Arrest

বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক! স্বামী খুনে ৩০ হাজারের সুপারি, সুতিতে গ্রেফতার প্রেমিক-সহ ৪

মঙ্গলবার রাতে মুর্শিদাবাদের সুতিতে তৃণমূল কর্মী প্রবীর দাসের মুরগির খামারে ঢুকে তাঁকে লক্ষ্য করে পর পর তিন রাউন্ড গুলি চালানো হয় বলে অভিযোগ। রক্তাক্ত অবস্থায় ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন প্রবীর।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

সুতি শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৩ ০১:৫৬
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

সুপারি কিলার ভাড়া করে স্বামীকে খুন করার অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলে‌ন স্ত্রী। খুনে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত থাকার অভিযোগে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁর প্রেমিককে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গ্রেফতার করা হয়েছে দুই সুপারি কিলারকেও। ধৃত তিন জনকে বুধবার আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাঁদের সাত দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। স্বামী খুনে অভিযুক্ত তৃণমূলের প্রাক্তন ওই পঞ্চায়েত সদস্যাকে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করানো হবে।

Advertisement

মঙ্গলবার রাতে মুর্শিদাবাদের সুতিতে তৃণমূল কর্মী প্রবীর দাসের মুরগির খামারে ঢুকে তাঁকে লক্ষ্য করে পর পর তিন রাউন্ড গুলি চালানো হয় বলে অভিযোগ। রক্তাক্ত অবস্থায় ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন প্রবীর। গুলির শব্দে ছুটে আসেন স্থানীয়েরা। ফার্মের কর্মীদের সহযোগিতায় তড়িঘড়ি তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সেখানে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা প্রবীরকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। মৃত ব্যক্তি প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য রাখি দাসের স্বামী বলে জানা গিয়েছে। ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশবাহিনী, শুরু হয় তদন্ত।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রবীরের খুনের ঘটনার তদন্তের শুরুতেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আসে তাদের হাতে। তদন্তকারীরা জানতে পারেন, ওই এলাকার বাসিন্দা সৌমেন দাসের সঙ্গে প্রবীরের স্ত্রী রাখির দীর্ঘ দিনের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে। প্রবীরের সংসার ছেড়ে রাখি বেশ কয়েক বার সৌমেনের সঙ্গে অন্যত্র চলেও যান বলে পুলিশ জানতে পারে। ‘পথের কাঁটা সরাতে’ই প্রবীরকে খুন করার সিদ্ধান্ত নেন সৌমেন। এমনটাই অনুমান পুলিশের। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে সুতি থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় সৌমেনকে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

Advertisement

ধৃত সৌমেনের দাবি, রাখির কথা মতোই প্রবীরকে খুনের পরিকল্পনা করতে ‘বাধ্য’ হন তিনি। সৌমেন ও রাখি স্থানীয় দুই সুপারি কিলার আজমাউর শেখ এবং সুদীপ দাসকে প্রবীরকে খুন করতে ৩০ হাজার টাকায় সুপারি দেন বলে পুলিশি জেরায় স্বীকার করেন সৌমেন। তিনি আরও জানান, খুনের জন্য ওই দু’জনকে অগ্রিম ১০ হাজার টাকাও দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহ করেন সৌমেন, এমনটাই পুলিশ সূত্রে খবর। বিভিন্ন অজুহাতে বেশি রাতে মুরগির খামারে প্রবীরকে থেকে যেতে বাধ্য করেন রাখি। সেই সুযোগে পরিকল্পনা মতো দুই সুপারি কিলার সেখানে ঢুকে খুব কাছ থেকে গুলি করেন প্রবীরকে। ঘটনাস্থলের কাছাকাছি উপস্থিত থেকে গোটা ঘটনার উপরে নজর রাখছিলেন সৌমেন। পরিকল্পনা ও তার অগ্রগতি সম্পর্কে প্রতি মুহূর্তে মোবাইলে কথা চলতে থাকে সৌমেন-রাখির। এমনটাই জানা গিয়েছে তদন্তকারীদের সূত্রে।

তদন্তকারীদের একাংশ জানিয়েছেন, প্রবীরের খুনের পর সন্দেহ এড়াতে এলাকা থেকে গা ঢাকা দেন সৌমেন। শোকে বিহ্বলতার অভিনয় করতে থাকেন রাখিও। ঘটনার পর, পুলিশের সন্দেহের প্রথম তালিকায় উঠে আসে সৌমেন ও রাখি। সৌমেনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই সমস্ত পরিকল্পনার কথা তিনি নিজেই স্বীকার করে নেন। তাঁর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় দুই সুপারি কিলারকেও। ধৃতদের আদালতে পেশ করে সাত দিনের পুলিশ্ হেফাজতের আবেদন জানানো হয়। বিচারক সেই আবেদন মঞ্জুর করেন।

বুধবার বিকেল নাগাদ গ্রেফতার করা হয় রাখিকে। রাতেই ধৃত চার জনকে সামনাসামনি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পরিকল্পনা আছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। প্রবীরকে খুন করে সৌমেনকে বিয়ে করাই ছিল রাখির উদ্দেশ্য ছিল, এমনটাই দাবি তদন্তকারীদের একাংশের। জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার সুপার আনন্দ রায় বলেন, “বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে প্রেমিকের সঙ্গে পরিকল্পিত ভাবে প্রবীরকে খুন করেন তাঁর স্ত্রী রাখি। এমনটাই প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে। তদন্তের অগ্রগতি হলে বিষয়টা আরও পরিষ্কার হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement