ছাড়া, ওই ঘর থেকে মিলেছে কয়েক বস্তা ধানের তুষ এবং তেজপাতার গুঁড়ো। মিলেছে রাসায়নিক রং। ওই রং ভেজাল হলুদে মেশানো হত বলে জানিয়েছে পুলিশ। সব মিলিয়ে উদ্ধার হয়েছে ৪০০ বস্তারও বেশি ভেজাল মশলা। তবে পুলিশ ভেজাল মশলা আটক করলেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। পলাতক মিল মালিক ওহিদুল শেখও।
গত ৩০ নভেম্বর ফরাক্কার ভবানীপুরের একটি মিল থেকে প্রায় ১৮ কুইন্ট্যাল ভেজাল গুঁড়ো মশলা উদ্ধার করেছিল পুলিশ। ওই ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাকে জেরা করেই ফরাক্কায় ভেজাল মশলার কারবারের রমরমার বিষয়টি জানতে পারে পুলিশ। তারা জানিয়েছে, জামতলার পেষাই মিলটি প্রায় দশ বছর ধরে চলছিল। ওহিদুলের বাড়ির পিছনে ওই মিল তৈরি করা হয়েছিল। পুলিশ জানায়, ওই মিল থেকে ভেজাল মশলা প্যাকেটজাত করে আশপাশের এলাকায় পাঠান হত। বস্তায় পুরে তা ছড়িয়ে পড়ত গোটা জেলায়, এমনকি ঝাড়খণ্ড, মালদহেও। পুলিশের সন্দেহ, ভেজাল-কাণ্ডে যুক্ত আরও কিছু লোক। গভীর রাতে ভেজাল মশলা তৈরির কাজ হত। স্থানীয় কিছু যুবককে মোটা টাকা দিয়ে ওই কাজ করাত ওহিদুল। টাকার লোভে তারা বেআইনি ব্যবসার কথা গোপন রেখেছিল এতদিন।
সূত্রের খবর, গত কয়েকদিন ধরেই পুলিশের নজর ছিল জামতলার ওই মিলের ওপর। ঘনবসতি এলাকায় রমরম করে চলছিল এই বেআইনি ব্যবসা। বুধবার রাতেই বহু ভেজাল মশলা ওই মিল থেকে পাঠানোর কথা ছিল। তা জানতে পেরে মিলে বিকেলে হানা দেয় পুলিশ। প্রায় ৪০০ বস্তা ভেজাল মশলা সেই জন্য বোঝাই করে রাখা ছিল মিলের মধ্যে। অভিযানের পর সেই মশলা থানায় নিয়ে যেতে পুলিশকে লরি ভাড়া করতে হয়। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে, বিভিন্ন মশলা বস্তায় করে কিনে আনা হত ধুলিয়ান বাজার থেকে। তবে এই একটি মিলই নয়। হলুদ-সহ ভেজালের কারবারে জড়িয়ে রয়েছে আশপাশের এলাকার বেশ কিছু মিল, এমনই সন্দেহ পুলিশের। সেগুলির ওপর নজর রাখা হচ্ছে।
ফরাক্কার আইসি উদয়শঙ্কর ঘোষ জানান, ভেজাল প্রতিরোধ আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে পলাতক মিল মালিক ওহিদুলের বিরুদ্ধে। তাকে ধরতে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চলছে। সিল করে দেওয়া হয়েছে তার মিলটি। যারা ওই ভেজাল মশলার মিলে কাজ করতে, তাদেরও ধরার চেষ্টা করছে পুলিশ।