ভোট না সুপ্রিম কোর্ট, দ্বিধায় নবান্ন

রাজ্য সরকারের আপত্তি উড়িয়েই ১৬ জুনের মধ্যে সাত পুরসভার নির্বাচন সেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। আর তাতেই উভয় সঙ্কটে পড়েছেন নবান্নের কর্তারা। কী করে এই সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসা যায়, শনিবার সারা দিন ধরে তা হাতড়ে বেড়িয়েছেন সরকারের শীর্ষ কর্তারা। তবু কোনও সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি তাঁরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৫ ০৩:২১
Share:

রাজ্য সরকারের আপত্তি উড়িয়েই ১৬ জুনের মধ্যে সাত পুরসভার নির্বাচন সেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। আর তাতেই উভয় সঙ্কটে পড়েছেন নবান্নের কর্তারা। কী করে এই সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসা যায়, শনিবার সারা দিন ধরে তা হাতড়ে বেড়িয়েছেন সরকারের শীর্ষ কর্তারা। তবু কোনও সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি তাঁরা। নবান্নের এক কর্তা জানান, আজ, রবিবার আইনজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

Advertisement

সরকারের একটি অংশের বক্তব্য, হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করুক রাজ্য। সে ক্ষেত্রে সোমবারই মামলা করা যেতে পারে। সরকারের অন্য অংশ অবশ্য মনে করে, আদালতের নির্দেশ মেনে ১৬ জুনের মধ্যেই নির্বাচনের দিন ঘোষণা করা উচিত। তা না করে সুপ্রিম কোর্টে গেলে ফের মুখ পুড়তে পারে সরকারের। স্বাভাবিক ভাবেই এই নিয়ে দোটানার মধ্যে সরকারের কর্তারা। তবে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

নবান্নের একাধিক কর্তা এখনও মনে করেন, হাইকোর্ট তাঁদের যুক্তি মেনে নির্বাচন করার জন্য আরও কিছু সময় দিলে এই জটিলতা তৈরি হতো না। কেন তাঁরা এমন কথা বলছেন, তার ব্যাখ্যা দিয়ে এ দিন পুর দফতরের এক কর্তা জানান, আসানসোল পুর নিগমের সঙ্গে কুলটি, রানিগঞ্জ ও জামুড়িয়া পুরসভাকে অন্তর্ভুক্ত করতে গেলে এক মাস সময়সীমার যে বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হয়, তার মেয়াদ শেষ হচ্ছে সোমবার অর্থাৎ ১৮ মে। একই ভাবে বিধাননগর ও রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভাকে এক সঙ্গে জুড়ে এবং হাওড়া পুরনিগমের সঙ্গে বালি পুরসভার ওয়ার্ড জুড়ে যে দু’টি পুর নিগম তৈরি করার কথা জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে, তার মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৬ জুন। মেয়াদ শেষের পর সাধারণ ভাবে রাজ্যপালের সম্মতি পেতে সাত থেকে দশ দিনের বেশি সময় লাগার কথা নয়। সেই অনুমতি মেলার দু’চার দিনের মধ্যেই ভোটের দিন ঘোষণা করতে পারে রাজ্য সরকার।

Advertisement

ওই কর্তার বক্তব্য, ধরা যাক হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে ১৬ জুনের মধ্যে সাতটি পুরসভার নির্বাচন হল। সেই ভোটের প্রক্রিয়া শেষ হতে হতে জুন মাস শেষ হয়ে যাবে। এ বার রাজ্যপালের সম্মতির পর নতুন পুরনিগম গঠনের জন্য নির্বাচন করতে জুন মাসের শেষের দিকে সরকার দিন ঘোষণা করল। তখন সদ্য শেষ হওয়া নির্বাচনে জয়ী প্রার্থীদের আইনি অবস্থান কী দাঁড়াবে? রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, ‘‘এমন পরিস্থিতিতে পুরসভার জয়ী প্রার্থীরা তো শপথই নিতে পারবেন না! তখন অন্য ধরনের সঙ্কট হবে।’’

সরকারের এই যুক্তির পাল্টা হিসেবে আইনজ্ঞদের একাংশের প্রশ্ন, গত বছরের মাঝামাঝি রাজ্য মন্ত্রিসভা ওই পুরসভাগুলি সংযুক্তিকরণের সিদ্ধান্ত নেয়। তার প্রায় এক বছর পরে, গত ১৬ এপ্রিল সাতটি পুরসভার নির্বাচন করতে বলেছে হাইকোর্ট। তা হলে এই বছরের মধ্যে কেন সংযুক্তিকরণ হয়নি? ওই আইনজ্ঞরা মনে করছেন, সময়ে সাতটি পুরসভার নির্বাচন না করে রাজ্য সরকার তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করেনি। সেই কারণেই সরকারকে তার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করতে বলেছে হাইকোর্ট। যার অর্থ, পাঁচ বছর অন্তর নির্বাচন করার যে নিয়ম, তা যথাযথ ভাবে পালন করতে হবে। রাজ্য সুপ্রিম কোর্টে গেলেও এই প্রশ্নের কোনও উত্তর দিতে পারবে না বলেই মনে করেন সরকার-ঘনিষ্ঠ এক আইনজ্ঞ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement