মহার্ঘ ভাতার (ডিএ) দাবিতে দিল্লি যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রবিবার হাওড়া স্টেশনে যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের সদস্যরা। নিজস্ব চিত্র।
মহার্ঘ ভাতার (ডিএ) দাবিতে দিল্লিতে গিয়ে যে সমস্ত সরকারি কর্মচারী ধর্না কর্মসূচিতে অংশ নেবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া নেওয়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছেন নবান্ন। আগামী ১০ এবং ১১ তারিখে দিল্লির যন্তর মন্তরে ধর্না দেবেন ৫০০ জন রাজ্য সরকারি কর্মচারী। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের নেতৃত্বে ওই সরকারি কর্মচারীদের একাংশ পৌঁছে গিয়েছে রাজধানীতে। রবিবার শিয়ালদহ স্টেশন থেকে রাজধানী এক্সপ্রেস ধরে আরও ৩০০ জন সরকারি কর্মচারী দিল্লি পাড়ি দিচ্ছেন। সোম এবং মঙ্গলবার দিল্লিতে ধর্না দেওয়ার পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু উপরাষ্ট্রপতি, জগদীপ ধনখড় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর নির্মলা সীতারামন ও কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের কাছে ডেপুটেশন দেবেন তাঁরা। রাজ্য সরকার মনে করছে, সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের রাজধানীতে গিয়ে ধর্না দেওয়ার কর্মসূচির নেপথ্যে ইন্ধন রয়েছে বিরোধীদের। তা ছাড়া বার বার ডিএ-র দাবিতে কখনও কর্মবিরতি, কখনও বা প্রশাসনিক ধর্মঘট, কখনও বা রাজ্যের বাইরে গিয়ে ধর্না দেওয়ার কর্মসূচির ফলে সরকারি পরিষেবা দিতে অসুবিধা হচ্ছে বলেই মনে করছে রাজ্য সরকার। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষপাতী নবান্নের একাংশ।
যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের দিল্লিগামী সদস্যদের বিরুদ্ধে যে রাজ্য সরকার কড়া পদক্ষেপ নিতে পারে, সে বিষয়ে আভাস পেয়েছেন সংগঠনের নেতৃত্ব। মঞ্চের আহ্বায়ক তাপস চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘আমরা জেনেছি, রাজ্য সরকার প্রায় ১০০ জন সংগ্রামী মঞ্চের সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। সে ক্ষেত্রে বদলির কথা ভাবা হচ্ছে বলে আমরা জেনেছি। আমরা তো আমাদের দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করছি। তা ছাড়া আদালত তো আমাদের সঙ্গে সরকার পক্ষের আলোচনায় বসার নির্দেশ দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকার পক্ষের তরফে এখনও কোনও সদুত্তর মেলেনি।’’ সরকারি কর্মচারীরা যখনই ডিএ-র দাবিতে কর্মবিরতি কিংবা প্রশাসনিক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে, তখনই পাল্টা কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে নবান্ন। এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হবে না বলে মনে করছে প্রশাসনের একাংশ। ডিএ-র দাবিতে গত ২১ এবং ২২ ফেব্রুয়ারি রাজ্য জুড়ে দু’দিনের কর্মবিরতি পালন করেছেন সরকারি কর্মীরা। ডিএ-র দাবিতে গত ১০ মার্চ প্রশাসনিক ধর্মঘট পালন করেছেন তাঁরা। দু’টি ক্ষেত্রেই নবান্ন বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই কর্মসূচির বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে।
ইতিমধ্যে ডিএ সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারি কর্মীদের সঙ্গে রাজ্য সরকারকে আলোচনায় বসার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। আগামী ১৭ এপ্রিল রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং অর্থসচিবের উপস্থিতিতে আলোচনায় বসবেন সরকারি কর্মচারী সংগঠনের তিন সদস্য। বৃহস্পতিবার হাই কোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, আগামী ১৭ এপ্রিল কর্মচারী সংগঠনের তিন সদস্যের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে রাজ্যকে। সেই আলোচনার আগেই রাজধানীতে গিয়ে ডিএ-র দাবিতে সরব হবে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ।
মঞ্চের এই কর্মসূচিতে পাল্টা কটাক্ষ করে তৃণমূল কর্মচারী ফেডারেশনের নেতা প্রতাপ নায়েক বলেন, ‘‘যাঁরা ডিএ-র দাবিতে দিল্লিতে ধর্না দিতে যাচ্ছেন, সেই কর্মচারীদের উদ্দেশে আমরা বলব, তাঁরা যেন রাজ্য সরকারের প্রাপ্যের বিষয়ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সরব হন। কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের এক লক্ষ ১৫ হাজার কোটি টাকা আটকে রেখেছে। নিজেদের দাবির সঙ্গে তাঁরা যেন রাজ্যের এই দাবিটিকেও রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের কাছে তুলে ধরেন।