Maoist

ঢাঙিকুসুমে ঝর্ণার ধারে মাও-দর্শন সাজানো, বলল নবান্ন

জঙ্গলমহলে গত কয়েক মাসে পরপর যে ক’টি ঘটনা ঘটেছে, তা হালকা ভাবে দেখছে না প্রশাসন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:০৭
Share:

ঢাঙিকুসুমের বনপথে পর্যটকেরা। —ফাইল চিত্র।

খড়গপুরের চার যুবক বেলপাহাড়ির ঢাঙিকুসুম ঝর্ণা দেখতে গিয়ে মাওবাদীদের খপ্পরে পড়েছিলেন বলে যে দাবি করেছিলেন, তা ‘সাজানো’ বলে মঙ্গলবার নবান্নে জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে জঙ্গলমহলে গত কয়েক মাসে পরপর যে ক’টি ঘটনা ঘটেছে, তা হালকা ভাবে দেখছে না প্রশাসন।

Advertisement

এ দিন পুলিশ দিবসের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী জানান, পুলিশের ডিজি নিজে গিয়ে ঘুরে এসেছেন। তিনি তদন্ত রিপোর্ট জমা দেবেন। ওই সব কার্যকলাপের নেপথ্যে কারা, তা খুঁজে দেখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এখন যেটা ঘটেছে, সেটা সাজানো ঘটনা। কিন্তু আরও যা হয়েছে তা ডিজি-কে দেখতে বলেছি। এর নেপথ্যে কারা আমি জানতে চাই। কারা জঙ্গলমহলে যাতায়াত করছেন, তা-ও জানতে চাই।’’

৩ সেপ্টেম্বর খড়্গপুরের চার যুবক ঢাঙিকুসুম থেকে ফিরে মাওবাদীদের দেখেছেন বলে দাবি করেছিলেন। তাঁদের ফোনও কেড়ে নেওয়া হয়েছিল বলে পুলিশকে জানিয়েছিলেন তাঁরা। পরে পুলিশি জেরার মুখে পড়ে তাঁরা বলেন, নেশাগ্রস্ত থাকায় তাঁদের এক জনের মোবাইল ফোন ঝর্ণার জলে ভেসে গিয়েছিল। তখনই তারা মাওবাদী তত্ত্ব সাজিয়ে চার যুবকের ফোন হারিয়ে গিয়েছে বলে থানায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন। রাজ্য গোয়েন্দা বিভাগ নবান্নে জানিয়েছে, এখন জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের আনাগোনা না-থাকলেও ঝাড়খণ্ড সীমানায় স্কোয়াড আসছে। ধলভূমগড়, গালুডি, ঘাটশিলা এবং পটমদা এলাকায় মাঝে মাঝে মাওবাদীরা আসে। খবর এলেই ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

Advertisement

গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, গত মার্চ থেকে বেশ কয়েকটি ঘটনায় জঙ্গলমহলে ফের মাওবাদীদের নামে হুমকি চিঠি এবং পোস্টার পড়ছে। সেগুলি আসলে মাওবাদীরা করছে, না কি অন্য কেউ, তার তদন্ত শুরু হয়েছে। মার্চের গোড়ায় পচাপানির ব্যবসায়ী বিদ্যুৎ দাসের কাছে হুমকি চিঠি দিয়ে ৫০ হাজার টাকা চাওয়া হয়। সেই টাকা দিতে গিয়ে তিনি দেখেন, কেউ আসেনি। ফের ২৫ জুলাই মাওবাদী নেতা মদন মাহাতোর নাম করে ওই ব্যবসায়ী এবং আরও তিন জনের নামে হুমকি চিঠি আসে। ২৭ অগস্ট বিদ্যুৎ দাসের বাড়ি লক্ষ্য করে পটকা ফাটানো হয়। আতঙ্কে ঝাঁপ দিয়ে তাঁর স্ত্রীর পা ভাঙে। কিন্তু পুলিশ তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কোনও মাওবাদী যোগ প্রমাণ করতে পারেনি।

১৫ অগস্ট স্বাধীনতা দিবসের বিরোধিতা করে পোস্টার পড়ে। গত ৪ সেপ্টেম্বর সিন্দুরিয়ার কাছে হাদরা মোড়ে ২০টি হাতে লেখা পোস্টারে এক ঠিকাদারকে রাস্তা তৈরির কাজ বন্ধ করতে বলে হুমকি দেওয়া হয়। শাসক দল-ঘনিষ্ঠ ওই ঠিকাদার ধাড়সা থেকে জামবনি ৪০ কিমি রাস্তার ২৫ কিলোমিটারের কাজের বরাত পেয়েছেন বলে পুলিশ জেনেছে। পুলিশের সন্দেহ ই-টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর স্থানীয় ঠিকাদারেরা অনেক ক্ষেত্রে কাজ পাচ্ছেন না। ফলে পোস্টারের নেপথ্যে সেই সবও কারণ কি না, খুঁজে দেখছে পুলিশ।

তবে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর নিজস্ব সূত্রে জানতে পেরেছেন, বিরোধী দলের কোনও কোনও নেতা মাঝে মাঝে জঙ্গলমহলে গিয়ে ফের মাওবাদীদের সঙ্গে যোগসাজশ তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছেন। রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং গোয়েন্দাপ্রধানকে সেই সবও দেখতে বলেছেন তিনি। রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র জঙ্গলমহল ঘুরে এসে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিলেই ‘অ্যাকশন’ নেওয়া হবে বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement