Swasthya Sathi Scheme

Swasthya Sathi Scheme: বিমা সংস্থা নয়, স্বাস্থ্যসাথীর টাকা হাসপাতালকে সরাসরি মেটাবে রাজ্য সরকার

রাজ্য সরকার আর স্বাস্থ্যসাথীতে বিমা সংস্থার কিস্তির বিপুল টাকা গুনতে চাইছে না। প্রকল্প থেকে বিমা সংস্থাকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২২ ০৫:০৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

ক্রমাগত চুক্তি নবীকরণের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে কিস্তির অঙ্ক বাড়ানোর জন্য বিমা সংস্থাগুলি চাপ দিচ্ছে রাজ্য সরকারকে। কারণ হিসাবে বলা হচ্ছে, দুয়ারে সরকার কর্মসূচির সূত্রে বিমা সংস্থায় প্রতি মাসে বিপুল হারে ‘ক্লেম’-এর সংখ্যা বাড়ছে। তা ছাড়া বেসরকারি হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসার টাকা মেটাতেও তারা অনেক সময় নিচ্ছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার আর স্বাস্থ্যসাথীতে বিমা সংস্থার কিস্তির বিপুল টাকা গুনতে চাইছে না। ওই প্রকল্প থেকে বিমা সংস্থাকে পাকাপাকি ভাবে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে ‘ইনশিয়োরেন্স মোড’ আর থাকবে না। থাকবে শুধু ‘অ্যাশিয়োরেন্স মোড’। এই প্রকল্পে এ বার থেকে রোগীর চিকিৎসা বাবদ হাসপাতালের প্রাপ্য টাকা সরাসরি মিটিয়ে দেবে সরকারই। এত দিন এই টাকা মেটানোর ক্ষেত্রে অ্যাশিয়োরেন্স ও ইনশিয়োরেন্স— দু’টি পদ্ধতিই চালু ছিল।

স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যসাথীতে ইনশিয়োরেন্স মোড তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই প্রকল্পে কোনও বিমা সংস্থা আর থাকবে না। সরকার সরাসরি টাকা মেটাবে। তাতে বেসরকারি হাসপাতালের টাকা আর বেশি দিন ধরে বকেয়া থাকবে না। আমরা দ্রুত নতুন ব্যবস্থা চালু করতে চলেছি।’’

Advertisement

বেসরকারি হাসপাতালগুলি অবশ্য এই সরকারি সিদ্ধান্তে আদৌ চিন্তামুক্ত হতে পারছে না। ডিএ বা মহার্ঘভাতা, লক্ষ্মীর ভান্ডার, সরকারি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিনা পয়সার চিকিৎসা, কন্যাশ্রী, রূপশ্রীর মতো অজস্র প্রকল্পের জেরে টাকার টানাটানিতে সরকার এমনিতেই জেরবার। সরকারি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী সরবরাহকারীদের টাকা মাসের পর মাস বাকি থাকছে। ‘শ্যাডো ফান্ড’ বা ছদ্ম টাকা (হাতে টাকা না-দিয়ে লিখিত ভাবে জানানো যে, টাকা দেওয়া হল) দিয়ে কাজ চালাচ্ছে সরকার। স্বাস্থ্যসাথীর টাকা মেটানোর ক্ষেত্রেও এমন হলে তারা অচিরেই চরম আর্থিক সমস্যার মধ্যে পড়বে বলে হাসপাতালগুলির আশঙ্কা।

বেসরকারি হাসপাতাল তো পরের কথা, সরকারি হাসপাতালগুলিতেই স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে অ্যাশিয়োরেন্স মোডে টাকার জোগান ইতিমধ্যে বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। তার ফলে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের প্রচুর টাকা বকেয়া পড়ে গিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, সরকারি হাসপাতালেরই যদি এই অবস্থা হয়, বেসরকারি হাসপাতালের কী হাল হবে? একটি বেসরকারি হাসপাতালের এক কর্তা বলেন, ‘‘সরকার কোভিডের সময় ছ’মাসের জন্য আমাদের গ্রুপের একটি হাসপাতাল নিয়েছিল। সেখানে পরিকাঠামো ও যন্ত্রপাতির খরচ বাবদ সরকারের কাছে আমাদের পাওনা ১৫ কোটি টাকা। তার পরে কেটে গিয়েছে প্রায় দেড় বছর। এখনও সেই টাকা পাইনি। স্বাস্থ্যসাথীতেও যে এমনটাই হবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়?’’

কলকাতার বিভিন্ন কর্পোরেট হাসপাতালের কর্তারা জানাচ্ছেন, বিমা সংস্থার বদলে সরাসরি টাকা দিতে শুরু করার আগে সরকারের উচিত, স্বাস্থ্যসাথীতে চিকিৎসার ‘রেট’ পরিমার্জন করা। কারণ, এত কম টাকায় কর্পোরেট হাসপাতালে চিকিৎসা অসম্ভব। যে-হাসপাতালে অ্যাপেন্ডেক্টমির খরচ সাধারণ শয্যায় ৫০-৬০ হাজার টাকা, সেখানে স্বাস্থ্যসাথীতে দেওয়া হচ্ছে মোটে ১৫ হাজার। ল্যাপ-কলি অপারেশনে দেওয়া হচ্ছে মাত্র ১৯,২০০ টাকা। হিসটেক্টমিতে মাত্র ১৫ হাজার। মে়ডিসিনের আইসিইউয়ে রোজ মাত্র ৩৩০০ টাকা, মে়ডিসিনের জেনারেল বেডে দিনে ১৮০০ টাকা। পুরোপুরি অ্যাশিয়োরেন্স মোড চালু করার আগে এই সব রেট বাড়ানোর দাবি তুলছে বেসরকারি হাসপাতালগুলি।

স্বাস্থ্য দফতরের বক্তব্য, সরকার স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে সরাসরি চিকিৎসার খরচ মেটালে বেসরকারি হাসপাতাল তুলনায় দ্রুত টাকা পাবে। এবং রোগীকে অস্ত্রোপচারের জন্য ভর্তি করার আগে এত দিন বিমা সংস্থার অনুমোদনের জন্য যে-দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হত, সেটাও করতে হবে না। পাশাপাশি, অযথা কিস্তির অতিরিক্ত টাকা গুনতে হবে না সরকারকেও।

এখন ইনশিয়োরেন্স মোডে ৭০ লক্ষ পরিবারের স্বাস্থ্যসাথীর জন্য বছরে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার কিস্তি মেটাতে হয়। সেখানে অ্যাশিয়োরেন্স মোডে এক কোটি ৭০ লক্ষ পরিবারের জন্য বছরে সরকারের খরচ হয় প্রায় ১৮০০ কোটি টাকা।

ইনশিয়োরেন্স মোডে বিমা সংস্থা টাকা দিতে দেরি করছে বলেও বার বার অভিযোগ উঠছে। এই মুহূর্তে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে একটি কর্পোরেট হাসপাতাল গোষ্ঠীর তিনটি হাসপাতালে তিন মাস ধরে বকেয়া রয়েছে ১৯ কোটি টাকা। অন্য একটি হাসপাতালের তিন কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে তিন মাসেরও বেশি। একটি সংস্থার কলকাতা সংলগ্ন অঞ্চলে দু’টি হাসপাতালে ছ’মাস ধরে বকেয়া প্রায় ৫৮ লক্ষ টাকা। অন্য একটি কর্পোরেট হাসপাতালের প্রায় আড়াই কোটি টাকা পাওনা রয়েছে ছ’মাসের বেশি। স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, সরকার সরাসরি টাকা দিলে এই দেরি হবে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement