ফাইল চিত্র।
স্বাভাবিক নিয়মে ২০১৯-২০ আর্থিক বছরের তুলনায় চলতি বছরে রাজস্ব বাড়ার কথা। কিন্তু করোনা, লকডাউন এবং থমকে যাওয়া অর্থনীতির কারণে সেটা প্রায় অসম্ভব বলে মনে করছেন নবান্নের কর্তারা। তবে লকডাউনের পরে বাজার খুলতেই রাজস্ব আদায় যে-ভাবে বাড়তে শুরু করেছে, তাতে আশার আলো দেখছেন তাঁরা। করোনা-পূর্ব পরিস্থিতিতে এখনও পৌঁছয়নি ঠিকই। তবে অর্থনীতিতে পশ্চিমবঙ্গের ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। রাজ্যের নিজস্ব কর সংগ্রহ, কেন্দ্রীয় করের প্রাপ্য অংশ এবং কেন্দ্রীয় অনুদান প্রাপ্তির নিরিখে গত পাঁচ মাসে রাজস্বের পরিমাণ গত অর্থবর্ষের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়েছে।
‘‘এপ্রিল ও মে— এই দু’মাসে রোজগার প্রায় তলানিতে ঠেকেছিল। তবে জুন থেকে আয় বাড়তে শুরু করেছে। ডিসেম্বর নাগাদ তা গত অর্থবর্ষের সমপরিমাণে পৌঁছে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২০-২১ আর্থিক বছরের শেষ তিন মাসে রাজস্ব বৃদ্ধির আভাস পাওয়া যাচ্ছে,’’ বলেন রাজ্যের অর্থ দফতরের এক কর্তা।
অর্থ দফতরের খবর, রাজস্ব বাড়লেও সামগ্রিক ভাবে আর্থিক সূচকগুলির অবস্থা গত বছরের তুলনায় এখনও বেশ খারাপ। এপ্রিল থেকে অগস্ট পর্যন্ত রাজস্ব-ঘাটতি এবং আর্থিক ঘাটতি সব হিসাবনিকাশ ছাড়িয়ে গিয়েছে। অর্থবর্ষে যে-পরিমাণ ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তার ৯২% নিয়ে নিতে হয়েছে পাঁচ মাসেই। ফলে আগামী সাত মাসেও ঘাটতি মেটাতে ঋণই ভরসা। তার মধ্যেই বাজারে কারবার শুরু হওয়ায় রাজস্ব বাড়ছে। একমাত্র আশার কথা এটাই।
রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি সত্ত্বেও ঘাটতি বাড়ছে কেন? অর্থকর্তারা জানাচ্ছেন, নতুন বেতন কমিশন চালু হওয়ার পরে এখন প্রতি মাসে বেতন-পেনশন খাতেই খরচ হচ্ছে ছ’হাজার কোটি টাকার বেশি। তার উপরে করোনা মোকাবিলার খরচ বেড়েছে। এ বার এপ্রিল-মে মাসে কার্যত কোনও রোজগারই হয়নি, অথচ খরচ করতে হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। সেই ধারা পরের মাসগুলিতেও চলছে। অর্থকর্তাদের বক্তব্য, জিএসটি ক্ষতিপূরণের টাকা যদি এ বার পাওয়া যায় এবং কেন্দ্রীয় অনুদানের প্রতিশ্রুত অর্থ দিল্লি মিটিয়ে দিলে রাজ্যের কোষাগারে চাপ কিছুটা কমবে। সে-ক্ষেত্রে গত অর্থবর্ষের চেয়ে রাজ্যের নিজস্ব কর সংগ্রহ উল্লেখযোগ্য ভাবে না-বাড়লেও যদি কোনও ক্রমে বছর শেষে একই পর্যায়ে পৌঁছয়, তা হলে অন্তত ঋণের ধাক্কা কিছুটা কমবে। নইলে বেহিসেবি ঋণ নিয়ে কর্মীদের বেতন, করোনা মোকাবিলার খরচ চালিয়ে যেতে হবে। তার উপরে বিনামূল্যে করোনা টিকা দেওয়ার চাপ সামলাতে হলে বা বিধানসভা ভোটের খরচ জোগাতে হলে রাজকোষ ফের বেসামাল হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।