আগামী জানুয়ারি থেকেই কিছুটা ডিএ রাজ্য সরকারি কর্মীদের হাতে পৌঁছতে পারে। প্রতীকী ছবি।
কেন্দ্রীয় সরকার তাদের কর্মীদের বছরে যে-ভাবে দু’বার ডিএ বা মহার্ঘ ভাতা দেয়, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের আমলে সেই নিয়ম মানা হচ্ছে না। সেই বিষয়ে বহু কাল ধরে মামলা চললেও ইতিমধ্যে একটি সম্ভাবনা উজ্জ্বল হচ্ছে। আসন্ন নতুন ইংরেজি বছরে ফের কিছুটা ডিএ দিতে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে রাজ্যের অর্থ দফতরে। ডিএ নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কর্মচারী সংগঠনগুলির মামলার আবহে এই সরকারি উদ্যোগ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকেরা।
নতুন যে-সম্ভাবনার কথা শোনা যাচ্ছে, তাতে আগামী জানুয়ারি থেকেই কিছুটা ডিএ রাজ্য সরকারি কর্মীদের হাতে পৌঁছতে পারে। রাজ্যে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ বলবৎ হয়েছে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে। সে-বছর রাজ্য সরকার অবশ্য কোনও ডিএ দেয়নি। ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি ৩% ডিএ দিয়েছে তারা। চলতি বছরে ডিএ-র কোনও কিস্তি ঘোষণা করা হয়নি। আধিকারিকদের বক্তব্য, আগের বারের মতো জানুয়ারিতে একই পরিমাণ ডিএ দিতে পারে রাজ্য। যদিও সরকারি ভাবে এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি কেউই।
আর্থিক বিশেষজ্ঞদের অনেকের ধারণা, জানুয়ারি থেকে কিছু পরিমাণ ডিএ দিলে তৃণমূল সরকার তাদের এত দিনকার অবস্থানই ধরে রাখার বার্তা দেবে। কারণ, টাকা না-থাকায় কেন্দ্রের নিয়মে বছরে দু’বার ডিএ দেওয়া রাজ্যের পক্ষে এখন কার্যত অসম্ভব। মামলা চালু থাকলেও রাজ্য ফের এই বার্তাই দিতে পারবে যে, আর্থিক কারণে তারা চালু পদ্ধতিতেই ডিএ দিতে আগ্রহী। অবশ্য বকেয়া ডিএ নিয়ে রাজ্য সরকারের অবস্থান কী হবে, তা পুরোপুরি নির্ভর করছে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের উপরে।
অর্থ দফতরের কর্তাদের অনেকেই জানাচ্ছেন, নতুন বেতন কমিশনের সুপারিশ চালু হওয়ার আগে এক কিস্তি ডিএ দিতে প্রতি মাসে রাজ্য সরকারের খরচ হত প্রায় ২৫ কোটি টাকা, বছরে ৩০০ কোটি। নতুন বেতন-কাঠামোয় এক শতাংশ ডিএ দিতে মাসে খরচ হবে প্রায় ৬৪ কোটি টাকা, বছরে সেটা হবে ৭৭১ কোটি।
রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল এবং কলকাতা হাই কোর্ট ডিএ মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকারকে। সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে রাজ্য। শীর্ষ আদালত সেই মামলা গ্রহণ করবে কি না, আগামী সোমবার তার শুনানি রয়েছে বলে মামলাকারী কর্মচারী সংগঠন সূত্রের খবর।
প্রশাসনিক কর্তাদের পর্যবেক্ষণ, কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়া বা বকেয়া মেটানোর সম্ভাবনা এখনই হয়তো নেই। কারণ, শীর্ষ আদালতে এর নিষ্পত্তি এখনও হয়নি। তাই এত দিনের নিজস্ব পদ্ধতিতেই ডিএ দেওয়ার পথে হাঁটতে পারে রাজ্য।
ডিএ-র পরিমাণ ১২৫% করে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ বলবৎ করা হয়েছে। কিন্তু নতুন বেতন-কাঠামোয় এখনও পর্যন্ত কর্মীরা ৩% ডিএ পাচ্ছেন। অথচ কেন্দ্র প্রতি বছর জানুয়ারি ও জুলাইয়ে ডিএ দিয়ে যাচ্ছে। তাতে কেন্দ্রের মতো বঙ্গের যে-সব কর্মচারী অন্যান্য রাজ্যে কর্মরত, তাঁরা পাচ্ছেন ৩৮% ডিএ। সেই দিক থেকে এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রের সঙ্গে বাংলার সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ-র ব্যবধান ৩৫%।